মহারাষ্ট্রে বিধানভবনের বাইরে কংগ্রেস বিধায়কদের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।
বিধানভবনে ঢোকার মুখে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাওকে হেনস্থার অভিযোগে বুধবার কংগ্রেসের পাঁচ বিধায়ককে দু’বছরের জন্য বরখাস্ত করলেন স্পিকার হরিভাউ বাগডে। এঁরা হলেন, জয়কুমার গোরে, রাহুল বোঁদ্রে, আবদুল সাত্তার, অমর কালে এবং বীরেন্দ্র জগতাপ। অভিযোগ, রাজ্যপালকে শারীরিকভাবে ‘নির্যাতন’ করেছেন ওই পাঁচ বিধায়ক। রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রী একনাথ খাডসে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় রাজ্যপালের বাঁ হাত জখম হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই পাঁচ জন।
যদিও দিনের শুরুটা এইভাবে হয়নি। অটলবিহারী বাজপেয়ী ১৮ বছর আগে যা পারেননি, দেবেন্দ্র ফডণবীস তাই করে দেখিয়েছেন। ১৩-র গেরো থেকে মুক্তি পেলেন মহারাষ্ট্রের নবনির্বাচিত এই মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আস্থা ভোটে জিতে গেল বিজেপি। শিবসেনার বিরোধিতা সত্ত্বেও এ দিন বিধানসভায় ধ্বনিভোটে জয় এল ফডণবীসের ঝুলিতে। এনসিপি-র ‘নীরব’ সমর্থন নিয়েই আপাতত সরকার টিকিয়ে রাখলেন তিনি। এ দিন সকালেই জয়ের প্রথম ধাপ পেরিয়েছিল বিজেপি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্পিকার পদে জিতে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী হরিভাউ বাগডে। তার পর আস্থা ভোটেও জয় এল।
গত ৩১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন দেবেন্দ্র। কিন্তু, একক ভাবে সর্ববৃহত দল হিসেবে জনাদেশ পেলেও, তাঁর সরকার টিকিয়ে রাখতে ফডণবীসের প্রয়োজন ছিল আরও ২৩ জন বিধায়কের সমর্থন। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর এনসিপি সরকার গড়তে নিশর্ত সমর্থন জানিয়েছিল বিজেপিকে। রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসা শিবসেনার সঙ্গে ভোটের আগেই বিজেপি-র ২৫ বছরের জোট ভেঙে যায়। তবু নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিজেপি যে তাদের সমর্থন নিয়েই সরকার গড়বে সে বিষয়ে সেনা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বিজেপি তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে গেলেও, সরকার গঠনে কোন দলের সমর্থন নেবে তা নিয়ে নীরব ছিল। সেনার তরফে বিজেপিকে নানা ভাবে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়। শেষে রণে ভঙ্গ দিয়ে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে জানিয়ে দেন তাঁরা বিরোধী আসনেই বসবেন। এমনকী, এ দিন সকালে সেনা নেতা রামদাস কদম বলেন, “শিবসেনা বিরোধী আসনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আস্থা ভোটে আমরা বিজেপি-র বিরুদ্ধেই ভোট দেব।” রামদাসের দাবি, মঙ্গলবারের দলীয় বৈঠকে এমনটাই নির্দেশ দিয়েছেন উদ্ধব।
যদিও এ দিন সকালে মহারাষ্ট্র বিধানসভার স্পিকার হিসেবে সর্বসম্মত ভাবে নির্বাচিত হন বিজেপি-র হরিভাউ বাগডে। শিবসেনা এবং কংগ্রেস স্পিকার পদে তাদের প্রার্থী দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। শিবসেনা আগেই জানিয়েছিল, স্পিকার পদে তারা প্রার্থী দিচ্ছে। কিন্তু কী এমন হল যে, সেই প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেওয়া হল?
রামদাস জানান, শিবসেনা প্রধান উদ্ধবকে তাঁদের স্পিকার পদপ্রার্থীকে সমর্থন করতে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অনুরোধকে মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি রামদাস বলেন, “স্পিকার পদটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে রাখাই রেওয়াজ। সব দিক খতিয়ে দেখেই আমাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে হরিভাউকে সমর্থন করা হয়েছে।” এ দিন সকালে শিবসেনার পাশাপাশি কংগ্রেসও তাদের স্পিকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়। এনসিপি-র সমর্থন মিলবে না, এমন ইঙ্গিত পেয়েই কংগ্রেস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সূত্রের খবর। এ দিন মহারাষ্ট্র বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে একনাথ শিন্দের নামে সিলমোহর দিয়েছেন নবনির্বাচিত স্পিকার। আগেই ওই নেতার নাম বিধানসভার সচিবালয়ে জমা দিয়েছিল শিবসেনা।
বুধবার ছিল মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের ‘অগ্নিপরীক্ষা’। স্পিকার নির্বাচন তো বটেই, আস্থা ভোটের মাধ্যমে নিজের ১৩ দিনের সরকার টিকিয়ে রাখাও ছিল তাঁর কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রে একক সর্ববৃহৎ দল হিসেবে জনাদেশ পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু শপথগ্রহণের ১৩ দিনের মাথায় অটলবিহারীর সেই সরকার পড়ে যায় আস্থা ভোটে জিততে না পারায়। একই পরিস্থিতি দেখা দেয় ফডণবীসের ক্ষেত্রেও। ১৩ দিন আগেই তিনি শপথ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। কিন্তু ‘ম্যাজিক সংখ্যা’ না থাকায় বিধানসভায় আস্থা ভোটে সরকার টিকিয়ে রাখার দায় ছিল তাঁর। সেই দায় থেকেই এ দিন মুক্ত হলেন তিনি। ইতিমধ্যেই শিবসেনার সঙ্গে ‘বিরোধ’ চরমে ওঠে। তবে বিজেপি-র পাশে যে এনসিপি আছে, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়েও দিচ্ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেনার বিভিন্ন ‘চাপ’-এর প্রেক্ষিতে পুরোপুরি নীরব ছিলেন তাঁরা। এ দিন বিধানসভায় সেই ‘নীরবতা’ই জয় এনে দিন আস্থা ভোটে। তবে এ বার ‘নীরব’ থাকলেন এনসিপি-র বিধায়কেরা। ধ্বনিভোটে তাঁরা ‘নীরব’ থেকে জিতিয়ে দিলেন ফডণবীসকে। সেনার বিরোধিতা সে ক্ষেত্রে কোনও কাজে এল না। ওয়েলে নেমে তারা বিক্ষোভ দেখালেও শেষ হাসি কিন্তু লেগে রইল ফডণবীসের মুখে। কারণ, ১৩-র গেরো থেকে মুক্তি মিলেছে যে!