উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে আচার্যের সঙ্গে দেখা করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আট সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। রাজ্যপাল তথা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে প্রায় সওয়া এক ঘণ্টার সেই বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলটি পৌঁছে যায় মেয়ো রোডে। সেখানে তখনও অবস্থান কর্মসূচিতে বসে ছিলেন তাঁদের সতীর্থেরা। যাঁরা এ দিন বিকেলেই ঘোষণা করেছিলেন, উপাচার্য ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান বিক্ষোভ চলবে। মেয়ো রোডে পৌঁছে ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা জানান, রাজ্যপালের নৈতিক সমর্থন পেয়ে তাঁরা এ দিনের অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে আসছেন। তবে আন্দোলন থেকে কোনও ভাবেই সরছেন না বলে ওই প্রতিনিধি দলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের পর ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা জানিয়েছেন, রাজ্যপাল তাঁদের প্রতিটি কথা খুঁটিয়ে শুনেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টা দেখবেন। এই ঘটনায় যদি কেউ বা কারা অপরাধী হন, তবে তাঁদের উপযুক্ত শাস্তির কথাও বলেছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে আচার্য ছাত্রছাত্রীদের আবেদন জানিয়েছেন। এমনটাই দাবি ওই প্রতিনিধি দলের।
এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ নন্দনের সামনে থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বেরোয় রাজভবনের উদ্দেশে। অঝোর বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাকভেজা সেই মিছিলে পা মেলান হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী। রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরাও এ দিন যাদবপুরের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের (যাঁদের অনেকেই আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী) পাশে হেঁটেছেন। এমনকী, রাজনীতির অনুপ্রবেশ নেই যে সমস্ত কলেজে, সেখানকার ছাত্রছাত্রীরাও এ দিনের মিছিলে সরব হয়েছেন। এসএফআই বা সিপি-র মতো প্রতিষ্ঠিত ছাত্র সংগঠনগুলির নেতানেত্রীরা সাংগঠনিক ব্যানার ছাড়াই রাজনৈতিক রংবিহীন এই মিছিলে অংশ নেন। অধিকাংশের কাছেই ছাতা নেই, নেই রেনকোট। তবুও গলা ফাটিয়ে, হাত উঁচিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে শহরের পথ। স্বতঃস্ফূর্ত সেই চলমান প্রতিবাদের একটাই দাবি, উপাচার্যের পদত্যাগ। কিন্তু মেয়ো রোডে পৌঁছনোমাত্র পুলিশি ব্যারিকেড তাঁদের আটকে দেয়। বৃষ্টির মধ্যে সেখানেই বসে পড়ে গোটা মিছিল। জানানো হয়, উপাচার্য অভিজিত্ চক্রবর্তী ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান চলতেই থাকবে। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পর ছাত্রছাত্রীদের তরফে অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। তবে সোমবার ফের তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জমায়েত হবেন।
ছাত্র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করার আগে এ দিন বিকেলে গোলপার্কে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যাদবপুর প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেছিলেন, “আপনারা ভালই জানেন, ওখানে কী হচ্ছে, কী হচ্ছে না। দায়িত্ব কার, কারাই বা ভুল পদক্ষেপ করল।”
উপাচার্যের ইস্তফার যে দাবি ছাত্রছাত্রীরা করেছেন, সে প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, “যত দূর জানি সার্চ কমিটির দ্বারা সর্বসম্মতিক্রমে এক নম্বরে তাঁর নাম রয়েছে। তাঁকে সরানোর দাবি করলেই তো আর সরানো যায় না।” শিক্ষামন্ত্রী যখন এ কথা বলছেন তখন তাঁর দলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা বলেন, “আগামী সোমবার এই মিছিলের পাল্টা মিছিল আমরা বের করব। সেখানে সারা রাজ্যের সমস্ত কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং অশিক্ষককর্মীরা অংশ নেবেন।” তবে ওই দিনের মিছিল কোথা থেকে শুরু হবে সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন শঙ্কুবাবু।