মুখ্যমন্ত্রীকে জেরার দাবিতে কংগ্রেসের মিছিল। সোমবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
সারদা-কাণ্ডে শাসক দলকে বিঁধতে এ বার বামেদের রাস্তাতেই হাঁটল কংগ্রেস। সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে সামনে বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি জেরার দাবি তুলল তারা। সোমবার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে প্রদেশ কংগ্রেস। মিছিলে মমতাকে সিবিআই জেরার দাবি তোলা হয়।
এ দিন দুপুরে মিছিলে হাজির ছিলেন অমিতাভ চক্রবর্তী, দেবব্রত বসু, সন্তোষ পাঠক, প্রকাশ উপাধ্যায়-সহ প্রদেশ কংগ্রেসের বহু নেতা-কর্মী। সারদা-কাণ্ডে গত শুক্রবার পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতারির পরেই সুর চড়িয়েছিল বামেরা। শনিবার মহানগরের রাস্তায় সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে বামেদের মিছিলের প্রধান দাবিও ছিল একই— মমতাকে সিবিআই জেরার মুখোমুখি হতে হবে। সে দিন কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও মিছিলে সামিল হন বাম নেতা-কর্মীরা। এ বার সারদা তথা মদন-কাণ্ডের পরে এর রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে রাস্তায় পা বাড়াল কংগ্রেসও। বস্তুত, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানেরই করা একটি মামলার জেরেই সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে সারদা নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। সেই তদন্তে একের পর এক তৃণমূলের নেতা-সাংসদ অভিযুক্ত হয়ে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় রাজ্যে ক্রমশই কোণঠাসা হয়েছে শাসক তৃণমূল। তা সত্ত্বেও এর রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারেনি প্রদেশ কংগ্রেস। সে উদ্দেশ্যেই মমতা তথা তৃণমূলকে সরাসরি আক্রমণ করে এই প্রথম রাস্তায় নামল কংগ্রেস।
এ দিন মমতার সিবিআই জেরার দাবির কারণও ব্যাখ্যা করেন কংগ্রেসে নেতারা। প্রথমত, সারদার সঙ্গে যোগাযোগের কথা বার বার অস্বীকার করলেও গত সেপ্টেম্বরে তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া জেলবন্দি সাংসদ কুণাল ঘোষ একটি চিঠিতে অভিযোগ করেন, ২০১২-র ১ মার্চ রাত ১২টা নাগাদ কালিম্পঙের ডেলোতে এক বাংলোয় সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন মমতা। দ্বিতীয়ত, মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কার্যত নিয়মের তোয়াক্কা না করেই প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাহীন সারদার পর্যটন সংস্থাকে ‘প্যানেল’ভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে রেলের পর্যটন সংস্থা আইআরসিটিসি-র বিরুদ্ধে। মমতা ঘনিষ্ঠ আমলার চাপেই রেলের পর্যটন সংক্রান্ত প্যাকেজ বিক্রির কাজে সারদার সংস্থাকে নিয়োগে আইআরসিটিসি বাধ্য হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তৃতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি চড়া দামে কে বা কেন কিনল, সে বিষয়েও প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।
ডেলোর বৈঠক ও মমতার আঁকা ছবি বিক্রি নিয়ে প্রথম বার সরব হয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব। তিনিই প্রথম প্রকাশ্যে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমনকী, গত দেড় বছরে বার বারই মুকুল রায় ও মদন মিত্রের গ্রেফতারির দাবি করেছেন তিনি।