মদনকে মন্ত্রিত্বে রেখে পাশে থাকলেন মমতা

পরিবহণমন্ত্রী সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, দফতরের দায়িত্বে থাকছেন ধৃত মদন মিত্রই। মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, যাওয়ার আগে মন্ত্রী তাঁর কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে তিনি সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন মদন মিত্রের পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে না? মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা: “আমি ওকে সরাবো না।”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ২১:৪৫
Share:

নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুদীপ আচার্য।

পরিবহণমন্ত্রী সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, দফতরের দায়িত্বে থাকছেন ধৃত মদন মিত্রই। মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, যাওয়ার আগে মন্ত্রী তাঁর কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে তিনি সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

কেন মদন মিত্রের পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে না?

মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা: “আমি ওকে সরাবো না।” আর এই একটি বাক্যেই মদনবাবুর প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সমস্ত আস্থা, ভরসা এবং বিশ্বাস ফুটে উঠেছে বলে বিরোধীদের কটাক্ষ। তাদের দাবি, পরিবহণমন্ত্রীর উপর মুখ্যমন্ত্রীর এই আস্থা যদিও নতুন কোনও ঘটনা নয়। এর আগে যখন সারদা কেলেঙ্কারিতে মদনের নাম প্রকাশ্যে আসে, তখন মুখ্যমন্ত্রীই সদর্পে বিস্ময় মেশানো প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, ‘মদন চোর’! তাঁর সেই বিস্ময় তালিকায় আরও যে কয়েকটি নাম ছিল, তার মধ্যে দু’জন যদিও ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন।

Advertisement

কিন্তু, মদনের মাথার উপর মুখ্যমন্ত্রীর ওই অভয়-হস্ত বেশি দিন ছিল না। কিছু দিনের মধ্যেই দেখা যায়, পরিবহণ দফতরের বেশ কিছু অনুষ্ঠানে মদন আছেন। আছেন মমতাও। অথচ তাঁদের মুখ দেখাদেখি হয়নি। সংবাদমাধ্যমে একাধিক বার দেখা গিয়েছে, মদনকে কার্যত এড়িয়েই গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সংবাদপত্রে প্রকাশিত পরিবহণমন্ত্রীর ছবি দেখে বিরোধীদের অনেকেই সেই সময় তাঁকে ‘অসহায়’ বলেও কটাক্ষ করেছেন। এর মধ্যে মদনবাবু শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেন। মমতা দেখতেও যাননি তাঁকে। দু’জনের সম্পর্কের সেই শীতলতার মধ্যেই দুর্গাপুজো চলে যায়। আসে কালীপুজো।

মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে সেই কালীপুজোর রাতেই দেখা যায় পরিবহণমন্ত্রীকে। ধোপদুরস্ত পোশাকে মদন মিত্র সেখানে হাজির হলেও মমতা সেখানেও তাঁকে কার্যত এড়িয়ে যান। দু’-একটি সৌজন্যমূলক কথাবার্তাতেই শেষ হয়ে যায় তাঁদের বাক্যালাপ। মদন ফিরে আসেন। এর পর বেশ কিছু দিন আপাত-নীরবতার মধ্যেই কাটে তাঁদের সম্পর্ক। পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা পাল্টে যায় সেই কালীঘাটের বাড়ির একটি বৈঠকে। মদন যদিও সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন না।

কলকাতা পুরসভার আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দলীয় সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ফের মুকুল, মদন এবং সৃঞ্জয়কে ‘ক্লিনচিট’ দেন। সারদার সঙ্গে তাঁদের যে কোনও যোগ নেই, সেই বার্তাও দেন তিনি। এই বার্তা পড়েই ফুরফুরে মেজাজে ফেরেন পরিবহণমন্ত্রী। তাঁকে ফের দফতরের কাজে মন দিতে দেখা যায়। কিন্তু, তাঁর স্বাভাবিক ছন্দে বাধ সাধল সিবিআই। সারদা কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। সেই ডাক পেয়েই ফের হাসপাতালে ভর্তি হলেন মদন। বেসরকারি ওই হাসপাতাল থেকে তিনি ভোজবাজির মতো সরকারি হাসপাতালেও ভর্তি হয়ে গেলেন। বিরোধীদের কটাক্ষ, সরকারি হাসপাতাল থেকে বাড়ি, সেখান থেকে এ দিনের সিবিআই দফতর, সব কিছু দলনেত্রীকে জানিয়েই করেছেন মদন।

কিন্তু, বিপর্যয় ঘটল শুক্রবার বিকেলে। মদনকে দফতরে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সন্তুষ্ট না হয়ে সিবিআই গ্রেফতার করল রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীকে। দলের অন্যতম মুখ তথা রাজ্যের হেভিওয়েট এমন মন্ত্রীর গ্রেফতারিতে যথেষ্ট চাপে মুখ্যমন্ত্রী। তবুও সেই চাপ অন্তত প্রকাশ্যে না বুঝিয়ে নবান্নে ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে, তাদের রাজনৈতিক অভিসন্ধির কথা তুলে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, সহযোদ্ধার পাশেই থাকছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement