মালয়েশীয় বিমানের ব্ল্যাকবক্স মালয়েশিয়ার হাতে তুলে দিল রুশপন্থী জঙ্গিরা। ছবি: রয়টার্স।
অবশেষে এমএইচ ১৭-র ব্ল্যাকবক্স মালেশিয়ার তদন্তকারী দলের হাতে তুলে দিল ইউক্রেনের রুশপন্থী জঙ্গিরা। অন্য দিকে, যে বিশেষ ট্রেনে নিহতদের দেহগুলি উদ্ধার করে রেখেছিল জঙ্গিরা সেটিও তোরেজ থেকে খারকিভের দিকে রওনা হয়েছে।
সোমবার ডনেৎস্ক-এ রুশপন্থী জঙ্গিদের নেতা আলেকজান্দার বোরোদাই মালয়েশিয়ার তদন্তকারী দলের প্রতিনিধি কর্নেল মহম্মদ সাকরি-র হাতে মালয়েশীয় বিমানের ব্ল্যাকবক্স দু’টি তুলে দেন। সাকরি জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ব্ল্যাকবক্স দু’টি ভাল অবস্থাতেই আছে। ব্ল্যাকবক্স থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিমানটি ধ্বংস হওয়ার কারণ জানা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। ইউক্রেন-রাশিয়ার সীমান্তে গ্রাভোবা গ্রামের উপরে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটি ধ্বংস হওয়ার পর থেকেই আন্তজার্তিক তদন্তকারী দলকে দিয়ে ঘটনার তদন্তের দাবি উঠতে থাকে। পর পর দু’দিন অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ’(ওএসসিই)-এর প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেও রুশপন্থী জঙ্গিদের কাছে বাধা পায়। ফলে বিঘ্নিত হয় তদন্ত। দীর্ঘ আলোচনার পরে সোমবার তোরেজ স্টেশনে তিন সদস্যের ডাচ পর্যবেক্ষক দল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় এই প্রথম দেহগুলি দেখার সুযোগ পায়। প্রথমে মনে করা হয়েছিল দেহগুলি পরীক্ষা করার মতো পরিস্থিতিতে নেই। পরে দলের সদস্যেরা দেহগুলি দেখে সন্তুষ্ট হন।
অন্য দিকে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রেকাজ রুশপন্থী জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে জঙ্গিরা ব্ল্যাকবক্স দু’টি মালয়েশিয়া সরকারের হাতে তুলে দিতে রাজি হয়। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট জানিয়েছেন, শববাহী ট্রেনটিও তোরেজ থেকে রওনা দিয়েছে। ওই ট্রেনে ২০০টি দেহ রয়েছে। ট্রেনটির মঙ্গলবার রাতে ট্রেনটির ডনেৎস্ক-এ পৌঁছনোর কথা। তার পরে খারকিভের উদ্দেশ্য রওনা দেবে। সেখান থেকে শনাক্তকরণের জন্য দেহগুলি নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
বিমান ধ্বংস নিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বসে সোমবার। দুর্ঘটনাস্থলে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দলগুলিকে বিনা বাধায় পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়ার দাবি সেই বৈঠকে পাশ হয়েছে। রাশিয়া এই প্রস্তাবে প্রাথমিক ভাবে আপত্তি জানালেও শেষপর্যন্ত ভেটো প্রয়োগ করেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপাতত রাশিয়া কূটনৈতিক ভাবে দুর্বল অবস্থায় আছে। সে ক্ষেত্রে ভেটো প্রয়োগ করলে সমালোচনার ঝড় উঠত।
সূত্রের খবর, এ দিন ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর বৈঠক হবে। মালয়েশীয় ওই বিমান ধ্বংসের আগে রাশিয়ার উপরে যে সব নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল সেগুলির প্রয়োগ নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হবে। নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। তবে এ বিষয়ে ইউরোপের নেতারা এখনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি। অনেকগুলি বিষয় এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা। যেমন, ফ্রান্সের একটি হেলিকপ্টারবাহী জাহাজ রাশিয়াকে বিক্রি করার কথা। ওয়াশিংটন এবং লন্ডন এই বিক্রি বন্ধ করতে ফ্রান্সের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ফ্রান্স সে বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি। আবার জার্মানির ‘এনার্জি সেক্টর’ অনেকাংশেই রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের উপরে নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে জার্মানরা নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিষয়ে সরব হবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যে হেতু এই দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি নেদারল্যান্ডসের নাগরিকদের মৃত্যু হয়েছে তাই তাদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই পরিস্থিতির জন্য যদিও রাশিয়াকে সরাসরি দায়ী করেছেন। দুর্ঘটনাস্থলে ধ্বংসাবশেষ নিয়ে জঙ্গিরা যাতে নাড়াচাড়া বন্ধ করে তা নিশ্চিত করতে তিনি রাশিয়াকে বলেছিলেন। এই দাবি না মানলে তিনি রাশিয়ার উপরে আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুমকি দিয়েছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যদিও জানিয়েছে, র্যাডারে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছে মালয়েশীয় বিমানটি ধ্বংস হওয়ার সময়ে, তার খুব কাছে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ইউক্রেন সরকারের সামরিক বিমান উড়ছিল। সামরিক বিমানটিই এমএইচ-১৭ কে ধ্বংস করেছে বলে তাদের দাবি। যদিও ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী পেত্রো পোরোশেঙ্ক এই দাবি অস্বীকার করেছেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মতে, রুশপন্থী জঙ্গিদের ছোড়া বুক ক্ষেপণাস্ত্রতেই বিমানটি ধ্বংস হয়েছে। সেই ক্ষেপণান্ত্র রাশিয়া সরবরাহ করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। যদিও বরাবরের মতো ক্রেমলিন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।