মানিক সরকার ও সূর্যকান্ত মিশ্র।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলে আপত্তি নেই। কিন্তু এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আপত্তি! এ রাজ্যের বামেরা আসলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ‘নাটক’ করতে চাইছে বলে সূর্যবাবুদের হঠাৎ আক্রমণ করল বিজেপি! যা দেখে সিপিএম মনে করছে, সারদা-কাণ্ডে কলকাতায় মঙ্গলবার বামেদের মিছিলে ভিড় দেখেই বিজেপি চিন্তায় পড়েছে!
সারদা-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা এবং প্রয়োজনে গ্রেফতারের দাবিতে বামেদের মিছিল এবং সারদা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুর চিঠি প্রসঙ্গে বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই আক্রমণ চালিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর মন্তব্য: “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধী নেতা দেখা করতে যাবেন কেন? ছবি তোলার জন্য যেতে পারেন। কিন্তু এটা নাটক হচ্ছে!” রাহুলবাবুর যুক্তি, সিপিএমের কাছে সারদা নিয়ে কোনও তথ্য-প্রমাণ থাকলে তারা সিবিআইকে দিক। বা আইনজীবী মারফত সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা দিক। প্রধানমন্ত্রীকে এর মধ্যে টানা হচ্ছে কেন? রাহুলবাবুর আরও অভিযোগ, “সিপিএম এখন অতি-সক্রিয় হয়ে জনসমক্ষে তাদের বিরোধিতা দেখাতে চাইছে। যে দল নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত, যাদের ৩৪ বছরের জমানায় সারদার মতো অনেক সংস্থা জন্মেছে, যাদের নেতারা সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত, তাদের এই নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই!”
যে ভাবে বিজেপি নেতৃত্ব এ দিন আগ বাড়িয়ে সিপিএমের মিছিলকে আক্রমণ করেছেন, তাতে তাঁদের উদ্বেগের ছাপই ধরা পড়েছে। রাজ্য রাজনীতিতে এখন বিরোধী দলের পরিসর দখল করতে চাইছে বিজেপি। এই সময়ে বামেদের সক্রিয়তা মানেই বিরোধিতার পরিসর ভাগ হওয়া। সেই অস্বস্তি থেকেই যে বিজেপি নেতৃত্বের এমন আক্রমণ, তাঁদের এ দিনের বক্তব্যেই তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। যার প্রতিক্রিয়ায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য: “যখন শুধু আমানতকারীরা প্রতিবাদ করছিলেন, বলা হচ্ছিল কোথায় সিপিএম! যখন রাজনৈতিক মুখ নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে, তখন প্রশ্ন করা হচ্ছে কেন নেমেছে সিপিএম? আসলে বামপন্থীরা রাস্তায় নামলে বিজেপি ভয় পায়! আমরা রাস্তায় ছিলাম এবং থাকব!” আর ঘটনাপ্রবাহ দেখে ঈষৎ আমোদিত শাসক দল। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “কে আসল বিরোধী, তা-ই নিয়ে সিপিএম-বিজেপি প্রতিযোগিতা চালাক! সরকারকে সরকারের কাজটা করতে দিক!”
রাহুলবাবু এ দিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় দল এবং সরকার এক নয়। তাই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ভুল কিছু করেননি। বরং এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা বিষয়টি না বুঝেই মোদী-মানিককে কটাক্ষ করেছেন।