নেদারল্যান্ডসের পথে এমএইচ ১৭-র যাত্রীদের দেহ

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ১২:৪৭
Share:

খারকিভ বিমানবন্দরে বিশেষ বিমানে তোলা হচ্ছে এমএইচ ১৭- র যাত্রীদের কফিনবন্দি দেহ। বুধবার রয়টার্সের তোলা ছবি।

মালয়েশীয় বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের দেহগুলি বুধবার ইউক্রেনের খারকিভ বিমানবন্দর থেকে বিশেষ দু’টি বিমানে নেদারল্যান্ডসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ২০০টি দেহ রয়েছে ওই দুই বিমানে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ওই বিমান দুর্ঘটনায় গত ১৭ জুলাই ২৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। নেদারল্যান্ডসের সরকারি সূত্রে খবর, বুধবার সন্ধ্যায় বিমানটির আইন্ডওভেনে নামার কথা। সেখানে নেদারল্যান্ডসের রাজা, রানি, প্রধানমন্ত্রী-সহ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা হাজির থাকবেন। পাশাপাশি, এ দিন নেদারল্যান্ডসে জাতীয় শোক পালন করা হচ্ছে।

Advertisement

আইন্ডওভেন-এ নামার পরে দেহগুলি ঔধসডেনে সেনা-ছাউনিতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই হবে শনাক্তকরণের কাজ। শনাক্তকরণের কাজে সুবিধার জন্য মালয়েশীয় সরকার নিহতদের ডিএনএ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। জানা গিয়েছে, আঙুলের ছাপ, পড়ে থাকা অলঙ্কার, জন্মচিহ্ন, ট্যাটু ইত্যাদির মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবে শনাক্তকরণের কাজ শুরু করা হবে। তার পরে প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা হতে পারে। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট জানিয়েছেন, দেহগুলি যে অবস্থায় রয়েছে তাতে শনাক্তকরণে যথেষ্ট সময় লাগতে পারে। ওই প্রক্রিয়া শেষ হতেই নিহতদের পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, ইউক্রেনের কাছে বাকি দেহগুলির অনুসন্ধান জারি রাখার দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহ‌ল।

মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার একটি ছোট তদন্তকারী দল ইউক্রেনের ওই দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়েছে বলে সূত্রের খবর। তাদের সঙ্গে ছিলেন ‘অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ’-এর (ওএসসিই) প্রতিনিধি দল। রুশপন্থী জঙ্গিরা কড়া পাহারার সঙ্গে তাদের জায়গাটি দেখার অনুমতি দেয়। ওএসসিই-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আপাতত দুর্ঘটনাস্থলে কোনও উদ্ধার কাজ চলছে না। জায়গাটি পরিষ্কার করার কাজও শুরু হয়নি। তবে ঘটনাস্থলের চার পাশে উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা রয়েছেন। যে ভাবে ওই জায়গায় ধ্বংসাবশেষ সরিয়েছে জঙ্গিরা, তাতে ঘটনার তদন্তে অসুবিধা হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বিমানের তেলের ট্যাঙ্কটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নেদারল্যান্ডস, ব্রিটেন ও অষ্ট্রেলিয়া এ বিষয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছে। ইউক্রেন তো সরাসরি প্রমাণ লোপাটের অভিযোগও তুলেছে।

Advertisement

অন্য দিকে, মালয়েশিয়ার তদন্তকারী দ‌ল ব্ল্যাকবক্স দু’টি ডাচ প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইউরোপের দু’টি জায়গায় ব্ল্যাকবক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব। একটি ব্রিটেন ও অন্যটি হল ফ্রান্স। নেদারল্যান্ডসের পক্ষ থেকে ব্ল্যাকবক্স দু’টির তথ্য খতিয়ে দেখতে ব্রিটেনের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ডসের আবেদন মেনে দক্ষিণ লন্ডনের ফার্নবোরোফ-এ বিশেষজ্ঞরা ব্ল্যাকবক্স দু’টি খতিয়ে দেখবেন। আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরো’র এক প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে ‘ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার’ থেকে তথ্য উদ্ধার করা হবে। ফ্লাইট ভয়েস রেকর্ডার থেকে সূক্ষ্ম শব্দ শোনার ব্যবস্থাও এখানে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। এতে বিমানটি ধ্বংস হওয়ার আগে ঠিক কী কী ঘটেছিল তা জানা যাবে। বিমানটি বুক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই নষ্ট হয়েছে কি না তাও স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

তবে বিমানটি কারা, কেন ধ্বংস করল তা নিয়ে বিতর্ক জারি রয়েছে। ইউক্রেন বার বারই দাবি করে আসছে বিমানটি ধ্বংসের জন্য সরাসরি রাশিয়াই দায়ী। তাদের গুপ্তচর বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুক মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়ার কোনও অফিসার উৎক্ষেপণ করেছেন। তা ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের জন্য যে কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন তা রুশপন্থী জঙ্গিদের নেই বলেও তাদের মত। এ বিষয়ে প্রমাণ হিসেবে একটি অডিও টেপ তাদের হাতে এসেছে বলে ইউক্রেনের দাবি। এ নিয়ে তারা ইতিমধ্যেই ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে। যদিও ইউক্রেনের এই দাবির সঙ্গে মার্কিন গুপ্তচর বিভাগের দেওয়া তথ্যের যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। আমেরিকার দাবি, বিমানটি বুক মিসাইল দিয়ে রুশপন্থী জঙ্গিরাই ধ্বংস করেছে। জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহের জন্য দায়ী করলেও বিমানটি ধ্বংসের জন্য রাশিয়ার দিকে সরাসরি আঙুল তোলেননি মার্কিন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, ভুল করেই রুশপন্থী জঙ্গিরা বিমানটিকে লক্ষ্য করে বুক মিসাইল উৎক্ষেপণ করে। রাশিয়া যদিও দু’টি অভিযোগই অস্বীকার করেছে। এখনও তারা মালয়েশীয় বিমান ধ্বংসের জন্য ইউক্রেন সরকারকেই দায়ী করে চলেছে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক দাবি মেনে ঘটনাটির নিরপেক্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য তিনি রুশপন্থী জঙ্গিদের সহযোগিতা চেয়েছেন। পাশাপাশি, ওই অঞ্চলে গৃহযুদ্ধে অনেক সাধারণ নাগরিককে ইউক্রেন সরকার হত্যা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি পশ্চিম দুনিয়ার কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার ব্রাসেলসে বিমান ধ্বংস নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠক হয়। বৈঠকে রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞার পরিধি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে ইউরোপের মূলধনী, প্রতিরক্ষা এবং এনার্জি-র বাজার রাশিয়ার জন্য নিয়ন্ত্রিত করা হবে। এ বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনকে পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। ফ্রান্স যদিও লন্ডন ও ওয়াশিংটনের অনুরোধ উপেক্ষা করে রাশিয়াকে হেলিকপ্টারবাহী জাহাজ বিক্রির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। নতুন নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতিকে আরও সঙ্কটজনক করে তুলবে বলে পুতিন ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement