দুর্ঘটনার তদন্তে বাধা রুশপন্থী জঙ্গিদের

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ১৯:৪৩
Share:

ওএসসিই’র প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে বাধা জঙ্গিদের। ছবি: এএফপি।

কথা রাখল না ইউক্রেনের রুশপন্থী জঙ্গিরা। শুক্রবারের মতো শনিবারও অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ-এর (ওএসসিই) প্রতিনিধি দলকে গ্রাবোভা গ্রামের দুঘর্টনাস্থল পর্যবেক্ষণে বাধা দেয় তারা। অন্য দিকে, তাদের বিরুদ্ধে দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনল ইউক্রেন সরকার।

Advertisement

শুক্রবার ওএসসিই-র ২১ জনের একটি প্রতিনিধি দল দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। সেখানে পৌঁছনোর আগে ভিডিও কনফারেন্সে তাদের সঙ্গে ইউক্রেন সরকার, জঙ্গি ও মস্কোর সঙ্গে কথাও হয়। কিন্তু দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরে তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা হয়নি। তাদের ভয় দেখাতে শূন্যে গুলিও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। তবে ওই প্রতিনিধি দল কাজ শুরু করে। মাত্র ৭৫ মিনিট কাজ করার পরে জঙ্গিরা তাদের ফিরে যেতে বলে। সমগ্র দুর্ঘটনাস্থলটি তাদের ঠিকমতো দেখতে দেওয়া হয়নি বলে প্রতিনিধি দলের তরফে জানানো হয়েছে। এ দিনও ধ্বংসাবশেষকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতে দিলেও কাছে ঘেঁষতে বাধা দেওয়া হয়েছে তাদের বলে অভিযোগ।

জঙ্গিরা প্রমাণ লোপাট করছে বলে এ দিন ইউক্রেন সরকারের তরফেও অভিযোগ করা হয়। যাত্রীদের গয়না, ক্রেডিট কার্ড এবং টাকাপয়সাও সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। গত কালই জঙ্গিরা ওই বিমানের ব্ল্যাকবক্স সরিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। বিমানটি ধ্বংস হওয়ার কারণ জানতে দুর্ঘটনাস্থলটিকে ঠিকমতো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কিন্তু দু’দিনে সেই রকম কোনও ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। জঙ্গি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ওই জায়গায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। অনেকেই বিমানের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন। এর মধ্যেই ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ রাশিয়ায় পাচার হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ভাবে ঘাঁটাঘাঁটি করলে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অসুবিধা হবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। অধিকাংশ মৃতদেহ এখনও দুর্ঘটনাস্থলেই পড়ে আছে। তাতে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ছড়িয়ে থাকা দেহাবশেষগুলি ব্যাগে ভরে ফেলা হচ্ছে। এতে মৃতের পরিচয় জানতে অসুবিধা হতে পারে। জঙ্গিরা ৩৮টি মৃতদেহ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দোনেত্‌স্ক শহরের মর্গে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে বলে ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে।

Advertisement

মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স এ দিন এমএইচ-১৭-র যাত্রী তালিকায় নতুন নাম সংযোজন করেছে। সেখানে জানানো হয়েছে, ওই বিমানে নেদারল্যান্ডসের ১৯২ জন নাগরিক ছিলেন। এর মধ্যে এক জন মার্কিন ও নেদারল্যান্ডস দু’ জায়গারই নাগরিক। এর পরেই রয়েছেন ৪৪ জন মালয়েশিয়ান নাগরিক (১৫ জন বিমানকর্মী-সহ)। মৃতদের মধ্যে ৮০ জন শিশুও আছে বলে রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানিয়েছে। মালয়েশিয়ার একটি তদন্তকারী দল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে পৌঁছেছে এ দিন। তবে তারা দুর্ঘটনাস্থলে যেতে পারবে কি না তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে জঙ্গিদের আলোচনা চলছে। মালয়েশিয়া ১৩১ জনের একটি তদন্তকারী দল পাঠাতে চায় বলেও সূত্রের খবর। অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও আমেরিকার তরফেও তদন্তকারী দল পাঠানো হয়েছে।

মার্কিন প্রশাসন জোর গলায় জানিয়েছে, বিমানটিকে ইউক্রেনের রুশপন্থী জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল থেকেই ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। ইউক্রেন সরকারের তরফে প্রকাশ করা এক ভিডিও টেপে দেখা গিয়েছে ওই অঞ্চলে একটি বুক ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী যান ঘুরছে। কিন্তু যানটিতে চারটি বুক ক্ষেপণাস্ত্রের জায়গায় তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ইউক্রেন সরকারের অভিযোগ, বাকি ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ছোড়া হয়েছে ওই বিমানকে লক্ষ্য করে। তাদের আরও অভিযোগ, বুক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে প্রযুক্তিগত ভাবে দক্ষ লোক দরকার। ফলে জঙ্গিরা নয়, কোনও রাশিয়ানই ক্ষেপণাস্ত্রটি ছুড়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দল দিয়ে ঘটনাটির নিরপেক্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের কথা বলেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘও। তবে কোনও তদন্ত ছাড়া রাশিয়ার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলায় ক্ষুব্ধ ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের তরফে এ জন্য পশ্চিমী দুনিয়াকে দায়ী করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement