আমস্টারডামে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। ছবি: এপি।
তাদের কাছে বুক ক্ষেপণাস্ত্র থাকার কথা মেনে নিল রুশপন্থী জঙ্গিদের একাংশ। জঙ্গিদের ভোস্তক ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডার আলেকজান্ডার খোদাকোভস্কি এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
রুশপন্থী জঙ্গিরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করছে। এর মধ্যে পিপলস রিপাবলিক অফ ডনেৎস্ক-এর হয়ে লড়ছে ভোস্তক ব্যাটেলিয়ন। আলেকজান্ডার রুশপন্থী হলেও আদতে ইউক্রেনেরই বাসিন্দা। তিনি আগে ডনেৎস্ক-এর সন্ত্রাসবাদ বিরোধী শাখা আলফা-র প্রধান ছিলেন। পরে জঙ্গি দলের কম্যান্ডার হন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ব্যাটেলিয়নের হাতে বুক ক্ষেপণাস্ত্র না থাকলেও অন্য রুশপন্থী জঙ্গিদের হাতে তা ছিল।
মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান এমএইচ-১৭ ভেঙে পড়ার কয়েক দিন আগে অন্য রুশপন্থী জঙ্গি দল লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক-এর হাতে বুক ক্ষেপণাস্ত্র এসেছিল বলে তিনি জানতে পেরেছিলেন। বুক ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী গাড়িটিতে লুহানস্ক পিপিলস রিপাবলিক-এর পতাকাও লাগানো ছিল। বিমানটি ধ্বংস হওয়ার পরেই তারা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটিকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে বলে আলেকজান্ডার-এর ধারণা। কিন্তু বিমান ধ্বংসের জন্য ইউক্রেন সরকারকেই দায়ী করেছেন আলেকজান্ডার। তাঁর মতে, ইউক্রেনের বার বার বিমান হানা রুখতেই জঙ্গিরা বুক ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করেছিল। বিমানটি ধ্বংস হওয়ার কিছু দিন আগে তাদের কাছে বুক ক্ষেপণাস্ত্র আছে বলে জঙ্গিরা হুমকিও দিয়েছিল। তবুও বিমান হামলা থামায়নি ইউক্রেন।
আলেকজান্ডারের দাবি, যে দিন দুর্ঘটনা ঘটে সে দিন দুর্ঘটনাস্থলের প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে স্নেঝনোয়ে গ্রামে বুক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা আছে বলে ইউক্রেন সরকারও জানত। জায়গাটি ইউক্রেনের বিমান হানার প্রাথমিক লক্ষ্যের মধ্যে না থাকলেও সে দিন ওই অঞ্চলে বার বার বিমান হানা চালানো হচ্ছিল। যদিও সেখান দিয়ে বেশি উচ্চতায় একাধিক যাত্রীবাহী অসামরিক বিমানও চলছিল। ইউক্রেন সরকার এ বিষয়ে বিমানগুলিকে সতর্ক করেনি বলেও অভিযোগ তাঁর। বার বার বিমান হানাই জঙ্গিদের বুক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে ইন্ধন যোগায় বলে দাবি করেছেন তিনি।
আলেকজান্ডারের এই মত অনেকাংশে আমেরিকার দাবির সঙ্গে মিলে যায়। ভুল করে এমএইচ-১৭ লক্ষ্য করে ইউক্রেনের জঙ্গিরা বুক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল বলে মার্কিন বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছিলেন। এই ঘটনার জন্য রাশিয়া সরাসরি দায়ী নয় বলেও জানান মার্কিন তদন্তকারিরা। প্রায় একই মত প্রকাশ করেছে ব্রিটেনেও। ইউক্রেনের ওই অংশে আগে থেকেই বুক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা ছিল বলে জানিয়েছে তাঁরাও। যদিও ইউক্রেন সরকার এখনও বিমানটি ধ্বংস করার জন্য সরাসরি রাশিয়াকেই দায়ী করছে। ব্রিটেনের গুপ্তচর বিভাগ আরও জানতে পেরেছে, বিমানটি ধ্বংস হওয়ার পরে জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে প্রমাণ লোপাট করার জন্য কথা বলছিল। কার্যক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে বলে দাবি ব্রিটেনের। এর আগে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া এবং মালয়েশিয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ধ্বংসস্থলে প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছিল।
এ দিকে আলেকজান্ডারে দাবি নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। রুশপন্থী জঙ্গিদের নানা দলের মধ্যে ঐক্যমত্যের অভাব রয়েছে। ইউক্রেনের বাসিন্দা আলেকজান্ডারে সঙ্গে রাশিয়ার বাসিন্দা জঙ্গি নেতা ইগর স্ট্রেলকভের বিরোধ সুবিদিত। জঙ্গিদের মস্কোভাইট অংশের প্রধান ইগর স্ট্রেলকভ নিজেকে সব রুশপন্থী জঙ্গি সংগঠনের নেতা বলে ঘোষণা করেছিলেন। আলেকজান্ডর তার বিরোধিতা করেছিলেন। অন্য দিকে, তিন দিন ধরে কোনও বিশেষজ্ঞ না আসায় বাধ্য হয়ে দেহগুলিকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে পিপলস রিপাবলিক অফ ডনেৎস্ক-এর স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার বোরোদাই দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ’-এর (ওএসসিই) প্রতিনিধি দল তাদের বাকি দেহগুলি উদ্ধার করতে বারণ করেছে। যদিও ওএসসিই-র পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
বুধবার ৪০টি দেহ নিয়ে ডাচ ও অস্ট্রেলিয়ার দু’টি বিমান আইন্দোভেনে নামে। সেখানে নেদারল্যান্ডসের রাজপরিবার, প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট-সহ সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা হাজির ছিল। দুর্ঘটনায় নিহতদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেশের পতাকা অর্ধনমিত রাখা ছিল। বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছিল দেশের বিভিন্ন চার্চে। বিমানবন্দর থেকে শোভাযাত্রা করে দেহগুলিকে হিলভেরসুম শহরের ঔধসডেনের সেনা-ছাউনিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চলবে শনাক্তকরণের কাজ। বৃহস্পতিবার আরও দেহ এখানে পৌঁছবে।
এ দিকে ডাচ তদন্তকারী দল জানিয়েছে ব্ল্যাক বক্স দু’টিতে প্রামাণ্য তথ্য রয়েছে। বুধবার ব্রিটেনে পৌঁছয় ব্ল্যাক বক্স দু’টি। সেখানে ফার্নবোরোফ-এ ‘ইউকে এয়ার অ্যাকসিডেন্ট ইভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ’-এ তথ্য বিশ্লেষণের কাজ শুরু হয়েছে।