চলতি নীতিকেই আরও সংহত করার পথে জেটলি

বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে নীতি নির্ধারকেরা তৈরি করেছেন উদ্যোগপতিদের জন্য নতুন অনিশ্চয়তার জায়গা। এই বাজেটে সেই অনিশ্চয়তা মুক্তির লক্ষ্যে হাঁটার নির্দিষ্ট প্রচেষ্টা রয়েছে। লিখছেন সুপর্ণ পাঠকবাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে নীতি নির্ধারকেরা তৈরি করেছেন উদ্যোগপতিদের জন্য নতুন অনিশ্চয়তার জায়গা। এই বাজেটে সেই অনিশ্চয়তা মুক্তির লক্ষ্যে হাঁটার নির্দিষ্ট প্রচেষ্টা রয়েছে। লিখছেন সুপর্ণ পাঠক

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ১৫:১৮
Share:

তিরুভল্পুভর নেই। শায়ের নেই। একেবারেই কেজো। বাজেট ভাষণ শুনে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এটাই।

Advertisement

কিন্তু বাজেট কী রকম? প্রতি বারই বাজেট পেশ করার পর এই প্রশ্ন নিয়েই বেশি মাতামাতি। মূল জিজ্ঞাসা অবশ্যই, ‘‘আমার জন্য কী রইল?’’ তার পরে আসে বিশেষজ্ঞের মন্তব্য নিয়ে বাজেট যাচানোর পালা।

বিজেপি-র প্রথম বাজেটে এই প্রশ্নের উত্তরে বলি, আয়করে আপনার সরাসরি লাভ ৫০ হাজার টাকার। এত দিন ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনও আয়কর দিতে হত না। এখন ছাড় ২ লক্ষ ৫০ হাজার পর্যন্ত। বয়স ৬০ বছরের উপরে হলে ৩ লক্ষ পর্যন্ত ছাড়। ৮০সি ধারায় ছাড় বেড়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো। আর বাড়ি করার ধারের উপর সুদ দিলে ছাড় ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। পিপিএফে বছরে রাখতে পারবেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

Advertisement

যদি ধূমপায়ী হন তা হলে আপনার মাসিক খরচ বাড়ল এক ধাক্কায় অনেক। কারণ, অর্থমন্ত্রী সিগারেটের উপর উৎপাদন শুল্ক এক ধাক্কায় ১১ থেকে ৭২ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

আপনার-আমার জন্য আপাতত কর বাবদ এইটুকুই।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বাজেটের নথি এসে পৌঁছয়নি। তাই নির্দিষ্ট করে বাজেটের অঙ্ক নিয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। কিন্তু অরুণ জেটলির বাজেটের অভিমুখ যেটুকু বোঝা যাচ্ছে তার মধ্যে জোর কিন্তু পরিকাঠামো তৈরি এবং লালফিতের ফাঁস কেটে অর্থনীতিকে আরও বেশি উদ্যোগমুখী করে তোলার উপরই।

সংস্কার শুরুর দিন থেকে এ যাবৎ ভারতে নীতি নির্ধারকেরা যখন এক দিকে নিয়ন্ত্রণ কমানোর দিকে হেঁটেছেন, তখনই পাশাপাশি তৈরি করেছেন একই বিষয়ে নিয়ন্ত্রণের অন্য রাস্তা। বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি করেছেন উদ্যোগপতিদের জন্য নতুন অনিশ্চয়তার জায়গা। এই বাজেটে সেই অনিশ্চয়তা মুক্তির লক্ষ্যে হাঁটার একটা নির্দিষ্ট প্রচেষ্টা রয়েছে।

যেমন, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর। অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, এখন থেকে সরকার করের ক্ষেত্রে এমন আইন করবেন না যা চালু হবে আগের কোনও সময় থেকে। ভারতের কর আইনে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি রয়েছে। সাম্পতিক উদাহরণ অবশ্যই ভোডাফোনের উপর ধার্য করা কর নিয়ে আইনি টানাপড়েন।

এই ধরনের প্রবণতা উদ্যোগ-বিরোধী। কারণ, আজ যদি কেউ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে উপস্থিত কর ব্যবস্থার ভিত্তিতেই। কিন্তু ভবিষ্যতে গিয়ে কোনও সরকার যদি বলে, ‘না, তখনকার সরকার ভুল করেছিল, আসলে কর দিতে হবে বর্ধিত হারে’, তা হলে তার বিনিয়োগের অঙ্কই গণ্ডগোল হয়ে যাবে। বিনিয়োগের পায়ে যে ক’টি বেড়ি আছে তার মধ্যে নীতি নির্ধারকদের এই প্রবণতা অন্যতম। এই কারণেই কর সংক্রান্ত প্রায় চার লক্ষ মামলা চলছে। আপাতদৃষ্টিতে এ বারের বাজেটে এই প্রবণতা থেকে মুক্তির পথ খোঁজার একটা চেষ্টা রয়েছে।

জেটলির বাজেট ভাষণ গুছিয়ে নিলে প্রাথমিক ভাবে যা দাঁড়াচ্ছে তা হল

ক) কোষাগারে টাকা নেই, কিন্তু প্রয়োজন পরিকাঠামোর। তাই বেসরকারি উদ্যোগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এগোতে হবে।

খ) কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন বিশ্বমানের উৎপাদন শিল্পের এবং স্থানীয় উদ্যোগের। তাতেও প্রয়োজন প্রযুক্তি এবং বিদেশি উদ্যোগের।

গ) উদ্যোগের জন্য প্রয়োজন আর্থিক পরিকাঠামো ঢেলে সাজার।

ঘ) বাজার অর্থনীতির সঙ্গে পা মিলিয়ে কৃষিপণ্যের বাজারকেও নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে তার পরিসর বাড়ানো।

ঙ) গ্রামে আরও উদ্যোগপতি তৈরির পথে সাহায্যের হাত বাড়ানো।

চ) প্রথাগত রাস্তায় হেঁটে প্রচুর নতুন প্রকল্প ঘোষণা না করে চলতি প্রকল্পকেই সংস্কার করে সেই কাজ শেষ করা।

ফল? প্রতিরক্ষা শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগের হার বাড়ানো হয়েছে ২৬ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশে। বিমা শিল্পে এই হার বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কিন্তু এই বাজেটের বৈশিষ্ট হার বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। শিল্পে বিনিয়োগ করে মূল বিনিয়োগকারীর যদি তা পরিচালনার অধিকারই না থাকে তা হলে সে টাকা ঢালবে কেন? সংস্কার-উত্তর ভারতে এই প্রশ্ন নিয়ে প্রায় সিকি যুগ ধরে টানাপড়েন চলছিল। এ বারের বাজেট এই টানাপড়েন থামানোর লক্ষ্যে একটা বড় পদক্ষেপ।

একই ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রেও মূলধন জোগাড় করতে শেয়ার বাজারের দিকেই হাঁটবে এই সরকার।

উন্নয়নকে গ্রামমুখী করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা খাতেই ১৪ হাজার কোটি টাকার উপর বরাদ্দ প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। যা স্পষ্ট করে দেয় এই সরকারের আর্থিক ব্যবস্থা পরিচালনার অভিমুখ।

জোর দেওয়া হয়েছে পর্যটন শিল্পের উপরেও। আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা অন্য ভাবেই।

বাজেটের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সামর্থের বাইরে গিয়ে খরচ করা সম্ভব নয়। আজ খরচ করে আগামী দিনে তার দায় করদাতাদের ঘাড়ে চাপানোটাও সমীচীন নয়। তাঁর প্রস্তাব মতে, কেন্দ্রের রাজস্ব বাবদ আয় হবে ১১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি থাকবে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকার। কিন্তু রাজকোষ ঘাটতিকে তাঁরই কথায় পূর্বসূরির চ্যালেঞ্জ মেনেই রাখতে চাইছেন ৪.১ শতাংশেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement