ঠাকুমার কাছে টাকা আনার জন্য দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকেছিল দশ বছরের নাতি আরশাদ। সামনের ঘরে ঠাকুমাকে না দেখতে পেয়ে শোওয়ার ঘরে উকি মারতেই ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত ঠাকুমাকে পড়ে থাকতে দেখল সে। পাশে একই অবস্থায় পড়ে তার দিদিও। আহত অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ঠাকুমাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। গুরুতর জখম অবস্থায় নাতনি একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে কোনও এক সময়ে গার্ডেনরিচের রামনগর লেনের একটি ফ্ল্যাটে। মৃত বৃদ্ধার নাম জহুরা খাতুন (৬০)। আহত কিশোরী সায়রা ওয়ার্সি (১২)।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, পরিচিত কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বৃদ্ধার পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছেন, বুধবার রাতে তাঁর এক ছেলে ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা দিয়েছিল। কিন্তু তদন্তকারীদের দাবি, আততায়ীরা ফ্ল্যাটের তালা ভাঙেনি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, চাবি দিয়েই তালা খোলা হয়েছিল। দরজার পাশ থেকে ওই তালা চাবি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, রাতে তালা বন্ধ করার পর ওই চাবি পাশের ফ্ল্যাটে থাকা বৃদ্ধার ছেলেদের কাছে থাকার কথা। পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধা এবং তাঁর নাতনির শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ঘরের মধ্যে পুলিশ একটি মাথার খুলির অংশ এবং দুটি কাটা আঙুল উদ্ধার করছে। তদন্তকারীদের অনুমান, খুলির অংশটি মৃত বৃদ্ধার এবং কাটা আঙুলগুলি ওই আহত কিশোরীর। তাঁদের আরও অনুমান, আততায়ীকে হয়ত চিনে ফিলেছিলেন ওই বৃদ্ধা এবং নাতনি। তারা আততায়ীদের বাধা দেওয়ারও চেষ্টা করেছিল বলে অনুমান পুলিশের। তবে কী কারণে ওই বৃদ্ধা ও তার নাতনির ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে তা পরিষ্কার নয় তদন্তকারীদের কাছে। ঘরের কিছু খোয়া যায়নি বলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে কোন অস্ত্র পায়নি পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ওই নাতনিকে সঙ্গে রাতে তিনতলা ফ্ল্যাটের একতলায় একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন জহুরা। পাশের ফ্ল্যাটেই থাকতেন তাঁর অন্য তিন ছেলে ও তাঁদের পরিবার। পুলিশ জানতে পেরেছে, জহুরা এলাকায় সুদের কারবার করতেন। তাঁর ছেলেরাও ওই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশের দাবি। মৃতার পরিবার সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, বুধবার রাতে জহুরাদের ফ্ল্যাটের তালা বন্ধ করেছিলেন তাঁর এক ছেলে। তার পর এ দিন সকালে আরশাদ ঠাকুমার কাছে টাকা আনতে গিয়ে দেখতে পান দরজা খোলা এবং ভিতরে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রয়েছেন জহুরা এবং সায়রা।