অগাস্টা-ওয়েস্টল্যান্ড কপ্টার দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার ব্যবসায়ী গৌতম খৈতানকে গ্রেফতার করল এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। গত জুলাইতে খৈতান, বায়ুসেনার প্রাক্তন প্রধান এস পি ত্যাগী এবং ১৯ জনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে একটি এফআইআর দায়ের করেছিল ইডি। তদন্তকারী সংস্থাটি এ দিন জানিয়েছে, ২০০২ সালের ‘প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’ অনুযায়ী গৌতমবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার তাঁর নয়াদিল্লির দু’টি অফিসে তল্লাশি চালায় ইডি। সেখান থেকে এক কোটি টাকার গয়না এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
চণ্ডীগড়ের ‘অ্যারোম্যাট্রিক্স ইনফো সলিউসনস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর বোর্ড সদস্য ছিলেন গৌতম খৈতান। যে ২১টি সংস্থার বিরুদ্ধে ইডি এফআইআর দায়ের করেছে সেই তালিকায় এই সংস্থাটিও ছিল। সিবিআই সূত্রে খবর, কপ্টার-চুক্তিতে এই সংস্থাটির অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল। তাদের দাবি, অ্যারোম্যাট্রিক্স-সহ আরও কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে চুক্তির টাকা লেনদেন হয়েছে। খৈতানকে জেরা করে বাকি সংস্থাগুলির নাম জানার চেষ্টা করা হবে বলে ইডি সূত্রে খবর।
ভিভিআইপিদের ব্যবহারের জন্য ১২টি হেলিকপ্টার কিনতে ভারতের সঙ্গে ইতালীয় সংস্থা ফিনমেকানিকা-র ব্রিটিশ শাখা সংস্থা অগাস্টা-ওয়েস্টল্যান্ডের সঙ্গে ৩৬০০ কোটি টাকার চুক্তি হয়। অভিযোগ ওঠে, এই বরাত পেতে অর্থের বিনিময়ে সাহায্য করেছিল কয়েকটি ভারতীয় সংস্থা। ২০১৩-য় দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে কপ্টার দুর্নীতির এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর দেশীয় রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগী এবং তাঁর তিন পিসতুতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তখন দাবি করে, অত্যাধুনিক সুরক্ষা সমৃদ্ধ কপ্টার কেনার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তত্কালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ সেই সময় ছ’হাজার মিটার উচ্চতায় সিয়াচেনে গিয়েছিলেন। তার পরই ঠিক হয় ওই উচ্চতায় যাওয়ার জন্য বিশেষ কপ্টারের প্রয়োজন। মন্ত্রকের আরও দাবি ছিল, কপ্টারের গুণগত মানদণ্ড এনডিএ আমলে এমন ভাবে বদলানো হয় যাতে ইতালীয় সংস্থাটির বরাত পেতে সুবিধা হয়। আর এই নির্দেশ দিয়েছিলেন তত্কালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্র।
দুর্নীতিতে কারা জড়িত সেটা খুঁজে বের করতে গত বছরেই আসরে নামে সিবিআই এবং ইডি। এই দু’টি তদন্তকারী সংস্থা আর্থিক লেনদেনে জড়িত ২১টি সংস্থার তালিকা তৈরি করে। প্রথমেই নাম উঠে আসে চণ্ডীগড়ের অ্যারোম্যাট্রিক্স ইনফো সলিউসনস-এর।
গৌতম খৈতানকে গ্রেফতার করে ইডি কপ্টার-কেলেঙ্কারির রহস্য উন্মোচনে এক ধাপ এগোল বলে মনে করা হচ্ছে।