এককাট্টা বিরোধী ভোট গিয়েছে কেজরীবালের কাছে

দিল্লির ভোটে এ বার অপ্রত্যাশিত ঝড় অরবিন্দ কেজরীবালের। বুথফেরত সমীক্ষা বলেছিল আম আদমি পার্টির (আপ) অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার গঠন করবেন। কিন্তু তাঁর পক্ষে এমন ঝড় উঠবে তা কিন্তু কেউ ভাবতে পারেননি। কেন এমন হল? নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মাত্র নয় মাস আগে এক অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছে। আর সেই বিজেপি-র এ বার বিধানসভা নির্বাচনে আসন সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে তিনে (এখনও পর্যন্ত যা হিসেব)। আর বিজেপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেস ৭০টি আসনের মধ্যে একটিও আসন দখল করতে ব্যর্থ। তাদের ফলাফল শূন্য।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:৫০
Share:

আপ-এর জয়ে দিল্লির উল্লাস। ছবি: রয়টার্স।

দিল্লির ভোটে এ বার অপ্রত্যাশিত ঝড় অরবিন্দ কেজরীবালের। বুথফেরত সমীক্ষা বলেছিল আম আদমি পার্টির (আপ) অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার গঠন করবেন। কিন্তু তাঁর পক্ষে এমন ঝড় উঠবে তা কিন্তু কেউ ভাবতে পারেননি।

Advertisement

কেন এমন হল?

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মাত্র নয় মাস আগে এক অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছে। আর সেই বিজেপি-র এ বার বিধানসভা নির্বাচনে আসন সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে তিনে (এখনও পর্যন্ত যা হিসেব)। আর বিজেপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেস ৭০টি আসনের মধ্যে একটিও আসন দখল করতে ব্যর্থ। তাদের ফলাফল শূন্য।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন হল?

বিগত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৭১টি আসন পেয়েছিল। অথচ, বিজেপির শতকরা ভোটপ্রাপ্তি ছিল মাত্র ৪২ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশের প্রায় ষাট শতাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দেননি। তা সত্ত্বেও বিজেপি অভূতপূর্ব ফল করে উত্তরপ্রদেশে। কারণ, ওই রাজ্যে বিজেপি বিরোধী ভোট কোনও একটি দল পায়নি। মুলায়ম সিংহ, মায়াবতী ও কংগ্রেসের মধ্যে ওই ভোট ভাগাভাগি হয়েছিল। ফলে মুসলমান, যাদব বা দলিত ভোট একত্রিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। এ বার দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে কেজরীবাল সেই বিজেপি বিরোধী ভোটকে কোনও আনুষ্ঠানিক জোট ছাড়াই এককাট্টা করতে সক্ষম হয়েছেন। আর সেই সাফল্য এসেছে রাহুল গাঁধীর কংগ্রেসের সৌজন্যে। দিল্লির মানুষ বিজেপি-র বিকল্প হিসাবে কংগ্রেসকে গ্রহণ করেননি। রাহুল গাঁধীর কংগ্রেস অচ্ছুতই থেকে গিয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোট ছিল শতকরা ২৫ ভাগ। এ বার তা কমে হয়েছে শতকরা ৯ ভাগ। এমনকী, লোকসভা ভোটেও দিল্লিতে কংগ্রেস ১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। কংগ্রেসের ভোটপ্রাপ্তির এই হ্রাস ব্যাপক সাহায্য করেছে কেজরীবালকে। কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্ক চলে গিয়েছে কেজরীবালের সমর্থনে। যার ফলে আম আদমি পার্টি-র ভোট ২৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫২ শতাংশ। যা লোকসভা নির্বাচনে ছিল ৩৩ শতাংশ। যা দেখে বোঝা যাচ্ছে ধারাবাহিক ভাবে ভোট বেড়েছে কেজরীবালের। যার অন্যতম কারণ হল কংগ্রেসের অবক্ষয়। যা ক্রমশ শক্তিবৃদ্ধি করেছে আপের।

অন্য দিকে, বিজেপি-র কী হল?

বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৩৩ শতাংশ ভোট। এ বারের নির্বাচনেও সেই ভোটব্যাঙ্ক অটুট থেকেছে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে মোদী ঝড়ে তা বেড়ে হয় ৪৬ শতাংশ। এই বাড়তি জনসমর্থন এ বারের নির্বাচনে ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। তার অর্থ, নরেন্দ্র মোদী সরকারের নয় মাসের কাজের খতিয়ান এই ভোট ফলাফলে রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাজকর্ম নিয়ে মানুষের বিপুল প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দিল্লিতে গত নয় মাসে সরকারের কাজকর্মে সেই প্রত্যাশা পূরণের উপলব্ধি সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক কম। বরং সরকার যতটা গর্জন করেছে ততটা বর্ষণ করছে না, এমন ধারণা মানুষের মধ্যে তৈরি হতে শুরু করেছিল।

ফলে প্রশ্ন উঠছে, এ বারের নির্বাচন কি মোদী সরকার-বিরোধী নেতিবাচক ভোট না কেজরীবালের পক্ষে ইতিবাচক ভোট? যেমন, গত বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ভোট হয়েছিল। যার জেরে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় রাজনীতিতে ইন্দিরা-রাজীব গাঁধী থেকে মনমোহন সিংহ, এমনকী বিজেপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক ভোটের একাধিক উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু এ বারের নির্বাচন যতটা মোদী-বিরোধী তার চেয়ে বেশি কেজরীবাল নামক রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার একটি অনুষ্ঠান। রেডিওতে কেজরীবাল প্রচার চালাচ্ছিলেন, গত বার আমাদের সংখ্যা কম ছিল। তাই চলে গিয়েছিলাম। আমায় সংখ্যা দিন। আমি দিল্লির উন্নয়ন করে দেখাব। কাজেই, এক অসমাপ্ত কর্মসূচি পূরণের স্বপ্ন দেখিয়ে আবার অবতীর্ণ হয়েছিলেন কেজরীবাল। কৌশল রচনার ক্ষেত্রেও তিনি যে যথেষ্ট পটু তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। দিল্লিতে বিজেপির প্রধান ভোটব্যাঙ্ক ছিল বৈশ্য ভোট। সেখানে বৈশ্য নেতাদের পাশে সরিয়ে বাইরে থেকে কিরণ বেদীকে আমদানি করায় ক্ষোভ ছিল দলের মধ্যে। কেজরীবাল নিজে রাজস্থানের বৈশ্য। এলাকায় এলাকায় সেই প্রচারের সুযোগও তিনি নিতে ছাড়েননি। এ ভাবে দিল্লির বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ কলহ ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পটভূমিতে যখন বিজেপির রাজ্য নেতারা ক্ষুব্ধ তখন কেজরীবাল মানুষের কাছে বার্তা দিয়েছেন, তিনি হলেন গরিবের বন্ধু, সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। তাঁর আচরণের মধ্যে অহঙ্কারের কোনও ছাপ ছিল না। প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার রাজনীতিও তিনি পরিহার করেছেন। এমনকী, গত বার যে ভুলগুলি তিনি করেছিলেন এ বার তা এড়িয়ে গিয়েছেন। ধীরে ধীরে কেজরীবাল শুধু নিম্নবর্গ নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন। মানুষ তাঁকে আবার ভোট দেওয়ার কথা ভাবে। সকলের অজান্তে কেজরীবাল ঝড় ওঠে ভোট বাক্সে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement