বালির তপন দত্ত হত্যার সিবিআই তদন্ত চেয়ে দায়ের করা মামলাটি শেষ পর্যন্ত ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। সোমবার ওই মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল। বিচারপতি দত্ত এ দিন আদালতে জানান, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই আপিল মামলা দায়ের করেছে। খুনের ঘটনার আরও তদন্ত চেয়ে তপনবাবুর মেয়েও পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছেন। মূলত সেই কারণেই তিনি তাঁর কাছে থাকা মামলাটির রায় না দিয়ে সেটি ডিভিশন বেঞ্চের শুনানির জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তবে, বিচারপতি দত্ত একই সঙ্গে জানান, তপন খুনের তদন্তে নিম্ন আদালত সন্তুষ্ট নয় বলে রায় দিতে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে। নিম্ন আদালতের সেই পর্যবেক্ষণের জন্য তিনি মামলাটি শুনেছিলেন। ডিভিশন বেঞ্চে সেই কথা তিনি জানিয়ে দেবেন।
বালির জলাভূমি বাঁচাও কমিটির নেতা তপন দত্তকে একাধিক গুলি করে খুন করা হয় ২০১১ সালের ৬ মে রাতে। রাজ্য সরকার খুনের তদন্তের ভার সিআইডি-কে দিলেও পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করেছে বলে হাইকোর্টে অভিযোগ করেন তপনবাবুর স্ত্রী প্রতিমাদেবী। খুনের তদন্ত সিবিআই-য়ের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তিনি ২০১২ সালে বিচারপতি দত্তের আদালতে আর্জি জানান। মামলার শুনানির সময় সিআইডি তদন্ত নিয়ে কিছু প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি দত্ত। ইতিমধ্যে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে হাওড়া জেলা আদালত খুনের মামলার রায় দেয়। খুনের অভিযোগে ধৃত পাঁচ ব্যক্তিকে বেকসুর মুক্তি দিয়ে নিম্ন আদালত জানায়, সিআইডি-র তদন্তে আদালত সন্তুষ্ট নয়। তদন্তে ফাঁক রয়েছে বলেও নিম্ন আদালত পর্যবেক্ষণ করে।
বিচারপতি দত্তের আদালতে প্রতিমাদেবীর দায়ের করা মামলার শুনানির সময় রাজ্য সরকার জানায়, যেহেতু নিম্ন আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেছে, সেই কারণেই সিবিআই তদন্ত চেয়ে দায়ের করা মামলার শুনানি আর হতে পারে না। বিচারপতি দত্ত আদালতে সিআইডি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, আততায়ীরা তপনবাবুকে লক্ষ করে একাধিক গুলি ছুড়ল। ছ’টি গুলি লাগল তাঁর দেহে। অথট যে যুবক তাঁর মোটরসাইকেলের পিছনে বসেছিলেন, তাঁর দেহে একটিও গুলি লাগল না। তাতে সন্দেহ হচ্ছে তাঁর মনে। তপনবাবুকে লক্ষ করে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল কি না, হয়ে থাকলে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যালাস্টিক রিপোর্ট সিআইডি জোগাড় করেছিল কি না, সেই প্রশ্ন শুনানির সময় তুলেছিলেন বিচারপতি দত্ত।
বিচারপতি দত্ত আদালতে এও জানান, নিম্ন আদালত যখন পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পায়নি, তখন তপন দত্তের খুনের আসলে কারা জড়িত, তার সঠিক তদন্ত করে জানা দরকার। সেই কারণেই মামলাটি তিনি শুনতে চান বলে জানান বিচারপতি দত্ত। পাঁচ অভিযুক্তের বেসকুর মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যে হাইকোর্টে আপিল মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার। খুনের ঘটনার আরও তদন্ত চেয়ে কিছু দিন আগে তপনবাবুর মেয়েও হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। সেই প্রেক্ষিতেই বিচারপতি দত্ত এ দিন সিবিআই তদন্ত চেয়ে দায়ের করা মামলাটি ডিভিশন বেঞ্চে পাঠিয়েছেন বলে মনে করছেন হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ।
এ দিন তপনবাবুর স্ত্রী প্রতিমাদেবী বলেন, ‘‘সিবিআই তদন্ত চেয়ে ২০১২ সালে মামলা করেছিলাম। সেই মামলার রায় ঘোষণা না হয়ে ডিভিশন বেঞ্চে চলে গেল। আমি প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়ে বলব, ডিভিশন বেঞ্চ যেন মামলাটির রায় রায় দ্রুত ঘোষণা করে।’’