প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কংগ্রেস নেত্রী। ছবি: পিটিআই।
কয়লা-কাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়লেও দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের পাশে আগাগোড়া থেকেছে কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার মনমোহনের পাশে থাকার সেই বার্তাই আরও জোড়ালো করল কংগ্রেস। মনমোহনকে আদালতের সমন পাঠানোর প্রতিবাদে এ দিন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে একটি মিছিল দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর কার্যালয় ২৪ নম্বর আকবর রোড থেকে ৩ নম্বর মতিঝিল নেহরু মার্গে মনমোহন সিংহের বাসভবন পর্যন্ত পৌঁছায়। মিছিলে ছিলেন সাংসদ, বিধায়ক-সহ কংগ্রেসের প্রথম সারির একাধিক নেতা। পরে সনিয়া সাংবাদিককের উদ্দেশে বলেন, “মনমোহনের সততায় সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে দলের। তিনি রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছেন।” প্রয়োজনে কংগ্রেস যে আইনি পথেও যেতে পারে তা-ও জানান তিনি। তবে সনিয়ার এই পাশে থাকার বার্তাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়নমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, “আদপে এই দুর্নীতির পিছনে কংগ্রেসই দায়ী। সে জন্যই অভিযুক্তের পাশে থাকতে মিছিল।”
২০০৫ সালে কয়লা মন্ত্রকে ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে হিন্দালকোকে নিয়ম বিরুদ্ধ ভাবে ওড়িশার একটি কয়লা খনি পাইয়ে দেওয়ায় ক্ষেত্রে মনমোহন বাড়তি সক্রিয়তা দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১২ সালে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) রিপোর্টে জানায়, নিলাম না করে খনি বণ্টনের জেরে কেন্দ্রের ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। ঘটনার তদন্তে নামে সিবিআই। ২১৪টি কয়লাখনির বণ্টন বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওড়িশার ওই খনিটি বণ্টনের দুর্নীতিতে প্রথমে ২০১৩ সালে প্রাক্তন কয়লাসচিব পি সি পরাখ এবং কুমারমঙ্গলম বিড়লার নামে সিবিআই এফআইআর করে। পরে এই দুর্নীতিতে নাম জড়ায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ-সহ ছ’জনের। বিশ্বাসভঙ্গ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং দুর্নীতি দমন আইনে মনমোহনকে অভিযুক্ত করা হয়। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা বারবার এই তদন্ত বন্ধের আর্জি জানালেও দেশের শীর্ষ আদালত তা মেনে নেয়নি। উপরন্তু এই ছয় অভিযুক্তকেই আগামী ৮ এপ্রিল আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়ে সমন পাঠায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত।
আদালতের সমন পেয়ে ‘হতাশা’ প্রকাশ করেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন। দুর্নীতি মুক্ত এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রতীক হিসাবে যাঁর পরিচিতই ছিল বেশি। তবে সমন পেয়েও সততা প্রমাণের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস বহাল রেখেছিলেন তিনি। তার উপরে এ দিন কংগ্রেসের তরফ থেকে পাশে থাকার বার্তায় তাঁর ভরসা আরও বাড়াবে বলেই মনে করছেন রাজনীতিবিদেরা।