—ফাইল চিত্র।
ডোকরা
সোনালি ধাতুর সুতোয় তৈরি শিল্পকৃতি ডোকরা। বাঁকুড়া শহর-লাগোয়া বিকনায় ছোট্ট পাড়াটার নামই হয়ে গিয়েছে ‘ডোকরা গ্রাম’। ঘরে ঘরে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপালের শংসাপত্র, পুরস্কার। তাতে কষ্ট ঘোচেনি শিল্পীদের। তামা, পিতল, পিচ ও রজনের মতো কাঁচামালের দাম বেড়ে গিয়েছে অনেক গুণ। কাঁসার পুরনো বাসনও এখন সে ভাবে মেলে না। পাঁচ ইঞ্চির একটি শিল্পকৃতি তৈরি করতে ২০০ টাকার খরচ, সঙ্গে পরিশ্রম। কিন্তু ব্যবসায়ী তা ৩০০ টাকা দরে কেনেন। সেই জিনিসই বাজারে ৫০০-৬০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। শিল্পী ধীরেন কর্মকার, শৈলেন কর্মকারদের আক্ষেপ, ‘‘ক্রেতারা শিল্পের বেশি দাম দিতে চাইছেন না।’’
টেরাকোটা
পাঁচমুড়ার টেরাকোটার কাজের
ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।
পোড়ামাটির কাজ এ রাজ্যের ‘লোগো’ হয়ে গিয়েছে বলা চলে। তার আঁতুড় ঘর তালড্যাংরার পাঁচমুড়া। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহর থেকে এই গ্রামে গেলে ঘরে ঘরে মিলবে কান-খাড়া পোড়া মাটির ঘোড়া থেকে ঘর সাজানোর টাইলস। শিল্পী ভূতনাথ কুম্ভকার ও কাঞ্চন কুম্ভকার বলেন, ‘‘কলকাতার অনেক জায়গায় পোড়ামাটির কাজ শুরু হয়েছে। তারা কম দামে বাজারে জিনিস ছেড়ে পাঁচমুড়ার নাম করে বিক্রি করছে।’’ তাঁরা জানান, পাঁচ ফুটের একটি ঘোড়া বিক্রি করে শিল্পীর ঘরে ২০০০-২৫০০ টাকা আসে। কিন্তু সেই ঘোড়াই ব্যবসায়ী ৬০০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। পুজোর সময় মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরির বাজারেও এখন ভাটার টান। বাধ্য হয়ে শিল্পীদের অনেককে হাত লাগাতে হচ্ছে অন্য কাজেও।
ছো-নাচের মুখোশ
ছবি: সুজিত মাহাতো।
পুরুলিয়ার অনেক গ্রামে ছো-নাচের মুখোশ তৈরি হলেও, এই শিল্পের পীঠস্থান চড়িদা গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা সূত্রধর সম্প্রদায়ের মানুষজন বংশপরম্পরায় মুখোশ তৈরি করেন। তাঁরা বলেন, বিখ্যাত শিল্পীদের কাজ ভাল দামে দেশে-বিদেশে বিক্রি হয়। তবে বেশির ভাগ শিল্পীর কাজ তেমন বিপণন পায় না। প্রতিটি মুখোশ তৈরি করতে একদিনের পরিশ্রম। অথচ গৃহসজ্জার মুখোশ বিক্রি করে ১০০-১০০০ টাকার বেশি শিল্পী পান না। আবার সেই মুখোশই দোকানে বিক্রি হয় ৩০০-২০০০ টাকা দামে। জেলা প্রশাসন (ওয়েবসাইট: www.egraminhaat.com) অবশ্য সম্প্রতি ইন্টারনেটে মুখোশ বিক্রির ব্যবস্থা করেছে।
মুখা (কাঠের মুখোশ)
মহিষবাথানে মুখা তৈরির
ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।
দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি ব্লকের মহিষবাথানের মুখা শিল্প বিখ্যাত। এ রাজ্যের তো বটেই, দেশে, এমনকী বিদেশেও ঘর সাজানোর কাজে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এই কাঠের মুখোশের। একটি ভাল মুখোশ তৈরিতে সময় লাগে দিন তিনেক। মহিষবাথানের মুখা শিল্পীদের সংগঠনের সম্পাদক পরেশ সরকার জানান, এক একটি ভাল মুখোশ অন্তত ২৫০০-৩০০০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হয়। তবে শিল্পীরা দিনে ৫০০-৬০০ টাকার বেশি পাননা।
মাটির পুতুল
ঘূর্ণির মাটির পুতুলের ছবি সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা।
নদিয়ার ঘূর্ণির মাটির পুতুলের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। ঘূর্ণির পাশ দিয়ে বয়ে-চলা জলঙ্গির মাটি দিয়ে অসামান্য দক্ষতায় ঘূর্ণির মৃৎশিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন চাষি, সাপুড়ে, কামার, কুমোর থেকে জমিদার, বাউল, ডাক হরকরার মূর্তি। মাটির তৈরি মশলা, আম, সুপারি, এলাচ, লবঙ্গ দেখে সত্যি বলে ভুল করেন দেশ-বিদেশের মানুষ। ঘূর্ণির রাম পালের হাতের কাজ ১৮৫১ সালে লন্ডনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে পাড়ি দেয়। তারপর থেকে আট প্রজন্ম ধরে ঘূর্ণির শিল্পীরা সারা বিশ্বের সম্মান কুড়িয়েছেন। কিন্তু আজ আর পুতুলের তেমন বাজার নেই। নতুন প্রজন্ম আর এ দিকে ঝুঁকতে রাজি নয়। ঘূর্ণির মৃৎশিল্প আর কত দিন টিকে থাকবে, প্রশ্ন সেটাই।