আমআদমি-র সভায় আত্মহত্যা কৃষকের

কৃষক বঞ্চনা এবং কেন্দ্রের জমি বিলের প্রতিবাদ সভায় এসেছিলেন তিনি। কিন্তু, শেষে সেই সভামঞ্চের পাশের একটি গাছে গলায় গামছা দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করলেন। এর জেরে উত্তাল হয়ে উঠল রাজধানী-সহ গোটা দেশ। পেশায় তিনিও কৃষক। নাম গজেন্দ্র সিংহ রাজপুত। বয়স ৪১। অতি সাধারণ এই মানুষটি রাজস্থানের দওসা জেলার বাসিন্দা। ঘটনাচক্রে বুধবার বিকেলে দিল্লির যন্তরমন্তরে যে সভামঞ্চ লাগোয়া গাছে তিনি ঝুলে পড়েন, সেই মঞ্চটি আদতে আম আদমি পার্টির (আপ)। সেখানে তখন উপস্থিত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ আপ-এর একাধিক নেতা এবং শ’য়ে শ’য়ে কর্মী। গাছ থেকে নামিয়ে গজেন্দ্রকে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ। চিকিত্সকেরা জানিয়ে দেন, তাঁকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। গজেন্দ্রর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ১৭:৪২
Share:

নামিয়ে আনা হচ্ছে গজেন্দ্রকে। ছবি: পিটিআই।

কৃষক বঞ্চনা এবং কেন্দ্রের জমি বিলের প্রতিবাদ সভায় এসেছিলেন তিনি। কিন্তু, শেষে সেই সভামঞ্চের পাশের একটি গাছে গলায় গামছা দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করলেন। এর জেরে উত্তাল হয়ে উঠল রাজধানী-সহ গোটা দেশ।

Advertisement

পেশায় তিনিও কৃষক। নাম গজেন্দ্র সিংহ রাজপুত। বয়স ৪১। অতি সাধারণ এই মানুষটি রাজস্থানের দওসা জেলার বাসিন্দা। ঘটনাচক্রে বুধবার বিকেলে দিল্লির যন্তরমন্তরে যে সভামঞ্চ লাগোয়া গাছে তিনি ঝুলে পড়েন, সেই মঞ্চটি আদতে আম আদমি পার্টির (আপ)। সেখানে তখন উপস্থিত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ আপ-এর একাধিক নেতা এবং শ’য়ে শ’য়ে কর্মী। গাছ থেকে নামিয়ে গজেন্দ্রকে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ। চিকিত্সকেরা জানিয়ে দেন, তাঁকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। গজেন্দ্রর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দিল্লির উপ-রাজ্যপাল এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। জয়েন্ট কমিশনার পদমর্যাদার এক জন অফিসারকে দিয়ে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যে হেতু রাজস্থানও বিজেপি শাসিত, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। গজেন্দ্রর দেহ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সব রকম তত্পরতা দেখাচ্ছে বিজেপি।

কী হয়েছিল এ দিন?

Advertisement

দুপুর দু’টো নাগাদ ওই মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছিলেন আপ নেতা কুমার বিশ্বাস। কেন্দ্রের জমি বিল এবং কৃষক বঞ্চনার বিরুদ্ধেই ছিল আপ-এর এই প্রতিবাদ সভা। আচমকাই মঞ্চের কাছে একটি গাছে উঠতে দেখা যায় মাথায় পাগড়ি পরা এক যুবককে। তাঁর এক হাতে ধরা আপ-এর প্রতীক আস্ত একটি ঝাড়ু। গাছে উঠেই গলায় ঝোলানো গামছার সঙ্গে গলা পেঁচিয়ে ঝুলে পড়েন মোটা ডালের সঙ্গে। কিন্তু, তখনও তাঁর দু’হাত ধরে ছিল সেই মোটা ডালটি। আচমকাই সেখান থেকে ঝুলে পড়লেন ওই যুবক। আর গোটা ঘটনাটা ক্যামেরাবন্দি হয়ে সম্প্রচারিত হল টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে। ওই যুবকের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে— ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। দয়া করে আমাকে বলুন, আমি কী করে বাড়ি ফিরব!


তখনও বেঁচে গজেন্দ্র। ছবি: পিটিআই।

তবে গজেন্দ্রর আত্মহত্যা নিয়ে এ দিন আপ নেতৃত্বকে বিঁধেছে কংগ্রেস এবং বিজেপি। এক জন মানুষ গাছে চড়ে আত্মহত্যা করলেন, সেই সময় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে সভা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেন উঠেছে সেই প্রশ্ন। কংগ্রেস নেতা সচিন পায়লট বলেন, ‘‘একটু আগে সচেষ্ট হলে ওই যুবককে বাঁচানো যেত। প্রকাশ্যে এক জন আত্মহত্যা করলেন, তার পরও সেখানে সভা চলল, এটা লজ্জাজনক!’’ কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন জানান, আয়োজকদের আরও সমব্যথী এবং দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল। পুলিশকেও তিনি এই ঘটনায় এক হাত নিয়েছেন। মাকেনের পাশাপাশি ওই কৃষকের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে যান রাহুল গাঁধী। গত কয়েক দিন ধরেই কৃষকের অধিকার নিয়ে সরব তিনি। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। আমরা কৃষকদের পাশে আছি। তাঁদের সম্পূর্ণ ভাবে সাহায্য করব।’’

বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এক জনের জীবনের থেকে কি রাজনীতি আরও গুরুত্বপূর্ণ?’’ যা শুনে আপ নেতা সঞ্জয় সিংহের মন্তব্য: ‘‘বিজেপি-র কাছ থেকে আমাদের স্পর্শকাতরতার পাঠ নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।’’ তবে গজেন্দ্রর মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই দিল্লি পুলিশের দিকে আঙুল তুলেছেন খোদ কেজরীবাল। তাঁর দাবি, যখন ওই যুবক গাছে চড়ছিলেন, তখন থেকেই তাঁকে নামিয়ে নিয়ে আসার জন্য পুলিশকে বার বার অনুরোধ করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে না-ই থাকতে পারে। তবে, তাদের ন্যুনতম মানবিকতা থাকা উচিত!’’ তিনি তাঁর সহকর্মী মণীশ সিসৌদিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে যান।

সেই সুইসাইড নোট।

আপ নেতা কুমার বিশ্বাস সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘পুলিশকে বার বার অনুরোধ করে কাজ না হওয়ায় আমাদের কর্মকর্তাদের বিষয়টা দেখতে বলি। তাঁরাই ওই যুবকের দেহ নামিয়ে আনেন। এর পর তাঁরাই ওঁকে নিয়ে হাসপাতালে যান।’’ গোটা ঘটনায় কেজরীবালের সমালোচনা শুরু হওয়ায় আপ নেতা আশুতোষ বলেন, ‘‘এর পরে এ রকম ঘটনা ঘটলে কেজরীবালই গাছে উঠবেন। তিনিই কৃষকের জীবন বাঁচাবেন।’’ আপ নেতাদের দাবি পুলিশ একটু তত্পর হলেই বাঁচানো যেত ওই যুবককে।

পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি মুকেশকুমার। অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা বলে বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। তবে, ওই যুবকের পরিচয় নিয়ে এখনও সরকারি স্তরে কিছু জানানো হয়নি। এমনকী, একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওই যুবক নাকি আত্মহত্যা করতে চাননি। কোনও ভাবে হাত পিছলে গিয়ে অঘটনটি ঘটেছে। মুকেশকুমার বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না হাতে পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। তদন্ত চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement