ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডে আদালতে মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের। মঙ্গলবার রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ মেনে অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং সুব্রত সেনগুপ্তকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ ছাড়া, মামলার খরচ মেটানোর জন্য দু’জনকেই অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। আগামী এক মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে ওই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। এরই পাশাপাশি পূর্ব যাদবপুর থানার অতিরিক্ত আইসি মিলন দাস এবং তদন্তকারী অফিসার সঞ্জয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনেশ ত্রিবেদী এবং মুকুল রায়কে নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র তাঁর আবাসনের বেশ কয়েক জন আবাসিককে পাঠিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক অম্বিকেশবাবু। মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার অভিযোগে সে রাতেই তাঁকে মারধর করা হয়। অভিযোগের আঙুল ওঠে স্থানীয় তৃণমূলকর্মীদের দিকে। অম্বিকেশবাবু এবং ওই আবাসনের সভাপতি সুব্রতবাবুকে সে রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের অতি সক্রিয়তা নিয়ে সেই সময় প্রশ্ন ওঠে। দীর্ঘ ক্ষণ থানায় বসিয়ে রাখার পর সারা রাত তাঁদের থানার লক আপে রেখে দেওয়া হয়। রাত বারোটার পর ওই দু’জনের বিরুদ্ধে মহিলাদের সম্মানহানি এবং ই-মেলে অশ্লীল ছবি পাঠানোর মামলা দায়ের হয়। পর দিন আদালতে যদিও দু’জনের জামিন মেলে।
এই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। ২০১২-র ১২ এপ্রিল রাতের সেই ঘটনার পর এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। ওই বছরের ১৩ অগস্ট কমিশনের চেয়ারম্যান অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় ওই দু’জনকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেন। ক্ষতিপূরণ ছাড়াও কমিশন ওই দুই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে রাজ্যের কাছে। যদিও সে সময় মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনাকে তাঁকে খুনের চক্রান্ত বলেই আখ্যা দিয়েছিলেন। কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করে যাদবপুর থানার দায়ের করা মামলাও চালিয়ে যায় রাজ্য। ওই বছরের ৬ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অম্বিকেশবাবু। এ দিন রায় জানার পর তাঁর মন্তব্য, “এই রায় গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার রায়।” একই সঙ্গে তাঁর আশঙ্কা, “রাজ্য প্রশাসন এই রায়কে যত ক্ষণ না কার্যকর করছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত বাড়তি খুশি হওয়ার কোনও জায়গা নেই।”