সংগৃহীত চিত্র।
একাদশ শ্রেণির প্রথম ও দ্বিতীয় সিমেস্টারের প্রশ্নপত্র তৈরি করবেন একমাত্র স্কুলের শিক্ষকরাই। শিক্ষক সংগঠন বা শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত অন্য কেউ এতে থাকবেন না। কড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
এ বছরই প্রথম একাদশ শ্রেণি থেকে শুরু হচ্ছে সিমেস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা। দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু শিক্ষক সংগঠন প্রথম সিমেস্টারের জন্য প্রশ্নপত্র তৈরি করে স্কুলগুলির কাছে বিক্রির চেষ্টা করছে। এমনই অভিযোগ শিক্ষা সংসদের কাছে জমা পড়েছে। তার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত শিক্ষা সংসদের। বিজ্ঞপ্তিতে কোনও শিক্ষক সংগঠনের নামের উল্লেখ না থাকলেও স্পষ্ট বলা আছে প্রথম সিমেস্টারের ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র তৈরি করবেন একমাত্র স্কুলের শিক্ষকরাই, অন্য কেউ নয়। এমনকি কোনও সংগঠন বা এজেন্সি থেকেও প্রশ্নপত্র কিনতে পারবে না স্কুলগুলি। এ প্রসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের কাছে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছিল যে, বেশ কিছু সংগঠন বা সংস্থা টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র বিক্রি করতে চাইছে। তাই শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। স্কুলগুলি নিজেরাই যেন নিজেদের প্রশ্ন ছাপে।”
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বক্তব্য, এ বছর সিমেস্টার পদ্ধতির প্রথম বছর। বেশ কিছু স্কুল মে মাসের মাঝখান থেকে ক্লাস শুরু করেছে। আবার কেউ জুন, কেউ জুলাই থেকে নয়া পদ্ধতিতে ক্লাস শুরু করেছে। বাইরে থেকে প্রশ্ন নিলে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নানা সমস্যা তৈরি হবে। স্কুলের শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র তৈরি করলে সিলেবাস যতটুকু পড়ানো হয়েছে, তার মধ্যে থেকেই প্রশ্ন আসবে।
কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র তৈরি করে পর্ষদ। এ বার থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ সিমেস্টারের প্রশ্নপত্র করবে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। বাকি সব প্রশ্ন প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকদের করার কথা ও তার কপি যথাক্রমে পর্ষদ ও সংসদে পাঠানোর কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কিছু কিছু শিক্ষক সংগঠন এই সব পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপিয়ে অনেক স্কুলকে বিক্রি করছে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে।”
বেশ কিছু শিক্ষক সংগঠনের বক্তব্য, কোনও শিক্ষক সংগঠন প্রশ্ন বিক্রি বা অন্য কোনও কাজ ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিক্রি করলে সংগঠনেরই মর্যাদা নষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, নিজেদের পেশাগত দায়বদ্ধতা থেকে অনেক দূরে সরে যেতে হয়।
অন্য দিকে, মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, “উচ্চমাধ্যমিকে বহু স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই। স্থানীয় আংশিক সময়ের শিক্ষক দিয়ে বিষয়গুলি পড়ানো হয়। ফলে সংসদের এই নির্দেশিকা পালন করা সব স্কুলের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।”
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক অপ্রতুলতার বিষয়টি সংসদের অজানা নয়। তাই এই ধরনের নির্দেশিকা বার করার আগে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত ছিল বলেই মনে করছে শিক্ষক মহলের এক অংশ। প্রধান শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “শিক্ষা সংসদ শুধুমাত্র আদেশনামা দিয়েই খালাস। প্রায় ৭০% গ্রামীণ বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। যদি শিক্ষকই না থাকে, তাহলে প্রশ্নটা করবে কে? পরীক্ষা পরিচালনার জন্য আর্থিক সাহায্য যেখানে শিক্ষা সংসদ করছে না, তা হলে কেন স্কুলগুলির স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে? তারা প্রশ্ন কিনবে না নিজেরা করবে, সেটা তাদের উপরেই ছেড়ে দিক না।”