সংগৃহীত চিত্র।
সুভাষচন্দ্র বসুর দুষ্প্রাপ্য চিঠি এ বার দশমের পাঠ্যবইতে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পড়ানো হবে সুভাষচন্দ্র বসুর লেখা ‘তরুণের স্বপ্ন।’ এই বইটি মাধ্যমিক স্তরে পড়ানো হলেও মূল্যায়ন ব্যবস্থার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক থাকবে না বলে পর্ষদের তরফে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। পাঠ্যক্রমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না হলে শুধু সহায়িকা বই হিসেবে বইটির গুরুত্ব অনেকটাই কমে যাবে বলে দাবি করছেন বসু পরিবারের সদস্য থেকে শিক্ষক মহলের একাংশ।
সুভাষচন্দ্র বসুর প্রপৌত্র চন্দ্রকুমার বসু বলেন, “ইদানীং তরুণ প্রজন্মের একাংশের মধ্যে বই পড়ার ঝোঁক কমে গিয়েছে। পাঠ্যসূচিতে বইটি যুক্ত করা উচিত, বিশেষত ইতিহাসে। তা না হলে এর গুরুত্ব কমে যাবে। যদিও সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।”
শিক্ষক মহলের একাংশের বক্তব্য, মাধ্যমিকের পড়ুয়ারা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সিলেবাস শেষ করবে, না আলাদা বই পড়বে? সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে আগ্রহী অল্প সংখ্যক পড়ুয়াই এই বই পড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে, শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “অত্যন্ত ভাল সিদ্ধান্ত। কিন্তু মূল্যায়ন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না মানে তার কোনও গুরুত্ব রইল না। ছাত্র-ছাত্রীরা লাইব্রেরি অথবা অন্য কোনও ভাবে তো পড়তেই পারে। কিন্তু যখন বোর্ডের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তখন পাঠ্যসূচির মধ্যে রেখে মূল্যায়ন না করলে তেমন করে এর গুরুত্ব থাকে না।”
শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, পাঠ্যসূচির অন্য কোনও অংশ কমিয়ে বিশেষত ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ শীর্ষক প্রবন্ধটির পরিবর্তে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রবন্ধটি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা যায়। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “নতুন প্রজন্মের নেতাজির সম্বন্ধে জানা অত্যন্ত জরুরি। তাই আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। এই বইটিতে তরুণ প্রজন্ম কী ভাবে আদর্শ নাগরিক হয়ে উঠবে, সে বিষয়টি উল্লেখ করা রয়েছে। পথভ্রষ্ট যুবসমাজ এই বই পড়লে তারা সত্যিকারের আলোর মুখ দেখতে পারে।”
১৫০ পাতার এই বইটি মূলত সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনকালে লেখা বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য চিঠির সংকলন। মোট ২৪টি চিঠি এই বইতে রয়েছে, যেগুলি তাঁর নিজের লেখা। এই বইতে মুদ্রিত বেশির ভাগ চিঠি তিনি জেলে বসে বিভিন্ন ব্যক্তিকে লিখেছিলেন। তালিকায় রয়েছে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, দিলীপ কুমার রায়, হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন বিশিষ্টের নাম। সংকলনে রয়েছে বসুমতি পত্রিকায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা পড়ে মুগ্ধ সুভাষের চিঠিও। এ ছাড়া নতুনের সন্ধান, ছাত্র যুব আন্দোলন সম্পর্কে বক্তৃতা-সহ নানা বিষয় তাঁর চিঠিগুলির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “বিষয় পাঠ্যসূচিতে শুধু অন্তর্ভুক্ত করলেই তার গুরুত্ব বাড়ে না। সুভাষচন্দ্র বসু মতো একজন মহানায়কের লেখা থাকবে, অথচ ছাত্রছাত্রীরা তা গুরুত্ব সহকারে পড়বে না, তার মানে তো প্রকারান্তরে নেতাজিকে অপমান করা হল। সরকার লোক দেখাতে এই লেখাকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করেছে।”