Time Management Tips

‘না’ বলতে শিখতে হবে গবেষকদের, কিন্তু কেন?

কোন কাজটা করবেন, কোনটা নয়, কোনটা আগে বা কোনটা পরে, এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গবেষকের একান্ত নিজের। কোন কাজটিকে আগে গুরুত্ব দিয়ে সম্পূর্ণ করতে হবে, সেই বিষয়টি শুরু থেকেই বিবেচনা করে নেওয়া প্রয়োজন।

Advertisement

ইন্দ্রনীল সামন্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ১২:০২
Share:

প্রতীকী চিত্র।

সময় অপেক্ষা করে না কারও জন্য— ছোটবেলা থেকে এ কথা কখনও না কখনও শুনতেই হয়েছে। কথাটা একেবারেই ভুল নয় এবং ঘড়ির কাঁটা এদিক ওদিক করেও ২৪ ঘণ্টাকে ২৬ ঘণ্টায় বদলে ফেলা সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি মিনিটকে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন।

Advertisement

তবে, যথাযথ ব্যবহার মানে আবার সারা দিন শুধু কাজই করে যাবেন, সেটাও কিন্তু নয়। একটানা কোনও কাজ একই রকম ভাবে করে চললে তার গুণগত মান বিশেষ থাকে না। পাশাপাশি, শরীর ও মনের উপরেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। খুব বেশি দিন এ ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। গবেষণা ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

কী ভাবে সময়ের সঠিক ব্যবহার করা যেতে পারে?

Advertisement

সাধারণত, গবেষণাগারে গবেষকের নিজস্ব ডেস্কের সামনে একটি ছোট ক্লিপবোর্ড বা নোটিস বোর্ড থাকে। সেখানেই কমবেশি সকলেই ‘স্টিকি নোট’-এর কাগজে কাজের খুঁটিনাটি লিখে রাখেন। সেই অনুযায়ী, প্রতিদিনের কাজের শেষে ওই কাগজেই উল্লেখ করে রাখেন, কাজটি সম্পূর্ণ হয়েছে কি না। আবার, ছোট পকেট ডায়েরি ব্যবহার করেও প্রতিদিনের কাজের তালিকা তৈরি করে রাখা যেতে পারে।

সকলেই ‘স্টিকি নোট’-এর কাগজে কাজের খুঁটিনাটি লিখে রাখেন। প্রতীকী চিত্র।

যাঁদের হাতে লিখতে সমস্যা হয়, তাঁরা মোবাইলে নোট রেখে দিতে পারেন, কিংবা ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে রাখতে পারেন। পাশাপাশি, গবেষকদের একটি অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার জাতীয় একটা নথি দেওয়া হয়। সেখানেই আসন্ন সেমিনার কিংবা পরীক্ষার তারিখ লিপিবদ্ধ থাকে। প্রয়োজনে ওই তালিকাও ডেস্কের সামনে রেখে দেওয়া যেতে পারে, যাতে কোনও কাজ বাদ না যায়।

‘না’ বলতে শিখতে হবে!

‘না’ বলতে শিখুন। কোন কাজটা করবেন, কোনটা নয়, কোনটা আগে বা কোনটা পরে— এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গবেষকের একান্ত নিজের। কোন কাজটিকে আগে গুরুত্ব দিয়ে সম্পূর্ণ করতে হবে, সেই বিষয়টি শুরু থেকেই বিবেচনা করে নেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হলেও পিছিয়ে এলে চলবে না। কারণ যথাযথ সময় দিতে পারলে কাজের গুণগত মান যেমন বজায় থাকবে, তেমনই মানসিক টানাপোড়েনও কম হবে।

প্রযুক্তির ব্যবহার:

প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার জানলে সময়ের মধ্যে অনেক কাজ সম্পূর্ণ করা যেতে পারে। এর জন্য বন্ধু/ ল্যাবমেট / রুমমেটদের সঙ্গে প্রয়োজনে আলোচনা করে নিতে পারেন যে, কোন সফট্অয়্যার কী ভাবে কাজের গতি বৃদ্ধি করতে পারে।

এন্ডনোট-এর সাহায্যে রিসার্চ পেপারের রেফারেন্স সাজানো যেতে পারে। দ্রুত রিসার্চ পেপার খুঁজে পেতে হলে সায়েন্স ডাইরেক্ট বা পাবমেড বা গুগল স্কলার— এর মধ্যে যে কোনও একটি ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে রিসার্চ পেপার সংক্রান্ত প্রচ্ছদ কৃত্রিম মেধা দ্বারা পরিচালিত কিছু টুলেও লেখার সুযোগ রয়েছে। তবে, এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে ভুল তথ্যও মেলে। ভাল জার্নাল হলে বিভিন্ন সংস্থা সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধার ব্যবহার হয়েছে কি না, তা জানতে চায়।

মাল্টিটাস্কিং বিষয়টি ভাল, যদি কাজের গুণগত মান ভাল হয়। প্রতীকী চিত্র।

মাল্টিটাস্কিং:

মাল্টিটাস্কিং বিষয়টি ভাল, যদি কাজের গুণগত মান ভাল হয়। নচেৎ এই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সময় নষ্ট না করাই ভাল। গবেষণার কাজ অর্থাৎ এক্সপেরিমেন্ট চলাকালীন পেপার-এর ‘মেটিরিয়ালস ও মেথড’ বিভাগটি লিখে নেওয়া যেতে পারে। এতে যেমন সময় বাঁচে, তেমনই খুঁটিনাটি বিষয়গুলি সাজিয়ে লেখা যায়, যেহেতু তখনও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ চলছে।

ডেডলাইন:

‘এ গোল ইজ এ ড্রিম উইথ এ ডেডলাইন’।

ডেডলাইন শব্দটি কিছু চাকরির ক্ষেত্রে আতঙ্কের কারণ। গবেষণার ক্ষেত্রেও কিছু নির্দিষ্ট ডেডলাইন মেনে চলতেই হয়। সে ক্ষেত্রে আসন্ন ডেডলাইনের আগে অল্প অল্প করে কাজ সেরে রাখলে শেষ মুহূর্তে গিয়ে খুব বেশি অসুবিধা হয় না।

নতুন অভ্যাস তৈরির প্রয়োজন নেই:

প্রতিটা কাজের ক্ষেত্রে সমান কর্মশক্তি বা মনোসংযোগের প্রয়োজন হয় না। নিজের দৈনন্দিন অভ্যাসের ভিত্তিতে রুটিন তৈরি করে নিতে হবে। যদি ভোরে ওঠার অভ্যাস থাকে, তবে সকালে জরুরি লেখালেখির জন্য সময় রাখবেন। যেমন, এ ক্ষেত্রে রিসার্চ পেপার বা নতুন কোনও গ্রান্ট প্রপোজ়াল লেখা। আর যদি রাত জাগতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সে ক্ষেত্রে ওই সময় অনুযায়ী, কাজের ছক কষে নেবেন।

সময় অপেক্ষা করে না কারও জন্য। প্রতীকী চিত্র।

আত্মসমীক্ষা:

‘টাইম অডিট’— কাজের ক্ষেত্রে আত্মসমীক্ষা করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। দিনের শেষে স্ক্র্যাপবুকে বা ডায়েরিতে লিখে রাখা যেতে পারে, যে কী ভাবে সারা দিন কোন কোন কাজে কতটা সময় ব্যয় করেছেন। কোনটা কাজটা বেশি জরুরি আর কোনটা এখন না করলেও চলবে, সেই বিষয়গুলি নির্দিষ্ট করে নিতে পারলেই সময় বাঁচানোর রাস্তায় আপনা থেকেই চলতে শুরু করবেন।

তবে, এত নিয়মকানুন মানতে গিয়ে মনে হতে পারে কোথাও গিয়ে যন্ত্রের মতো কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টা তেমন নয়। প্রতিযোগিতার মাঝে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হলে এবং নিজেকে আলাদা করে সময় দিতে হলে এই নিয়মগুলি মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাতে কাজটা যেমন ভাল হবে, গবেষক নিজেও ভাল থাকতে পারবেন।

[লেখক পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান]

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement