৭০ জনকে নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
স্বনির্ভর হওয়ার প্রয়োজনীয়তা শেখাতে বিশেষ উদ্যোগ। বাড়িতে বসেই গার্ডেনিং কিংবা নার্সারি ম্যানেজমেন্টের কাজ শিখে আয় করার সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তিন দিনের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে এই বিষয়গুলি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। উদ্যোক্তা ছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন স্টাডিজ় বিভাগ এবং সেন্টার অফ ফ্লোরিকালচার অ্যান্ড এগ্রিবিজ়নেস ম্যানেজমেন্ট (কোফাম)-এর অধ্যাপক এবং আধিকারিকরা।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার দেবাশীষ দত্ত উপস্থিত ছিলেন। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বার্তা দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের কর্মসূচি হওয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র ডিগ্রি অর্জনই নয়, কাজের ক্ষেত্রে আগ্রহীদের সহায়তাও একই ভাবে প্রয়োজন। পরবর্তীকালে যাতে বিভিন্ন সংস্থায় প্রশিক্ষিতদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে, সেই বিষয়টিও বিবেচনার আশ্বাসও দিয়েছেন রেজিস্ট্রার।
প্রশিক্ষণের প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার-সহ উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। নিজস্ব চিত্র।
উইমেন স্টাডিজ় বিভাগের প্রধান ডালিয়া ভট্টাচার্য এবং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বীথিকামণি দত্তের উদ্যোগেই এই কর্মসূচির মূল ভাবনা বাস্তবায়িত হয়েছে। বিভাগীয় প্রধান জানিয়েছেন, মাটিগাড়া, ফাঁসিদেওয়া, নকশালবাড়ি এবং লাগোয়া অন্যান্য গ্রাম এবং চা বাগানের মহিলাদের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ। প্রথম বারেই ৩০ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। এর জন্য তাঁদের সঙ্গে আগে প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিয়ে সরাসরি আলোচনাও করা হয়েছিল।
ডালিয়া ভট্টাচার্য আরও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নারীদের স্বনির্ভর হওয়া এবং আর্থিক স্বাধীনতা থাকা ভীষন ভাবে প্রয়োজন। শুধু ডিগ্রি অর্জন করলেই হবে না, পরনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসাও একই ভাবে দরকার। সেই ভাবনা থেকেই স্বনির্ভর হওয়ার বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া।”
কোফাম-এর প্র্যাকটিক্যাল ডেমনস্ট্রেটর অমরেন্দ্রকুমার পাণ্ডে জানিয়েছেন, আবহাওয়া এবং পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্ট্রবেরি, ড্র্যাগনফ্রুট, মাশরুম চাষ, ফুল ডাই করা,কাচের বোতলে গাছের প্রতিপালন, বীজ সংরক্ষণ, নার্সারি ম্যানেজমেন্ট, ফুড প্রসেসিং, রান্নাঘরে পুষ্টিকর সবজি চাষের (কিচেন গার্ডেনিং) মতো বিষয়গুলি হাতেকলমে শেখানো হয়েছে। উইমেন স্টাডিজ় বিভাগের ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের পাশাপাশি, কোফাম-এর প্রাক্তনীরাও ক্লাস করিয়েছেন। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০-এর কাছাকাছি।
সমস্ত অংশগ্রহণকারীর হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়। নিজস্ব চিত্র।
তৃতীয় দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সমস্ত অংশগ্রহণকারীর হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ কতটা কার্যকরী হল, তা পর্যালোচনা করতে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে আরও এক বার যোগাযোগ করা হবে। একই সঙ্গে কোফাম এবং উইমেন স্টাডিজ় বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে স্বনির্ভরতার পাঠ পড়াতে আরও কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনে যোগাযোগও করা হবে।
আয়োজকদের মতে, নারীদের জীবনে এই ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যকরী প্রভাব ফেলতে চলেছে। কারণ এই প্রশিক্ষণ শিবিরে বিএসএফ জওয়ান, জওয়ানদের স্ত্রীরাও ক্লাস করেছেন, এবং বাকিদের সঙ্গে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পড়ুয়ারাও নিজেদের মতো করে এই তিন দিনের কর্মসূচিতে যোগদান করেছেন।