লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ। নিজস্ব চিত্র।
ভাষার মধ্যেই থেকে যায় যে কোনও সভ্যতার ইতিহাস, শিল্প ও সংস্কৃতি। কালের নিয়মে বহু স্থানীয় ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে আর তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্প-সংস্কৃতিও প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই হারিয়ে যাওয়া ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করতে চায় লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ। কিন্তু কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেও টাকা পাচ্ছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের আগস্ট। এই গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন শিক্ষিকা অর্পিতা ভট্টাচার্য, যাঁর নেতৃত্বে হারিয়ে যাওয়া বাংলা ভাষার গবেষণার কাজটি পরিকল্পিত করা হয়েছে।
বর্তমানে এই সেন্টারের অন্যতম গবেষণার বিষয় হল ‘নো দাই রিজিয়ন’। এই গবেষণার মাধ্যমে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি, লোকশিল্প, মেলা, মন্দির, মসজিদের ইতিহাস ও লোক সঙ্গীতের সঙ্গে স্থানীয় ভাষার যোগকে মানুষের সামনে তুলে ধরা ও সংরক্ষণ করা।
বাংলা বিভাগের সহকারি শিক্ষিকা অর্পিতা ভট্টাচার্য বলেন, “সেন্টার যেহেতু রবীন্দ্রনাথের নামে, তাঁর লেখায় যে আলোর রেখা পাওয়া গিয়েছিল বাংলাকে চেনার, তা এই গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরা আমাদের কাজ। কিন্তু কোনও ভাবেই অর্থের যোগান না হওয়ায় থমকে রয়েছে গবেষণা।”
এই গবেষণার কাজের জন্য ৬ জন গবেষক লাগবে এবং গবেষণা করতে সময় লাগবে প্রায় পাঁচ বছর। এই গবেষণার কাজের সম্ভাব্য খরচ প্রায় এক কোটি টাকা। রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টার এখনও পর্যন্ত তিনটি জার্নাল ও একটি বই প্রকাশ করেছে ‘মুক্ত কর ভয়’ নামে।
পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে যে স্থানীয় ভাষাগুলি সঙ্কটাপন্ন বা বেশ কিছু ভাষা আছে যা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন সেগুলি হল, কুড়মালি, বীরহোড়, কোড়া, কুরুখ, সাদরি, মালতো, লিম্বু, রাভা, থারু, হাজং, জলদা, কয়া, ধুলিয়া, শবর, টোটো ও রাউতিয়া, মগর। এ ছাড়াও রাজবংশী ভাষারও কিছু অংশ।
এই গবেষণার কাজকরা হবে মূলত উত্তরবঙ্গের কোচবিহার,জলপাইগুড়ি ও দুই দিনাজপুরে। এ ছাড়াও বাংলার বাঁকুড়া পুরুলিয়া,বীরভূম ও ঝাড়গ্রামে। বাংলার মাটি থেকে বাংলার স্থানীয় ভাষা পুরোপুরি বিলুপ্তি হওয়ার আগে সেই ভাষার সংরক্ষণ ও গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করছেন রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টারে সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা।