পাঠ্যবইয়ের বাইরেও শিখে নিতে হবে বেশ কিছু কাজ। প্রতীকী ছবি।
গত কয়েক বছরে পড়াশোনার ধরনে বেশ কিছু রদবদল ঘটেছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়ারা এখন পড়াশোনার সঙ্গে আগে থেকেই বাড়িয়ে রাখতে পারেন নিজের পেশাগত দক্ষতা। কী ভাবে পড়ুয়ারা নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারেন? কী ধরণের কোর্স করলে পড়ুয়ারা আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারবেন? আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে রইল এমন কিছু কোর্সের খোঁজ, যা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের পেশাদার জীবনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনেকটাই আগে এগিয়ে রাখবে।
বৃত্তিমূলক কোর্স
প্রযুক্তিবিদ্যার আধুনিকীকরণ পড়ুয়াদের এক দিকে যেমন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে তুলছে, তেমনই গতানুগতিক বিষয়ের বাইরেও বিকল্প পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। কারণ এখন শুধুমাত্র কম্পিউটারের সাধারণ জ্ঞান থাকাটাই পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, রন্ধনশিল্প, ডিজিটাল ফটোগ্রাফি, ফ্যাশন ডিজাইনিং এবং অন্দর সজ্জার মতো বিষয়গুলিকেও বৃত্তিমূলক কোর্স হিসেবে পড়ানো হয়ে থাকে।
কারা করতে পারবেন এই কোর্স?
সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি, স্বীকৃত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩ থেকে ৬ মাসের কোর্সগুলির শেষে হাতেকলমে কাজ করার সুযোগও পেতে পারেন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়ারা। তাই তথাকথিত পড়াশোনার বিষয়ের বাইরে এই ধরণের বিষয়গুলি নিয়ে চর্চা থাকলে পরবর্তী কালে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
বিদেশি ভাষার চর্চা
বিদেশি ভাষার চর্চা যে কোনও বিদেশি ভাষার চর্চা পড়ুয়াদের নানা রকম ভাবে দক্ষতা বাড়াতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইংরেজি ভাষার রকমফের রয়েছে। আমেরিকায় যে ধরণের ইংরেজি শব্দ ব্যবহার হয়, তার সঙ্গে ইংল্যান্ডের ভাষার ব্যকরণের অনেকটাই তফাৎ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই দুই ধরনের ইংরেজির জ্ঞান যদি শুরু থেকেই পড়ুয়ারা অর্জন করে নিতে পারেন, আগামীতে আন্তর্জাতিক পরীক্ষাগুলির ক্ষেত্রে তাঁরা এগিয়ে থাকবেন। শুধু মাত্র ইংরেজিই নয়, ফরাসি, স্প্যানিশ, ম্যান্ডারিন, জার্মান, জাপানির মতো ভাষার চর্চাও বিশেষ ক্ষেত্রে চাকরির দরজা খুলে দেয়। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র দেশের মধ্যেই নয়, বিদেশেও কাজ করার মত সুযোগ পেতে পারেন পড়ুয়ারা।
কারা করতে পারবেন এই কোর্স?
সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি, স্বীকৃত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়ারা ৬ মাসের এই বিশেষ কোর্স করে নিতে পারেন।
শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী কোর্স
এই রাজ্যে বর্তমানে ছোট, মাঝারি, বড় শিল্প-সহ কর্পোরেট ক্ষেত্রগুলিতে বিভিন্ন ধরণের দক্ষ পেশাদারের চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনও কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছে থাকলে পড়ুয়াদের সেই ধরনের কাজে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সাধারণত পড়ুয়াদের জন্য প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ডেটা অ্যানাসিলিস, ভিডিও এডিটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের সার্টিফিকেশনের কোর্স করা বেশ সহজ। কম সময়ে শংসাপত্র পেয়ে হাতেকলমে কাজ করে নেওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁরা অর্জন করে নিতে পারবেন।
কারা করতে পারবেন এই কোর্স?
সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্বীকৃত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়ারা ৩ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত যে কোনও সময়সীমার এই বিশেষ কোর্স করে নিতে পারেন।
পেশাদার কোর্স
বহু পড়ুয়াই একটি বিশেষ পেশার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে ওই বিশেষ পেশায় কাজ করার ক্ষেত্রে কী কী কাজে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, কী কী কোর্স করলে ওই পেশায় প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যেতে পারে, সেই বিষয়গুলি মাথায় রাখার প্রয়োজন রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে চার্টাড অ্যাকাউন্টেন্ট হওয়ার জন্য কমার্স বিভাগের পড়ুয়াদের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ নম্বর রাখতে হবে উচ্চ মাধ্যমিকে। এছাড়াও স্নাতক স্তরেও কমার্স কিংবা অন্যান্য বিভাগেও ন্যূনতম ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এর পর তাঁদের ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া দ্বারা পরিচালিত কোর্সের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তবেই সিএ পদে চাকরির সুযোগ পাবেন পড়ুয়ারা। তাই যে পেশায় প্রবেশের ইচ্ছে রয়েছে, সেই বিষয় নিয়ে পড়ার পাশাপাশি, পেশাদার কোর্সের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াও প্রয়োজন।
কারা করতে পারবেন এই কোর্স?
যে প্রতিষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়ারা এই বিশেষ কোর্স করে নিতে পারেন।
মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে, ভবিষ্যতে স্নাতক স্তরে বা চাকরির ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পাওয়ার সময় কিছুটা হলেও পিছিয়ে থাকবেন । তাই পড়াশোনার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক কোর্সে শিক্ষার্থীরা যদি নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে থাকেন, তাহলেই তাঁদের জন্য আগামীর পথ সুগম হয়ে উঠবে।