পর পর তিন বছর সমগ্র শিক্ষা মিশনের কেন্দ্রের বরাদ্দের টাকা পেল না রাজ্য। চলতি অর্থবর্ষে ২ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার কথা বাংলার, কিন্তু অনুমোদনই দেয়নি কেন্দ্র। সম্প্রতি প্রাপ্য টাকার দাবিতে দিল্লিতে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা। তবে তাঁদের ফিরতে হল খালি হাতেই।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার বিগত কয়েক বছর ধরে বৈষম্যমূলক আচরণ করে যাচ্ছে। যা অগণতান্ত্রিক এবং স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের পরিচয়। বাংলায় ভোটে জিততে পারছে না বলে এই প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা আটকে রাখছে। ভোটে হারজিত থাকতেই পারে। কিন্তু এ রাজ্যের শিশুরা ভারতেরও শিশু। তাদের এ ভাবে বঞ্চিত করার কোনও অধিকার নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। অবিলম্বে এই টাকা দিয়ে দেওয়া উচিত।’’
অন্যদিকে, কেন্দ্রের দাবি, সমগ্র শিক্ষা মিশনের সঙ্গে ‘পিএমশ্রী’ প্রকল্পকে যুক্ত করলেই মিলবে এই অর্থ, যার বিরোধিতা করেছে বাংলা। সম্প্রতি বাংলা থেকে শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা গিয়েছিলেন দিল্লিতে। টাকা পাওয়ার দাবিতে ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব, শিক্ষাসচিব ও শিক্ষামন্ত্রী বেশ কয়েক বার চিঠিও দিয়েছেন দিল্লিতে। তাতেও কোনও লাভ হয়নি। কেন্দ্রের বক্তব্য, যত ক্ষণ না সমগ্র শিক্ষা মিশনের সঙ্গে ‘পিএমশ্রী’ প্রকল্প যুক্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ কেন্দ্রের তরফে বাংলা কোনও টাকা পাবে না।
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘রাজনৈতিক টানাপড়েনে সাধারণ ঘরের সন্তানেরা বঞ্চিত হবে। জনগণের অর্থ নিয়ে নাম কেনার রাজনীতি চলছে। ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই। রাজনৈতিক টানাপড়েনের জেরে কোনও ভাবেই যাতে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত না হয়, তার দাবি জানাচ্ছি।’’
২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সমগ্র শিক্ষা মিশন খাতে রাজ্যের পাওনা ছিল ১৬৩২ কোটি টাকা। তার মধ্যে রাজ্য পেয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১৬৩২ কোটি টাকার মধ্যে কোনও টাকাই পায়নি বাংলা। আর চলতি অর্থবর্ষে ২ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার কথা রাজ্যের। যা এখনও পাওয়া যায়নি। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত। সেখানে যে কোনও প্রকল্পের খাতে কেন্দ্র ও রাজ্যের অনুপাত ৬০:৪০। রাজ্যের যুক্তি, প্রকল্পে যে হেতু ৪০ শতাংশ অর্থ রাজ্য দেয়, সেখানে তার নাম কেন প্রধানমন্ত্রীর নামে রাখা হবে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারের অনমনীয় মনোভাবের জন্য প্রতি বছর রাজ্য হাজার হাজার কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে সার্বিক ভাবে শিক্ষা পরিকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে।’’
সমগ্র শিক্ষা মিশনের টাকায় মূলত স্কুলের পরিকাঠামোগত কাজগুলি হয়। মিড ডে মিল-এর খরচও বহন করা হয় এই টাকায়। দীর্ঘ দিন টাকা না পাওয়ার জন্য মিড ডে মিলের খাবারের মানও খারাপ হচ্ছে বলে মনে করছে শিক্ষা মহলের একাংশ। কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-র সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘টাকা না পাওয়ার কারণে খুব সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আটকানোর কারণ জেনে তা মিটিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।’’
সমগ্র শিক্ষা মিশনের এই টাকা প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারি স্কুলে পড়ুয়াদের পোশাক-জুতো তৈরিতেও খরচ করা হয়। দীর্ঘ দিন টাকা না পাওয়ার কারণে পড়ুয়াদের পোশাক-জুতো বানানোর মান খারাপ হচ্ছে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।