পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় স্মৃতিশক্তি কী ভাবে বাড়াতে পারেন? সংগৃহীত ছবি
স্কুল-কলেজের পরীক্ষা তো সামনেই! এখন আর স্মার্টফোনে মগ্ন হয়ে সময় কাটানো যাবে না। পরীক্ষার নির্ঘণ্ট যতই এগিয়ে আসবে, দিনরাত এক করে পরীক্ষার বিষয়গুলি ক্রমাগত ঝালিয়ে নিতে হবে।
তবে পরীক্ষার এই প্রস্তুতির চোটে অসুস্থ হয়ে পড়লে মুশকিল। এই স্ট্রেস আরও বাড়তে পারে যদি পরীক্ষার জন্য আপনার শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি নেওয়ার অভ্যেস থাকে।
প্রস্তুতির জন্য পরীক্ষার্থীদের ধারাবাহিক ভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রখর স্মৃতিশক্তিরও। পরীক্ষার জন্য স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কী কী পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন, সে সম্পর্কে ৫টি উপায়ের কথা এখানে বলা হল।
১. পড়াশুনোর সময় হাতে লিখে নোট নিন, কম্পিউটারে নয়: বর্তমানে আমরা প্রায় সকলেই কম্পিউটারে বা ফোনের নোটস অ্যাপ্লিকেশনে টাইপ করে কিছু লিখে রাখতেই অভ্যস্ত। ক্রমাগত কম্পিউটার বা মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে আমাদের নানা তথ্য মনে রাখার ক্ষমতা বা লেখার দক্ষতাও ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হাতে লেখার অভ্যেস প্রায় অনেকেরই চলে গেছে। নানা গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, টাইপ করা খুব সহজ মনে হলেও, তা কোনও জিনিস মনে রাখার ক্ষেত্রে তা খুব একটা উপকারী নয়। বরং কোনও কিছু মনে রাখতে হলে, সেগুলি কোনও খাতায় লিখে রাখলে তা অনেক বেশি মনে থাকে। কেন না এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি মনঃসংযোগের প্রয়োজন পড়ে।
২. পড়ার ফাঁকে একটু উঠে হাঁটাচলা করুন: অনেক সময়ই দেখা যায় পড়ার বই নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও কোনও লাভ হয় না। বরং মাঝে মাঝে একটু উঠে হাঁটাচলা করে নিয়ে আবার পড়তে বসলে পড়াটা আরও কিছুটা এগোয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক ঘণ্টা কোনও কিছু পড়ার পর ৫-১০ মিনিটের একটা ছোট ব্রেক নেওয়া উচিত পরীক্ষার্থীদের। এর ফলে মনঃসংযোগ বাড়বে, যা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে।
৩. নানা পদ্ধতিতে পরীক্ষার প্রস্তুতির চেষ্টা চালান: পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়ে কোনও এক উপায়ে যদি ঠিক ভাবে পড়াশুনো হচ্ছে না বলে মনে হয়, নতুন কোনও পদ্ধতির কথা ভাবুন। আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা অনুযায়ী, আপনি যদি কোনও কাজে দক্ষতা অর্জন করতে চান, কাজটি স্বভাবসিদ্ধ উপায়ের বাইরে একটু অন্য কোনও উপায়ে করার চেষ্টা করুন। এর ফলে হয়তো যে বিষয়টি আপনি একই পদ্ধতি মেনে ক্রমাগত শেখার চেষ্টা করছেন, তার চেয়ে অনেক দ্রুত ও ভাল ভাবে বিষয়টি শিখে ফেলতে পারবেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, কোনও বিষয় পড়তে গিয়ে যখন কিছু জায়গা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না, তখন অন্য কোনও বিষয় পড়া শুরু করুন এবং তার পর আবার পুরনো বিষয়টি পড়ার চেষ্টা করুন। দেখবেন, দ্বিতীয় বারে অতি সহজেই বিষয়টি বুঝে যাবেন। এ ছাড়া, দিনের যে সময় সবচেয়ে বেশি মনঃসংযোগ করতে পারেন, সেই সময় পড়ার অভ্যেস তৈরি করলেও প্রস্তুতির সময় সুবিধা হতে পারে।
৪. জোরে জোরে পড়ুন: জোরে জোরে পড়ার বহু প্রচলিত ও পুরোনো অভ্যেসটি নিঃসন্দেহে খুবই ফলপ্রদ। গবেষণায় ইতিমধ্যেই প্রমাণিত, জোরে জোরে পড়লে অনেক বেশি জিনিস মনে রাখা যায়। চুপ করে নিজের মনে কিছু পড়লে অনেক সময়ই অনেক কিছু মাথায় থাকে না। ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যার অধ্যাপক কলিন ম্যাকলেয়ডের মতে জোরে জোরে পড়লে এক রকম 'প্রোডাকশন এফেক্ট' তৈরি হয়,যা সমস্ত তথ্য মনে রাখতে সাহায্য করে।
৫. ভাল করে ঘুমান: পরীক্ষার আগে একটানা পড়াশোনা করতে করতে মানসিক ক্লান্তি চলে আসাটাই দস্তুর। তবে যদি এই সময় ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রতিদিন হয়, তা হলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুই-ই ভাল থাকবে। এর ফলে পর দিন ঘুম থেকে উঠে আপনি আরও বেশি মনঃসংযোগ করে পড়াশুনো করতে পারবেন ও মনে রাখতে পারবেন।
পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়টি নিঃসন্দেহে খুবই উদ্বেগ ও চাপ তৈরি করে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। তবে এর মধ্যেই পরীক্ষার্থীদের ভাল রেজাল্ট করার জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলি মাথায় রেখে ও সুস্থ থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হবে।