বাবা রাজকিশোর রজ়ক ইস্ত্রি করছেন। পাশে ছেলে অমন রজ়ক এবং স্ত্রী অঞ্জু দেবী।
বালিগঞ্জের অভিজাত পাড়ায় ছোট্ট টেবিল পেতে বংশপরম্পরায় চলে আসছে জামাকাপড় ইস্ত্রি করার কাজ। কোনও মতে দিন আনা-দিন খাওয়া। তা দিয়েই যা উপার্জন পাঠিয়ে দিতে হয় বিহারের গ্রামে, পরিবারের কাছে। একমাত্র ছেলেও এই কাজে থাকুক, কখনওই চাননি বাবা রাজকিশোর রজ়ক।
স্বপ্নপূরণ করেছে ছেলে। বিহারের অমন রজ়ক এখন কলকাতার বালিগঞ্জ নিবাসী এবং পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। এবং এই কৃতিত্বের পুরোটাই তিনি দিচ্ছেন বাবাকে।
ছেলে যখন ক্লাস নাইনের পড়ুয়া, তখন থেকেই তাকে চার্টাড অ্যাকাউন্ট্যান্সি নিয়ে পড়তে বলতেন রাজকিশোর। অমন বলেন, ‘‘বাবার কথাতেই আমি সিএ পড়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করি। দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সুযোগ থাকলেও কমার্স নিয়ে ভর্তি হই। ক্লাস নাইন থেকেই আমি আর অন্য কোনও দিকে মন দিইনি।’’
বাবা, মা, ছোট বোন এবং দাদা (দাদু)-কে নিয়ে অমনের পরিবার। মা গৃহবধূ। বোন কলকাতাতেই যোগমায়া কলেজে পড়ছে কমার্স নিয়ে। বোনের ইচ্ছে ব্যাঙ্কে চাকরি করার। যে ইচ্ছে পূরণে বাবা এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন ইস্ত্রির কাজ।
বাবা কি এখনও কাজ করবেন? অমন বলেন, ‘‘বাবাকে বলেছি, আমি একটু ভাল চাকরি পেলেই আর এই কাজ করতে হবে না। তবে বাবার ইচ্ছে, বোনের বিয়ে হওয়ার আগে পর্যন্ত নিজের কাজ ছাড়বেন না।’’
বিহারের হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা অমনের। বেড়ে ওঠা বিহারেই। দ্বাদশ উত্তীর্ণের পর কলকাতায় চলে এসে উমেশচন্দ্র কলেজে ভর্তি হন কমার্স নিয়ে। পাশাপাশি চলতে থাকে সিএ-র প্রস্তুতি। এর মধ্যেই অতিমারির ভয়াবহ পরিস্থিতি। তখনও হাল ছাড়েননি বাবা-ছেলে। রাজকিশোর যখন জমানো পুঁজিটুকু দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন, অমন তখন সিএ হওয়ার একের পর এক ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছেন।
পরিশ্রম আর উদ্যমের এমন যুগলবন্দিকে নিরাশ করেনি ভাগ্যও। কখনও দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দিতে হয়নি অমনকে। প্রতিটি ধাপে প্রথম বারেই এসেছে সাফল্য। এখন স্বপন দেখেন, নামজাদা সংস্থায় চাকরি করবেন। এই বয়সে বাবাকে যাতে আর এত পরিশ্রম করে ইস্ত্রির কাজ করতে না হয়। ঘরের ছেলের এই সাফল্যে খুশি পরিবারের সকলেই। বিহারে নিজের গ্রামেও এমন ফলাফলে নজর কেড়েছেন অমন রজ়ক।