সম্পাদকীয়

সাম্য: ভুল এবং ঠিক

রাজস্থান পথ দেখাইয়াছে। গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যোদ্ধারের পথ। প্রশাসনের উন্নতির পথ। সেই পথ রচিত হইতেছে শিক্ষার ভিত্তিতে। রাজস্থানের সরকার এই মর্মে অর্ডিন্যান্স জারি করিয়াছে যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হইতে চাহিলে ন্যূনতম শিক্ষা অর্জন করিতে হইবে, জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির জন্য অন্তত দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়া চাই, সরপঞ্চ বা পঞ্চায়েতপ্রধান পদের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণি। অর্ডিন্যান্স জারি না করিয়া স্বাভাবিক আইন পাশ করিতে পারিলেই শ্রেয় হইত, তবে এ ক্ষেত্রে সময়ের বাধা ছিল, কারণ রাজ্যে অদূরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, এবং নূতন নিয়মটি অবিলম্বে চালু করিবার যথেষ্ট যুক্তি আছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

রাজস্থান পথ দেখাইয়াছে। গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যোদ্ধারের পথ। প্রশাসনের উন্নতির পথ। সেই পথ রচিত হইতেছে শিক্ষার ভিত্তিতে। রাজস্থানের সরকার এই মর্মে অর্ডিন্যান্স জারি করিয়াছে যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হইতে চাহিলে ন্যূনতম শিক্ষা অর্জন করিতে হইবে, জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির জন্য অন্তত দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়া চাই, সরপঞ্চ বা পঞ্চায়েতপ্রধান পদের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণি। অর্ডিন্যান্স জারি না করিয়া স্বাভাবিক আইন পাশ করিতে পারিলেই শ্রেয় হইত, তবে এ ক্ষেত্রে সময়ের বাধা ছিল, কারণ রাজ্যে অদূরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, এবং নূতন নিয়মটি অবিলম্বে চালু করিবার যথেষ্ট যুক্তি আছে। বস্তুত, দেশের সমস্ত রাজ্যেই এই ধরনের নিয়ম বলবত্‌ করা জরুরি এবং তাহা কেবল পঞ্চায়েত স্তরের নহে, সমস্ত স্তরের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রেই। এই উদ্যোগ সর্বজনপ্রিয় হইবে না, বস্তুত বহুজনের অপ্রিয় হইবে। রাজস্থানে অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ উঠিয়াছে, অন্যত্রও এমন শিক্ষা-শর্ত আরোপ করিতে চাহিলে বিরুদ্ধতা অনিবার্য। কিন্তু প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত অনেক সময়েই অপ্রিয় হইয়া থাকে।

Advertisement

কেন এই সিদ্ধান্ত প্রয়োজনীয়? প্রতিবাদীদের যুক্তিই বা কী? দ্বিতীয় প্রশ্নটির বিচার হইতেই প্রথম প্রশ্নের সদুত্তরে উপনীত হওয়া সম্ভব। প্রতিবাদীরা বলিতেছেন এবং বলিবেন যে, জনপ্রতিনিধির পদপ্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত আরোপ করিলে গণতন্ত্রের আদর্শ ক্ষুণ্ণ হয়, তাহার প্রয়োগও বিকৃত হয়। তাঁহাদের মতে, গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় সমস্ত নাগরিকের সমান অধিকার থাকিবে, ইহাই আদর্শ, শিক্ষার ছাঁকনি দিয়া সেই আদর্শকে ছাঁকিয়া লইলে তাহার মর্যাদা লঙ্ঘিত হয়। তদুপরি, যেহেতু এ দেশে বহু মানুষ অশিক্ষিত, বস্তুত নিরক্ষর, বিশেষত রাজস্থানের মতো রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে নিরক্ষরতা ও অশিক্ষা প্রবল, সুতরাং নূতন নিয়মে একটি বড় জনগোষ্ঠী জনপ্রতিনিধিত্বের সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইবেন। বিশেষ করিয়া বঞ্চিত হইবেন বিভিন্ন পশ্চাত্‌পদ বর্গের মানুষ এবং মেয়েরা, কারণ অশিক্ষা তাঁহাদের মধ্যে সমধিক। অর্থাত্‌, সামাজিক বৈষম্যের কারণে নববিধানের শর্ত সেই বৈষম্যকেই তীব্রতর করিবে। সুতরাং প্রতিবাদ।

সামাজিক বৈষম্য কমিলে অবশ্যই সমাজের মঙ্গল। কিন্তু তাহার পায়ে দক্ষতাকে বিসর্জন দিলে আখেরে সমাজেরই ক্ষতি। জনপ্রতিনিধিদের কাজ সুসম্পাদনের জন্য ন্যূনতম শিক্ষার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। উদার গণতন্ত্রের পরম প্রবক্তা জন স্টুয়ার্ট মিল স্মরণীয়, তিনি নীতিরচনা এবং প্রশাসনের কাজে সমাজের সমস্ত বর্গের মানুষের সক্রিয় ভূমিকা চাহিয়াছিলেন, কিন্তু একই সঙ্গে জোর দিয়া বলিয়াছিলেন, সেই ভূমিকা পালনের জন্য নাগরিকদের শিক্ষিত হইতে হইবে। এ দেশে স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে, আর্থিক উন্নয়নের আগেই, গণতন্ত্র আসিয়াছে। সেই উন্নয়নের পথে প্রায় সাত দশক চলিবার পরেও শিক্ষাবিস্তার সীমিত, বিশেষত উত্তর ভারতে এবং বিভিন্ন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। একটি আধুনিক দেশের যোগ্য নীতি রচনার ও প্রশাসন চালনার জন্য যে ধারণা আবশ্যক, যে দক্ষতার প্রয়োজন, নিরক্ষর, অশিক্ষিত মানুষের পক্ষে তাহা সরবরাহ করা সম্ভব নহে। দরিদ্র গ্রামবাসীর ‘স্বাভাবিক প্রজ্ঞা’ সম্পর্কে অনেক ভাল ভাল কথা প্রচারিত হয়, কিন্তু সত্য ইহাই যে, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রকে সার্থক করিবার জন্য জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষিত হওয়া জরুরি। ষষ্ঠ বা দশম শ্রেণি বা অন্য কোন স্তরের শিক্ষা, তাহা লইয়া তর্ক চলিতে পারে, কিন্তু শিক্ষার প্রয়োজন লইয়া কোনও তর্কের অবকাশ নাই। যাঁহারা রাজস্থানের উদোগটির বিরোধিতা করিতেছেন, তাঁহারা সমস্ত নাগরিককে শিক্ষিত করিবার ব্রত ধারণ করুন, তাহাই গণতান্ত্রিক পরিসরে সমস্ত বর্গের মানুষের সুষম অংশগ্রহণের সদুপায়। অশিক্ষিতদের সুযোগ দিয়া নহে, সকলকে শিক্ষিত করিয়াই বৈষম্য দূর করা বিধেয়।

Advertisement

য ত্‌ কি ঞ্চি ত্‌

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম ভারতকে বলছে ‘ঘ্যানঘেনে’, সুব্রত যাদবপুরকে বলছেন ‘শাবাশ’, তাবত্‌ মৃত মহাপুরুষের প্র-নাতিনাতনিরা বলছে ‘তাইলে আমার দাদু ভারতরত্ন পাচ্ছে না কেন’, ফুলকপি গেরস্থকে বলছে ‘আবার এলুম’, টেররিস্টরা বলছে ‘বাচ্চা মারব’, কর্মীর কুমন্তব্যের পর তাড়াতাড়ি ক্ষমা চাইয়ে বিজেপি বলছে, ‘প্রমাণ করলাম, শান্তিকামী’, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে ‘এ বার ম্যানহোল তল্লাশি’, আর সবাই কোরাসে এক লাইনে দাঁড়িয়ে বলছে ‘হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার!’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement