সম্পাদকীয়

স্বীকারের স্বচ্ছতা

৯/১১-র পরে সিআইএ উগ্রপন্থী সন্দেহে যাহাদের ধরিয়াছিল, তাহাদের উপর কী কী প্রক্রিয়ায় অত্যাচার চালাইয়াছিল, তাহার বিশদ বিবরণ পাওয়া যাইল মার্কিন সেনেটের রিপোর্টে। জানা যাইল, বন্দিদের গাত্রে বরফশীতল জল ঢালিয়া দেওয়া, তাহাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করাইয়া রাখিয়া ঘুমাইতে না দেওয়া, চেন বাঁধিয়া সিলিং হইতে ঝুলাইয়া রাখা, প্রায়ই প্রয়োগ করা হইত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

৯/১১-র পরে সিআইএ উগ্রপন্থী সন্দেহে যাহাদের ধরিয়াছিল, তাহাদের উপর কী কী প্রক্রিয়ায় অত্যাচার চালাইয়াছিল, তাহার বিশদ বিবরণ পাওয়া যাইল মার্কিন সেনেটের রিপোর্টে। জানা যাইল, বন্দিদের গাত্রে বরফশীতল জল ঢালিয়া দেওয়া, তাহাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করাইয়া রাখিয়া ঘুমাইতে না দেওয়া, চেন বাঁধিয়া সিলিং হইতে ঝুলাইয়া রাখা, প্রায়ই প্রয়োগ করা হইত। কাহাকেও টানা ৬৬ ঘণ্টা দণ্ডায়মান রাখা হইয়াছে, কাহাকেও নগ্ন করিয়া শেকলে বাঁধিয়া ৭২ ঘণ্টা দাঁড় করানো হইয়াছে, মাঝে মাঝেই শীতল জল গাত্রে ঢালিয়া যাওয়া হইয়াছে। কোনও বন্দিকে কফিনের মতো ছোট বাক্সে ভরিয়া দেওয়া হইত। এক সন্দেহভাজনকে এমন বাক্সে টানা ২৬৬ ঘণ্টা পুরিয়া রাখা হইয়াছিল। বন্দির প্রিয়জনকে খুন বা ধর্ষণ করিবার হুমকিও দেওয়া হইয়াছে। অত্যাচারকালীন বন্দির ক্রন্দন রেকর্ড করিয়া পরিবারের মানুষদের শুনানো হইয়াছে। ‘ওয়াটারবোর্ডিং’ করা হইয়াছে, যাহার অর্থ বন্দিকে বাঁধিয়া, তাহার মুখটি কাপড় দিয়া ঢাকিয়া, কাপড়টির উপর জল ফেলিয়া যাওয়া, যাহাতে বন্দির জলে ডুবিয়া যাইবার অসহ্য কষ্টের অনুভূতি হয়। এক প্রধান সন্দেহভাজন বন্দিকে ১৮৩ বার এই প্রক্রিয়ার শিকার হইতে হইয়াছে। কখনও বন্দির পায়ু দিয়া জল ও খাদ্য শরীরে প্রবিষ্ট করা হইয়াছে। যে বন্দি অনশন করিতেছে, তাহার ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকী কখনও সহায়তা করিতে ইচ্ছুক বন্দিকেও এই ভাবে ‘খাওয়ানো’ হইয়াছে, সম্ভবত অপমান করিবার জন্য। রিপোর্ট পেশ হইবার পর বিশ্বময় হূলস্থূল। এক দল ‘দেশপ্রেমী’ বলিতেছেন, দেশের ক্ষতি করিতে উত্‌সুক দুষ্কৃতীদের সহিত এই ব্যবহারে কোনও অন্যায় নাই। বিরোধীরা বন্দিদের মানবাধিকারের প্রতি নির্দেশ করিতেছেন। সিআইএ-র এক কর্তা বলিয়াছেন, যে লোকটি ৪১টি মানুষের মুণ্ড কাটিয়াছে ও ৯/১১-র পরিকল্পনায় সাহায্য করিয়াছে, তাহাকে প্রয়োজন হইলে আবারও ওয়াটারবোর্ড করিব। এক সাংবাদিক তাঁহাকে স্মরণ করাইয়া দেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে জাপানি অফিসাররা মার্কিন চরদের ওয়াটারবোর্ড করিয়াছিল, তাহাদের আমেরিকা বিচার করিয়া ফাঁসি দিয়াছে।

Advertisement

আমেরিকা আদতে কত খারাপ রাষ্ট্র, সেই সিদ্ধান্তে উপনীত হইবার পূর্বে একটি কথা খেয়াল রাখিতে হইবে। তাহা হইল, অন্য কোনও দেশ সরকারি তদন্ত সংস্থা সম্পর্কে এই বিবরণ আদৌ প্রকাশ্যে পেশ করিত কি? প্রায় ৬০০০ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টটি প্রস্তুত করা হইয়াছে চার বত্‌সর ধরিয়া ব্যাপক অনুসন্ধানের পর, এবং খরচ হইয়াছে চার কোটি ডলারের অধিক। আমেরিকার কী প্রয়োজন ছিল এইটি করার? আজ যে বিতর্ক আমেরিকায় ও বিশ্বে ফুঁসিয়া উঠিতেছে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে দেশটিকে ‘গুন্ডা রাষ্ট্র’ গাল দিবার ঢল নামিয়াছে, আমেরিকাবিরোধী সহস্র সংগঠন ‘কী, বলিয়াছিলাম না?’ মর্মে নিষ্ঠীবন নিক্ষেপ করিতেছে, এই পূর্ণ মানচিত্রটির অস্তিত্বই থাকিত না, যদি আমেরিকা এই কথাগুলি চাপিয়া যাইত। যাহা, নিঃসন্দেহে, অন্য বহু দেশই করিতেছে। রাষ্ট্রবিরোধী উগ্রপন্থীকে অত্যাচারের সময় বহু রাষ্ট্রই মানবাধিকারকে ফুত্‌কারে উড়াইয়া দেয়, কিন্তু তাহারা এই আখ্যান প্রচার করে না। কিন্তু আমেরিকা তাহার চিরাচরিত ‘যাহাই ঘটুক, প্রত্যেকের সত্য ও তথ্য জানিবার অধিকারকে বিঘ্নিত করিব না’ অবস্থানটিতে অটল থাকিল। বাক্স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতার প্রতি এই অঙ্গীকার আমেরিকাকে কুর্নিশযোগ্য করিয়াছে। তাহাতে এই অত্যাচারগুলি কখনওই ন্যায়সঙ্গত হইয়া যায় না, সিআইএ হইয়া যায় না মহত্‌ সংস্থা, আর যে মার্কিন নাগরিকরা ‘কেমন শাস্তি দিয়াছি ব্যাটাদের’ বলিয়া বুক ফুলাইয়া পতাকা উড়াইতেছেন তাঁহারাও নির্বোধ অনুভূতিহীন ব্যতীত আর কিছু বলিয়াই প্রমাণিত হন না, কিন্তু আমেরিকাকে তিরস্কারের পাশাপাশি তাহার প্রাপ্য সাধুবাদ না দিলে, সমালোচকরাও খণ্ডদর্শন ও একদেশদর্শিতায় অপরাধী থাকিবেন, যাহা দেশটির অধিকার হরণের শামিল।

য ত্‌ কি ঞ্চি ত্‌

Advertisement

ব্রিটেনের রাজপুত্র উইলিয়াম আর রাজবধূ কেট বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের সঙ্গে ছবি তুলছেন, খেলোয়াড়টি কেটের কাঁধে হাত রাখলেন। ব্যস, রইরই, রাজপরিবারের কাউকে বাইরের কেউ ছুঁল কেন? ২০০৯-এ বাকিংহাম প্যালেসে মিশেল ওবামা রানি এলিজাবেথকে ছুঁয়েছিলেন, সমান হুড়ুদ্দুম! এ দিকে বলব আমরা সুপার-সভ্য, ও দিকে সমানে ‘রিভার্স’-অস্পৃশ্যতা মানাব, গণতন্ত্রে বসে রাজ-গ্ল্যামার পুজো করব! শুধু পুরোটা গড়গড়ে ইংরিজিতে বলতে পারলেই ব্যাপার সুগম্ভীর!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement