প্রবন্ধ ২

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলতে পয়সা লাগে না কেন

বিদ্যুত্‌ থেকে অনলাইন পরিষেবা, জীবনের বিবিধ ক্ষেত্রে যে বৃহত্‌ বাণিজ্যিক সংস্থার মুখাপেক্ষী হওয়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার পথ কী? বাজারকে কী ভাবে মানুষের উপকারে ব্যবহার করা যায়, দেখিয়েছেন নোবেলজয়ী জঁ তিরোল।এ বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারের প্রাপক হিসেবে ফরাসি অর্থনীতিবিদ জঁ তিরোলের নাম ঘোষণা করে বিচারকরা বলেছিলেন, ‘অর্থনীতির বহু শাখাতেই তিরোলের গবেষণা তাত্‌পর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে, কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব, তিনি কতিপয় শক্তিশালী সংস্থার দখলে থাকা বাজারের চরিত্র বুঝিয়েছেন এবং সেই বাজারকে নিয়ন্ত্রণের পথ বাতলে দিয়েছেন।’

Advertisement

কৃষ্ণেন্দু ঘোষ দস্তিদার

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

এ বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারের প্রাপক হিসেবে ফরাসি অর্থনীতিবিদ জঁ তিরোলের নাম ঘোষণা করে বিচারকরা বলেছিলেন, ‘অর্থনীতির বহু শাখাতেই তিরোলের গবেষণা তাত্‌পর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে, কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব, তিনি কতিপয় শক্তিশালী সংস্থার দখলে থাকা বাজারের চরিত্র বুঝিয়েছেন এবং সেই বাজারকে নিয়ন্ত্রণের পথ বাতলে দিয়েছেন।’ অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিরোলের প্রভাব এবং খ্যাতি প্রশ্নাতীত। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের সম্ভাব্য প্রাপকের তালিকায় তাঁর নামটি বেশ কয়েক বছর ধরেই ছিল। অর্থনীতির সর্বোচ্চ মানের জার্নালগুলিতে তাঁর ১৮০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বইয়ের সংখ্যা ১১। পেশাদারি ক্ষেত্রে কারও প্রভাব মাপা হয় যে মাপকাঠিতে, সেই ‘সাইটেশন’ (অর্থাত্‌, অন্য গবেষকদের লেখায় উল্লেখ)-এর নিরিখে তিনি অগ্রগণ্য।

Advertisement

তিরোলের কাজের কথা বলতে গেলে প্রথমেই অলিগোপলির প্রসঙ্গ আসবে। অলিগোপলি মানে কতিপয় বড় সংস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বাজার। ১৯৮০-র দশকে এই বাজারের চরিত্র নিয়ে খুব তাত্‌পর্যপূর্ণ কাজ করেছিলেন তিরোল। আজকের দুনিয়ায় বেশির ভাগ বাজারই অলিগোপলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই বাজারে সংস্থাগুলি পরস্পরের ওপর ‘নির্ভরশীল’, কারণ যখন কোনও একটি সংস্থা নিজের পণ্যের দাম, উত্‌পাদনের পরিমাণ, বিজ্ঞাপনের খরচ ইত্যাদি স্থির করে, তখন তার তীক্ষ্ণ নজর থাকে প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থার স্ট্র্যাটেজি বা ব্যবসায়িক চালের ওপর। অর্থাত্‌, অলিগোপলিতে একটি সংস্থা তার প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থার চালের প্রেক্ষিতে নিজের চাল স্থির করে। যে বাজারের চলন এমন জটিল, সেখানে নিয়ন্ত্রকের সতর্ক থাকা প্রয়োজন দেখতে হয়, সেই বাজারটি প্রতিযোগিতার বিপরীত পথে হাঁটতে পারে কি না।

প্রতিযোগিতার উল্টো দিকে দুটো পথ রয়েছে। প্রথমটি প্রিডেটরি প্রাইসিং-এর পথ। কোনও একটি বাজারে যদি একটাই বড় সংস্থা থাকে (যাকে বলে একচেটিয়া ব্যবসা), তখন নতুন কোনও সংস্থা সেই বাজারে ঢুকতে চাইলে প্রথম সংস্থাটি তার পণ্যের দাম খুব কমিয়ে দিতে পারে। নিজের গড় উত্‌পাদন ব্যয়ের চেয়েও কম দামে পণ্য বেচতে আরম্ভ করতে পারে, যাতে নতুন সংস্থাটি এই বাজারে ঢুকলে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে। ক্ষতি, কারণ নতুন সংস্থাটিকেও পণ্য বেচতে হবে সেই অস্বাভাবিক কম দামেই, নয়তো কেউ তাদের পণ্য কিনবেই না। এতে প্রথম সংস্থাটিরও ক্ষতি হবে বিলক্ষণ। কিন্তু, সাময়িক ক্ষতি স্বীকার করে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে বাজারে ঢুকতেই না দিলে দীর্ঘমেয়াদে লাভ। তখন ফাঁকা বাজারে ইচ্ছেমত দাম বাড়ানো যাবে, আগের সব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সমস্যা হবে না। তা ছাড়াও, নতুন সংস্থার তুলনায় পুরনো সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্য সচরাচর ভাল হয়, ফলে ক্ষতির ধাক্কা সামলানোও তাদের পক্ষে সহজ।

Advertisement

অন্য পথটা হল কার্টেল-এর। আগের পথটা শত্রুতার হলে এটা একেবারেই বন্ধুত্বের। বাজারে প্রায় সমান শক্তির একাধিক সংস্থা থাকলে তারা নিজেদের মধ্যে একটা চুক্তি করে নিতে পারে যে তারা একে অপরের চেয়ে দাম কমিয়ে বাজার দখলের চেষ্টা করবে না। এমন চুক্তি সংস্থাগুলির পক্ষে খুব লাভের। তারা দাম চড়িয়ে রেখে ক্রেতাদের থেকে ইচ্ছেমত টাকা আদায় করতে পারে, আবার নতুন কোনও সংস্থা এই বাজারে ঢুকতে চাইলে তার পথে বাধাও তৈরি করতে পারে। বহু দেশেই এমন চুক্তি আইনত নিষিদ্ধ, কিন্তু খাতায়কলমে না হলেও অন্য ভাবে বোঝাপড়া তৈরি করে সংস্থাগুলি কার্যত একচেটিয়া বাজারই তৈরি করে রাখে। ক্ষতি হয় ক্রেতাদের।

শিল্প সংগঠনের তত্ত্বে এমন বাজারের চরিত্র এবং তার সমস্যা (যার মধ্যে ওপরে বলা দুটো সমস্যাও রয়েছে) নিয়ে যে ক’জন অর্থনীতিবিদ সর্বদর্শী কাজ করতে আরম্ভ করেন, তাঁদের অন্যতম জঁ তিরোল। এই শাখাটির ওপর তাঁর কাজের প্রভাবই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। তাঁর বিশ্লেষণ মূলত দুটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে গেম থিয়োরি বা দ্বন্দ্বতত্ত্ব নামক গাণিতিক শাখা এবং ইনফরমেশন ইকনমিকস বা তথ্যের অর্থনীতি নামক অর্থনীতির একটি অপেক্ষাকৃত নতুন শাখা। ১৯৮৮ সালে তিনি ‘দ্য থিয়োরি অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশন’ নামক একটি বই লিখেছিলেন, যা আজও এই বিষয়ের ছাত্রদের সবচেয়ে জরুরি পাঠ্য।

তার চেয়েও বড় কথা, অলিগোপলি বিষয়ে তিরোলের আগে যত গবেষণা হয়েছিল, তিনি সেগুলোকে তাঁর নিজের কাজের মাধ্যমে এক যুক্তিসম্মত পরম্পরায় বেঁধেছিলেন। তিরোলের তেমন দুটো কাজের কথা উল্লেখ করি। বাজারে নতুন কোনও সংস্থা ঢুকতে চাইলে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলি কী করে, তিরোল তার তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরি করেছিলেন ১৯৮৪ সালে, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ড্রিউ ফুডেনবার্গ-এর সঙ্গে। তাঁরা দেখিয়েছিলেন, নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঠেকাতে কোনও সংস্থা যদি ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ করে (যেমন উত্‌পাদনের ক্ষমতা বাড়ানো জন্য নতুন যন্ত্রপাতি কেনায়), তবে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি আগ্রাসী হওয়ার প্রণোদনা কমে যেতে পারে। তেমন ক্ষেত্রে পুরনো সংস্থাগুলি বরং ‘লিন অ্যান্ড হাংরি লুক’ বজায় রাখতেই ভালবাসে উত্‌পাদন বৃদ্ধির মেদ জমায় না শরীরে। ২০০২ সালে আরও একটি গবেষণাপত্রে (জঁ-শার্ল রশে-র সঙ্গে) তিরোল বিশ্লেষণ করেছিলেন, কেন বড় মাপের অনলাইন সংস্থাগুলি নিজেদের পরিষেবার জন্য কোনও দাম নেয় না অর্থাত্‌, কেন নিখরচাতেই একটা জি-মেল বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।

কী ভাবে একচেটিয়া ব্যবসা অথবা অলিগোপলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই পথ নির্দেশ করা তিরোলের আরও একটি তাত্‌পর্যপূর্ণ অবদান। গোটা দুনিয়ার ইলেকট্রিকাল, টেলিকমিউনিকেশন এবং পরিবহণ ক্ষেত্রের দিকে নির্দেশ করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা প্রতি দিন এই বড় সংস্থাগুলোর আচরণে প্রভাবিত হই’। এই সংস্থাগুলির পরিষেবার মান এবং মূল্য আমাদের কাছে জরুরি। বহু ক্ষেত্রেই এই সংস্থাগুলি ন্যায্য দামের চেয়ে বেশি আদায় করে, এবং অকুশলী বড় সংস্থা অপেক্ষাকৃত ছোট কিন্তু কুশলী সংস্থাকে বাজারে ঢুকতে না দিয়ে নিজেদের অকুশলতা সমেত টিকে থাকতে পারে। এমন সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ না করা বিপজ্জনক।

মুশকিল হল, এই সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের স্বচ্ছ প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে বাধ্য করার কাজটা বেশ জটিল। যে সংস্থাগুলি কোনও একটি বাজারকে দখল করে রাখে, তারা স্বভাবতই নিয়ন্ত্রকের তুলনায় সেই বাজার সম্বন্ধে ঢের বেশি জানে। ফলে, নিয়ন্ত্রকের পক্ষে আদর্শ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা কঠিন নিয়ন্ত্রণ হয়তো অতি কঠোর হয়ে পড়ে, অথবা অন্যায্য রকম শিথিল। এই গোলমালের পিছনে কারণ হল নিয়ন্ত্রকের কাছে সব প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকা। অর্থনীতির পরিভাষায় একে বলে অ্যাসিমেট্রি অব ইনফর্মেশন বা তথ্যের অসমতা। যে ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে এক পক্ষ এমন কিছু জানে যেটা অন্য পক্ষের জানা প্রয়োজন, কিন্তু জানা নেই, তখনই এই তথ্যের অসমতা তৈরি হয়।

তিরোল, তাঁর কয়েক জন সহযোগীর সঙ্গে একত্রে, এই সমস্যাগুলোর সমাধানের বিশ্লেষণী পন্থা সন্ধান করেছিলেন। মানুষের স্বার্থ আর ব্যবসায়িক স্বার্থের মধ্যে যে জায়গাগুলোয় ফারাক হয়ে যায়, সেখানে নজর রেখে তিরোল প্রতিটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের জন্য পৃথক অপটিমাল রেগুলেশন বা সর্বোত্তম নিয়ন্ত্রণের মাত্রা নির্ধারণ করেন। সেই নিয়ন্ত্রণের চরিত্র কী, সেটা এক কথায় বলা মুশকিল, কারণ তাঁর প্রতিপাদ্যই ছিল, প্রতিটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রকে পৃথক ভাবে দেখা প্রয়োজন। নিয়ন্ত্রণকে ক্ষেত্র-নির্দিষ্ট হতেই হবে। এই যে এক একটি ক্ষেত্রকে বেছে নিয়ে তার পর তার জন্য উপযোগী নিয়ন্ত্রণের পন্থা নির্ধারণ করা, এর থেকে তিরোলের মূল বিশেষত্বটির আঁচ পাওয়া সম্ভব তিনি কোনও একটি বিশেষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চরিত্র বুঝে তার কেন্দ্রীয় সমস্যাটিকে অঙ্কের ভাষায় ‘অনুবাদ’ করে তার বিশ্লেষণ করে সেখান থেকে অতি বাস্তবগ্রাহ্য এবং উপযোগী নৈতিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে অসম্ভব দক্ষ।

জঁ তিরোলের ভাবনার গভীরতা এবং বলিষ্ঠতা বহু ক্ষেত্রেই অতীতের প্রতিষ্ঠিত ধারণাগুলিকে ভেঙে দিয়েছে। রয়াল সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, ‘তিরোলের আগে গবেষক এবং নীতিনির্ধারকরা সব শিল্পের জন্য একটা সাধারণ নিয়ন্ত্রণ নীতির সন্ধানে ছিলেন। তাঁরা সহজসরল সমাধানসূত্রের কথা বলতেন।... তিরোল দেখালেন, খুব নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে এই রকম নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হতেও পারে, কিন্তু সাধারণ ভাবে এই নিয়ন্ত্রণ ভালর চেয়ে মন্দ করে বেশি। দামের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিলে বড় সংস্থাগুলি উত্‌পাদনের ব্যয় কমাতে সচেষ্ট হতে পারে সেটা সমাজের জন্য ভাল। কিন্তু, এই ঊর্ধ্বসীমা আবার বাড়তি মুনাফার পথও খুলে দিতে পারে, যা সমাজের পক্ষে মোটেই ভাল নয়। প্রতিযোগিতার বাজারে সংস্থাগুলি পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করলে সাধারণ মানুষের ক্ষতি, কিন্তু পেটেন্টের ক্ষেত্রে যদি তারা সহযোগিতার পথে হাঁটে, তা হলে সমাজের মস্ত লাভ।...’

শক্তিশালী বাণিজ্যিক সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ। বিশেষত, ভারতের মতো দ্রুত উন্নতিশীল দেশে এই সংস্থাগুলির রাজনৈতিক প্রভাব এতটাই যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে পদে পদে লড়াই করে এগোতে হয়। ইউরোপের বহু দেশ যে তাদের শিল্প নিয়ন্ত্রণ নীতিতে তিরোলের গবেষণার মূল প্রতিপাদ্যগুলিকে গুরুত্বের সঙ্গে জায়গা করে দিয়েছে, সেটায় অবাক হওয়ার কোনও কারণ নেই। এই নিয়ন্ত্রণের কাজটি এক দিকে অতিসরলীকরণের, আর অন্য দিকে রাজনৈতিক চোরাস্রোতের শিকার। এরই মধ্যে তিরোলের বিশ্লেষণধর্মী কাজ তৃপ্তিদায়ক ব্যতিক্রম, এবং নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য পথনির্দেশিকা।

ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান-এর অর্থনীতিবিদ জাস্টিন উলফারস সম্প্রতি একটি লেখায় লিখেছেন, ‘আমরা অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতির জ্ঞানের দিগন্ত বিস্তৃত করার জন্য জঁ তিরোলের প্রশংসা করি। কিন্তু, সাধারণ মানুষ হিসেবেও আমরা তাঁর কাছে গভীর ভাবে কৃতজ্ঞ। কারণ, আজ আমরা যে খানিকটা হলেও ভাল ভাবে বেঁচে আছি, তার পিছনেও তিরোলের অবদান অনস্বীকার্য বাজারের শক্তিকে কী ভাবে মানুষের ভাল থাকার কাজে ব্যবহার করা যায়, তিনি সেই নীতিটি নির্মাণ করেছেন।’ এর পর কিছু বলার থাকে কি?

দিল্লিতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির শিক্ষক

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement