সম্পাদকীয় ২

প্রযুক্তির দৌড়

মৌ লিক গবেষণার পাশাপাশি কারিগরি কুশলতাতেও যে চিন পশ্চিমের সহিত পাল্লা দিতে উদ্গ্রীব, তাহার প্রমাণ মিলিতেছে। কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের নানা দিকে চিনের অগ্রগতি পশ্চিমের অনেক দেশের ঈর্ষা ও ক্রোধের কারণ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০০:০০
Share:

মৌ লিক গবেষণার পাশাপাশি কারিগরি কুশলতাতেও যে চিন পশ্চিমের সহিত পাল্লা দিতে উদ্গ্রীব, তাহার প্রমাণ মিলিতেছে। কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের নানা দিকে চিনের অগ্রগতি পশ্চিমের অনেক দেশের ঈর্ষা ও ক্রোধের কারণ। সম্প্রতি এমন এক লক্ষ্যে চিনের প্রযুক্তি গবেষণা ধাবিত, যাহা ক্রোধ না হউক, ঈর্ষা আরও বাড়াইবে। অগস্ট মাসে চিন জিউকুয়ান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র হইতে এমন এক উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠাইবে যাহার উদ্দেশ্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর যোগাযোগ স্থাপন। কেবল ওই উদ্দেশ্যে এই রূপ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ পৃথিবীতে এই প্রথম। যে দৌড়ে চিন প্রথম হইতেছে, তাহাতে শামিল কানাডা, জাপান, ইটালি ও সিঙ্গাপুর। উপগ্রহটিতে কী বিষয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা হইবে, তাহা জানিলে চিনের তরফে প্রথম হইবার বাসনার তাৎপর্য বোঝা যাইবে। দূরযোগাযোগ স্থাপনে উপগ্রহের ভূমিকা বহু পুরাতন। তবে চিনের সাম্প্রতিক উদ্যোগের বৈশিষ্ট্য কীসে? তাহা যোগাযোগ স্থাপন প্রক্রিয়ায় এমন এক প্রযুক্তির আমদানি, যাহা এখনও ব্যবহারিক স্তরে পৌঁছায় নাই, পরীক্ষানিরীক্ষার পর্যায়েই রহিয়াছে। প্রযুক্তিটির মূলে পদার্থবিজ্ঞানের বিশেষ শাখা কোয়ান্টাম মেকানিক্স।

Advertisement

কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী, এক সূত্রে জন্মিলে দুইটি কণার মধ্যে চিরকাল এক অতীন্দ্রিয় সম্পর্ক বজায় থাকে। একের উপর ক্রিয়া অন্যের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা দেয়। আর, কণাদ্বয় জন্মাইবার পর যত দূরেই (এমনকী যোজন যোজন আলোকবর্ষ) যাউক না কেন, এই সম্পর্ক অটুট থাকে। তত্ত্ব এমত নিদান দিলেও, পরীক্ষায় দেখা গিয়াছে, কণাদ্বয়ের দূরত্ব বাড়িলে উহাদের মধ্যে সম্পর্ক বিঘ্নিত হয়, কারণ ওই কোয়ান্টামের নিয়মেই আবার অতীন্দ্রিয় সম্পর্কটি পারিপার্শ্বিক প্রভাবমুক্ত নহে। দূরত্ব বাড়িলে বাহ্যিক প্রভাবের সম্ভাবনাও বাড়ে, তাই দূরে গেলে কণাদ্বয়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়। এমতাবস্থায় গবেষকেরা ক্রমাগত চেষ্টা করিতেছেন দূরত্ব বাড়াইলেও পারিপার্শ্বিক প্রভাবের উপদ্রব নস্যাৎ করিয়া ওই অতীন্দ্রিয় সম্পর্ক অটুট রাখিবার। এমত চেষ্টার উদ্দেশ্য অনুধাবন কঠিন নহে। ওই সম্পর্ক ভাঙাইয়া নিরাপদ দূরযোগাযোগ চালু করা যায়। এমন ইন্টারনেট চালু করা যায়, যাহা হ্যাকিং-এর কবলে পড়িবে না। বাহ্যিক প্রভাব যেহেতু যমজ কণাগুলির সম্পর্কে ইতি টানে, সেই হেতু কোয়ান্টাম-নির্ভর দূরযোগাযোগে হ্যাকারদের অনুপ্রবেশ প্রথমত সহজে ধরা পড়িবে, এবং দ্বিতীয়ত বিনষ্ট যোগাযোগে কুকর্মের সুযোগ নাই বলিয়া অনুপ্রবেশকারীরা দুষ্কর্মে বিরত থাকিবে।

কত দূর পর্যন্ত কোয়ান্টাম-নির্ভর যোগাযোগ নির্বিঘ্ন হইতে পারে, তাহা নির্ণয় করিবার নিমিত্তই চিন ছয় শত কিলোগ্রাম ওজনের ওই উপগ্রহটিকে মহাকাশে পাঠাইতেছে। কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরত্বেও যোগাযোগ অটুট রাখা যায় কি না, তাহা পরীক্ষা করিবে চিনা উপগ্রহটি। মহাকাশে ওই রূপ উপগ্রহ প্রেরণ করিয়া পরীক্ষা করিতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা যে সব উপগ্রহের কথা ভাবিয়াছেন, সেগুলি ওজনে নগণ্য। অর্থাৎ, প্রস্তাবিত ওই সব উপগ্রহে যন্ত্রপাতি কম থাকিবে, এবং সে কারণে অতি উন্নত মানের পরীক্ষাদি করা যাইবে না। স্বভাবতই অন্য দেশের কোয়ান্টাম গবেষকেরা চিনা বিজ্ঞানীদের পরীক্ষার দিকে ঈষৎ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাইবেন। চিন যে রূপ পরীক্ষায় অগ্রসর, তদ্রুপ পরীক্ষায় ভারত কেন শামিল হয় না? তবে কি ‘এশীয় দৈত্য’ হিসাবে ভারতের খ্যাতি নেহাতই ফাঁকা বুলি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement