সম্পাদকীয়

নক্ষত্রবিচার

লস অ্যাঞ্জেলেস-এর আদালতে এক জন সম্ভাব্য জুরি হিসাবে ব্র্যাড পিট হাজির হইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহাকে লইয়া আপত্তি উঠিল। বলা হইল, তিনি এমনই বিখ্যাত, তাঁহাকে কতিপয় জুরির মধ্যে অন্যতম করিলে, তিনি ‘অন্যতম’ থাকিবেন না, সকলের চোখেই অনন্য হইয়া দেখা দিবেন। আপত্তিটি শুনিবার পর, তাঁহাকে জুরির দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি দেওয়া হইয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

লস অ্যাঞ্জেলেস-এর আদালতে এক জন সম্ভাব্য জুরি হিসাবে ব্র্যাড পিট হাজির হইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহাকে লইয়া আপত্তি উঠিল। বলা হইল, তিনি এমনই বিখ্যাত, তাঁহাকে কতিপয় জুরির মধ্যে অন্যতম করিলে, তিনি ‘অন্যতম’ থাকিবেন না, সকলের চোখেই অনন্য হইয়া দেখা দিবেন। আপত্তিটি শুনিবার পর, তাঁহাকে জুরির দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি দেওয়া হইয়াছে। আদালতে মামলা চলাকালীন প্রত্যেকের চক্ষু কর্ণ ও বোধ সকলই কেবল অভিযুক্ত ও উকিলের প্রতি নিবেদিত থাকা উচিত। কিন্তু ব্র্যাড পিট যদি একটি কেদারা আলো করিয়া বসিয়া থাকেন, তাহা হইলে অনেকেই হয়তো সেই নীতি হইতে চ্যুত হইয়া, হাঁ করিয়া তাঁহাকেই সর্ব ক্ষণ দর্শন করিতে ব্যস্ত থাকিবেন। তিনি চলচ্চিত্র-নায়ক হিসাবে এমন প্রবল প্রখ্যাত, এবং অ্যাঞ্জেলিনা জোলি-র ন্যায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্র-নায়িকার সহিত বিবাহের পর তাঁহার ব্যক্তিগত জীবনও এমন গসিপ-উপাদান, সাধারণ মানুষের নিকট তিনি এক দূরতম নক্ষত্র। তিনি রক্তমাংসের শরীরে সহসা সম্মুখে সাধারণ নাগরিকের ন্যায় বসিয়া থাকিলে, সাধারণ নাগরিকেরা স্বাভাবিক অবস্থায় মন ও চিন্তাকে চালনা করিতে পারিবে না, অনুমানটি বাস্তবোচিত। জুরির সহ-সদস্যরা হইহই করিয়া অটোগ্রাফ চাহিতে পারিবে না বটে, ছুটিয়া আসিয়া হামলাইয়া পড়িতেও পারিবে না, কিন্তু আড়ে আড়ে ব্র্যাড কী করিতেছেন কোন দিকে চাহিতেছেন, তাহাই নজর করিয়া চলিবে ও বাড়ি গিয়া আত্মীয়দের ফলাও করিয়া কী গল্প করা যায়, তাহাই ফাঁদিতে তাকিবে। অভিযুক্তের জেল হইল না সে বেকসুর খালাস পাইল, চুলায় যাউক। ব্র্যাডের সহিত একটি সেল্ফি যেন ভালয় ভালয় তুলিয়া লওয়া যায় হলিউডেশের প্রস্থানের পূর্বেই।

Advertisement

আরও সংকট হইবে জুরির মত ঘোষণার কালে। এমনিতেই সকলে ব্র্যাডের মাথা নাড়িবার রকম ও মুখভাব পড়িয়া নিজেকে সেই মতাবলম্বী করিতে উত্‌সাহী হইবেন, উকিলের কোনও একটি যুক্তিতে ব্র্যাডকে হাসিতে দেখিলে তাঁহারাও দন্ত বাহির করিবেন ও অভিযুক্তের কোনও কথায় ব্র্যাডকে ভ্রু কুঞ্চন করিয়া ওষ্ঠে বিরাগ ফুটাইয়া তুলিতে দেখিলে তাঁহারাও যথোচিত অপ্রসন্ন হইয়া উঠিবেন। শেষে, যখন জুরির সকল সদস্য মিলিয়া নিজেদের মধ্যে আলোচনা করিয়া সিদ্ধান্তে আসেন, অভিযুক্ত দোষী না নির্দোষ, তখনও ব্র্যাড পিটের মতানুযায়ী মত দিবার প্রবল প্রবণতা সকলেরই মধ্যে লক্ষিত হইবার সম্ভাবনা। এমনকী কেহ যদি এই সকল প্যঁাচ আন্দাজ করিয়া, নায়কের ক্যারিশমা-পরিধির বাহিরে থাকিবার প্রতিজ্ঞাও করেন, তাঁহারও সতত লক্ষ্য হইবে, তিনি যেন অন্যদের ন্যায় কাঙাল হইয়া না পড়েন, যেন তাঁহার এই অস্বীকার ভ্রষ্ট না হয়। এই প্রযত্নও তাঁহাকে মামলার প্রতি পূর্ণ মনোযোগ হইতে দূরে সরাইয়া লইতে পারে। আবার আলোচনার সময়, ব্র্যাড পিটের সহিত স্বতঃই ঐকমত্যে না পৌঁছাইবার প্রয়াস তাঁহাকে বিপরীত দিকে একঝোঁকা করিয়া তুলিতে পারে। সব মিলাইয়া, যে হেতু এমন একটি সমাজপূজিত অস্তিত্বের প্রতি মুগ্ধ হওয়া যাইতে পারে, বিদ্বিষ্টও হওয়া যাইতে পারে, কিন্তু উদাসীন ও নির্বিকার থাকিবার সম্ভাবনা অতিশয় স্বল্প, তাই মামলায় এমন মানুষের অংশ না লওয়াই সকলের পক্ষে উপকারী।

যাঁহারা বাড়ি হইতে বাহির হইলেই তাঁহাদের ঘিরিয়া ক্যামেরা ও আকুল নয়নের ঠেলাঠেলি লাগিয়া যায়, তাঁহারা যে এক প্রকারের বন্দি, তাহা লইয়া বহু শিল্প রচিত হইয়াছে। লেডি ডায়ানাকে লইয়া প্রস্তুত ছবিতে দেখা যায়, তিনি প্রেমিকের গৃহ হইতে পাঁচিল ডিঙাইয়া, বেড়া লাফাইয়া, মিডিয়ার নাগাল হইতে ছিঁচকে তস্করের ন্যায় পলাইতেছেন। ব্র্যাডের হয়তো জুরি-সদস্য হইয়া নাগরিক কর্তব্যটি করিবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ঈশ্বরের ন্যায় নিবেদন পাইব আবার নশ্বরের ন্যায় ভিড়ে মিশিবার স্বাধীনতাও, এই বৃক্ষ ও তলদেশের যুগপত্‌ সুবিধা এই ধরায় প্রচলিত নহে।

Advertisement

য ত্‌ কি ঞ্চি ত্‌

জেলখানা খুব খারাপ জায়গা নয় কিন্তু। মানে, যদি প্রথম শ্রেণির বন্দি হতে পারেন। সব পাবেন, সাবান টেবিলল্যাম্প মশারি, দড় নাপিত, মায় আপনার ফাই-ফরমাশ খাটার এক ‘সহকারী’, তার ওপর গিন্নির খ্যঁাকখ্যঁাক ছেলেমেয়েদের ত্যাঁদড়ামো থেকে দুরন্ত মুক্তি। মোবাইলেও ক্রেডিট কার্ডের প্যাখনা নিয়ে ঘ্যানঘ্যান নেই। অফিস তো নেই-ই। অনন্ত ছুটি। গাল চুলকোলে, মেডিকেল বোর্ড বসবে। কোর্টে গেলে, লোকে জয়ধ্বনি দেবে। লোকে শুধু শুধু বাড়িতে থাকে কেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement