নরেন্দ্র মোদীর শৈশব লইয়া একটি কমিক-গ্রন্থ প্রকাশিত হইতেছে, বইটি পাওয়া যাইবে ইংরাজি, হিন্দি ও গুজরাতি ভাষায়। আট মাস ধরিয়া মোদীর শৈশব লইয়া তথ্যানুসন্ধানের পর চল্লিশ জন শিল্পী মিলিয়া ছবি আঁকিয়া কথাচিত্র-গ্রন্থটি প্রস্তুত করিয়াছেন। কাহিনিগুলি ঘনঘটায় পরিপূর্ণ, বই পড়িলে জানা যাইবে, বালক মোদী জলে নামিয়া হিংস্র কুম্ভীরদের সহিত খেলা করিতেন, কুম্ভীর-পরিপূর্ণ নদী অকুতোভয়ে সাঁতরাইয়া একটি মন্দিরের তুঙ্গে পতাকা বাঁধিয়া আসিয়াছিলেন। অন্য বালকেরা যখন খেলা করিয়া সময় নষ্ট করিত, মোদী গ্রামের গ্রন্থাগারে বসিয়া নিবিড় মনোযোগসহ স্বামী বিবেকানন্দ ও ছত্রপতি শিবাজির জীবনী পড়িতেন। কেবল পড়াশোনা নহে, তাঁহার নিত্য কর্ম ছিল বাড়ি পরিষ্কার, বস্ত্র প্রক্ষালন, বিভিন্ন গৃহকর্মে মাতাকে সাহায্য, দরিদ্র রোগীদের আয়ুর্বেদিক ঔষধ বিতরণ। তিনি বিদ্যালয়ের দুষ্ট ছেলেদের জামা কালি ছিটাইয়া চিহ্নিত করিয়া দিয়াছিলেন, যাহাতে প্রিন্সিপাল মহাশয় তাহাদের সহজেই চিনিতে পারেন। তিনি কবাডি খেলায় দুর্বল জুনিয়র দলকে অনুপ্রাণিত করিয়াছিলেন অসম লড়াই অবিশ্বাস্য ভাবে জিতিতে, কারণ সিনিয়র দলের এক নিপুণ খেলোয়াড়ের তাবত্ কায়দা তিনি পর্যবেক্ষণ করিয়া রাখিয়াছিলেন। ইন্দো-চিন যুদ্ধের সময় বালক মোদী ভারতীয় জওয়ানদের চা পরিবেশন করিয়াছিলেন। এনসিসি ক্যাডেট হিসাবে, দন্তে একটি ছুরি চাপিয়া বৃক্ষে আরোহণ করিয়াছিলেন, ঘুড়ির সুতায় অসহায় ভাবে জড়াইয়া যাওয়া মার্জারশিশুকে উদ্ধার করিবার জন্য।পৃথিবীর যে কোনও বিখ্যাত ব্যক্তিই নিজেকে অতিমানব ভাবিতে ভালবাসেন, তাঁহারা অনুগামীরা হয়তো তাহা ভাবিতে সমধিক ভালবাসেন। সকল মহামানবই নিজেকে লইয়া অল্পবিস্তর অতিকথা নির্মাণ করিবার প্রকল্পে যোগ দেন, কেহ সোত্সাহে, সচেতন পরিকল্পনা করিয়া, কেহ অপ্রত্যক্ষ ভাবে, প্রায় অচেতনে। পূজিত ব্যক্তিগণ অতীতচারণ করিতে গিয়া প্রায়ই অতি সাধারণ ঘটনায় একটি বা দুটি সামান্য মোচড় মারিয়া দেন, যাহাতে মনে হয়, তিনি জন্মলগ্ন হইতেই অসামান্য ছিলেন। তাঁহাদের পরিচিতরাও মুগ্ধ বর্ণনা দেন, মানুষটি দ্রুতবেগে হামাগুড়ি দিয়া কেমন ভাবে দুষ্ট পিপীলিকা মুখে পুরিয়া দিয়া মানবসমাজকে তাহার কামড় হইতে বাঁচাইয়াছিলেন। সাধারণ ঘটনা অলৌকিকতার ব্যঞ্জনা লাভ করে, কখনও অসাধারণ ঘটনা আকাশে গজাইয়া উঠে। স্মৃতি প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই প্রতারক, বাস্তবের সহিত অবধারিত ভাবে আপন মনের মাধুুরী মিশিয়া ‘সত্য ঘটনা অবলম্বনে’ কাহিনি তৈয়ারি হয়। আর বড় বড় মানুষের ক্ষেত্রে, তাঁহাদের অসামান্যতা বহুবিদিত হইবার ফলে, এবং সাধারণ মানসে তাঁহাদের নিকট হইতে প্রতি অণুতেই অসামান্যতা প্রত্যাশিত হইবার ফলে, স্মৃতিতে ফ্যান্টাসি-বিচ্ছুরণ স্বাভাবিক। ইতিহাসের বহু অধ্যায় এই ভাবেই নির্মিত হইয়াছে। বিদ্যাসাগর এই স্রোতেই দামোদর পার হইয়াছিলেন, বহু ধর্মগুরু এই বাতাসেই ঈশ্বরকে দিয়া বেড়া বাঁধাইয়াছিলেন। অথবা ভাবা যাইতে পারে, ভারতীয় মানসে শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলার সম্মোহন এমনই প্রবল, মহাপুরুষগণ ও তাঁহাদের মহাভক্তগণ একযোগে সেই দৈব দুরন্তপনার অনুসরণ ও আত্তীকরণ প্রার্থনা করেন। আর, এখন যুগটি পড়িয়াছে বড় মনোগ্রাহী, যখন নিজেকে বিপণনযোগ্য করিয়া তুলিতেই অসামান্য ব্যক্তিদের অধিকাংশ মুহূর্ত ও সিংহভাগ উদ্যম খরচ হইয়া যায়। কেহ কেহ সেই উদ্দেশ্যে, অর্থব্যয় করিয়া পেশাদার ঢক্কা-বাদক নিয়োগ করেন, যাঁহারা জনতার নিকট বিবিধ চতুর উপায়ে ব্যক্তিটির মহিমা কীর্তন করিবেন ও তাঁহার জনপ্রিয়তা স্ফীত করিবেন। বাজাইতে বাজাইতে তাঁহারা তাল লয়ের ঘোরে প্রায়ই বেসামাল হইয়া পড়েন, হয়তো তুরীয় দশার উত্তেজে গুঁতা মারিয়া মনিবকে ফেলিয়া দেন নক্র-সমাকুল নদীর মাঝখানটিতে। তখন সন্তরণ না করিয়া তাঁহার উপায় কী?
য ত্ কি ঞ্চি ত্
সৌদি আরবের এক ভিখারিনি মারা যাওয়ার পর দেখা গেল, তাঁর চারটে বাড়ি প্লাস গয়না প্লাস জমানো পয়সার মোট সম্পত্তি-মূল্য ছ’কোটি টাকার বেশি। দিকে দিকে ভিখিরিরা সাম্রাজ্য গড়ে তুলছেন, সকালে ভিক্ষে করে সন্ধেয় গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছেন। স্বাধীন বৃত্তি, সি এল নিতে হাত কচলাতে হয় না। স্বল্প অপমান কোন পেশায় না আছে? তবু তরুণ প্রজন্ম গতবাঁধা কেরিয়ার বাছবে, বেকার থাকবে, কিছুতে ভিক্ষেয় মজবে না। ইগো আমাদের দিয়েছে আবেগ, কেড়ে নিয়েছে beg!