রাজ্যের শিক্ষা-পরিস্থিতি শোচনীয়। শিক্ষাজগতে অব্যবস্থার অবস্থাকে ‘স্বাভাবিক’ ধরে নিতে অনেকেই হয়তো আজ অভ্যস্ত। এ সত্ত্বেও আমরা নিশ্চিত, ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর মাঝরাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিশি বিক্রমের যে প্রদর্শনী মঞ্চস্থ হল, তাতে এমনকী নিতান্ত নির্বিরোধী নিরীহ নাগরিকও নড়েচড়ে বসবেন। আততায়ীর মতন পুলিশের আগমন হয়েছিল; অকস্মাত্ তারা হঠাত্-অন্ধকার যাদবপুরের প্রশাসনিক ভবনে ছাত্রছাত্রীদের ওপর চড়াও হয়; কিন্তু, মস্ত পরিতাপের বিষয়, তাদের সে আবির্ভাবের পিছনে ছিল কর্তৃপক্ষ-প্রধানের আহ্বান। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার রয়েছে; রাষ্ট্রের দেওয়া এ-প্রতিশ্রুতি রাষ্ট্রেরই দমন-কলকে কাজে লাগিয়ে ভঙ্গ করা হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার-রক্ষা যাঁর অন্যতম দায়িত্ব, তাঁরই প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়! এক রকম বেনজির এ ঘটনা; নিন্দার উপযুক্ত ভাষা এখনও আমাদের রপ্ত নয়।
নারীনিগ্রহ আজ জলভাত; দেশের যেখানে সেখানে, যখন তখন, মেয়েদের ওপর প্রকাশ্যে নির্যাতন চলছে যাদবপুরে আর এক বার তা বেআব্রু হল। দেখিয়ে দিলে মারকুটেরা, আর যে ব্যাপারেই কমতি থাক তাদের, লিঙ্গ-পক্ষপাত-দোষে দুষ্ট নয়। ইতিমধ্যে অজস্রবার সম্প্রচারিত ছবি থেকে পরিষ্কার, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে যত্পরোনাস্তি প্রহার নেমেছিল সে রাত্রে। এই বীভত্সার নিন্দা ঠিক কোন ভাষায় ব্যক্ত করা যায়, তা-ও আমাদের কাছে অস্পষ্ট।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক আমরা। যে কাণ্ডকে অবলম্বন করে এই নারকীয় বিস্তার, সে সম্বন্ধে খুব জ্ঞাত নই। কিন্তু, বিস্তারটি যে একবাক্যে ধিক্কারযোগ্য, সে বিষয়ে আমাদের নামমাত্র সংশয় নেই। আশা এইটুকু, শান্তিপ্রহরীদের উন্মত্ত টহলদারি সত্ত্বেও, অমার্জনীয় এ উত্পীড়নের প্রতিবাদে বহু লোক জড়ো হয়েছেন, হচ্ছেন, ‘অবরোধে বন্ধ হয় রাস্তা, খুলে যায় পথ’, এই বিশ্বাসে জোট বাঁধছেন।
যদি সে অবরোধে শারীরিক ভাবে শামিল হতে না-ও পারি, আমরা ওঁদের সঙ্গেই আছি।