সম্পাদকীয় ২

অগত্যা

অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ নীতি নির্ধারণের স্বাভাবিক অস্ত্র নহে। উহা চরিত্রে অগণতান্ত্রিক। কিন্তু কয়লা ব্লকের বণ্টন এবং বিমা ব্যবসায় ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র মঞ্জুরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করিয়াছে, তাহাকে দুর্ভাগ্যজনক বলা চলে, অন্যায় বলা কঠিন। সরকার এই দুই ক্ষেত্রেই অধ্যাদেশের পথে চলিতে বাধ্য হইয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ নীতি নির্ধারণের স্বাভাবিক অস্ত্র নহে। উহা চরিত্রে অগণতান্ত্রিক। কিন্তু কয়লা ব্লকের বণ্টন এবং বিমা ব্যবসায় ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র মঞ্জুরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করিয়াছে, তাহাকে দুর্ভাগ্যজনক বলা চলে, অন্যায় বলা কঠিন। সরকার এই দুই ক্ষেত্রেই অধ্যাদেশের পথে চলিতে বাধ্য হইয়াছে। বাধ্যতার কারণ দুই প্রকার। প্রথমত, যে নীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এই দুই অধ্যাদেশ, অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে তাহা আবশ্যক ছিল এবং অবিলম্বে আবশ্যক ছিল। নীতি রচনা এবং প্রশাসন, উভয় ক্ষেত্রেই পূর্ববর্তী সরকারের দীর্ঘ অচলতা ভারতীয় অর্থনীতির অগ্রগতির পথে জগদ্দল পাথর হইয়া দাঁড়ায়, পাথর সরাইয়া বিনিয়োগে উত্‌সাহ দানের প্রতিশ্রুতি দিয়াই নরেন্দ্র মোদী ভোট চাহিয়াছিলেন। শাসনক্ষমতা হাতে পাইবার পরে ছয় মাস অতিক্রান্ত, ইহার পরেও তাঁহার পক্ষে হাত গুটাইয়া বসিয়া থাকা অনৈতিক হইত। জমি অধিগ্রহণের নূতন আইন-প্রস্তাবের মতো আরও একাধিক বিষয়ে দ্রুত সংস্কার জরুরি, সুতরাং সেই সব ক্ষেত্রেও অধ্যাদেশের পথ অনুসৃত হইলে বলা চলিবে না যে, মোদী কুপথগামী হইতেছেন।

Advertisement

বাধ্যতার দ্বিতীয় কারণ, সংসদে আইন প্রণয়নের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এই নীতিগুলি প্রণয়ন বা সংশোধন করা যায় নাই। সংসদের সদ্য-সমাপ্ত অধিবেশনে বিরোধী-প্রধান রাজ্যসভায় কার্যত কোনও কাজই হয় নাই, বিবিধ উপলক্ষে তুমুল শোরগোলেই ‘উচ্চতর কক্ষ’র এই যাত্রাটি সাঙ্গ হইয়াছে। উপলক্ষগুলি বহুচর্চিত, পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। এই নেতির সাধনায় শাসক এবং বিরোধী, কাহার দায় কতখানি, সেই তুল্যমূল্য বিচারও, বহুচর্চিত বলিয়াই, নিষ্প্রয়োজন। রাজ্যসভার কর্মফল ইহাই যে, আর্থিক সংস্কারের জন্য অত্যাবশ্যক বিলগুলি পাশ হইতে, বস্তুত আলোচিতই হইতে পারে নাই। অর্থাত্‌, নীতি প্রণয়নের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যর্থ হইয়াছে। সুতরাং: সরকারের অধ্যাদেশ ভিন্ন দ্বিতীয় উপায় কী ছিল? সংসদের যৌথ অধিবেশনের কথা উঠিয়াছিল বটে, কিন্তু প্রথমত তাহাও শোরগোলে পণ্ড হইবার আশঙ্কা ছিল; দ্বিতীয়ত, সংবিধান প্রণেতারা সেই উপায়টিকেও ব্রহ্মাস্ত্র হিসাবেই সাব্যস্ত করিয়াছিলেন, যখন-তখন ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করিতে নাই।

এ ক্ষেত্রে অধ্যাদেশের স্বপক্ষে একটি বাড়তি যুক্তিও আছে। যে দুইটি বিল অধ্যাদেশের রূপ ধারণ করিল, প্রধান বিরোধী দলগুলির তাহাতে বিশেষ আপত্তি ছিল না কয়লার ই-নিলাম লইয়া যথার্থ আপত্তির কোনও প্রশ্নই নাই, আর কংগ্রেস তো অতীতে শাসকের আসনে বসিয়া বিমায় বিদেশি বিনিয়োগ চাহিয়াছিল। অর্থাত্‌ সংসদে কাজকর্ম ঠিক মতো চলিলে এবং বিভিন্ন দল তাহাদের প্রকৃত অভিমত বা অবস্থান অনুসারে ভোট দিলে দুইটি বিলই পাশ না হইবার কোনও কারণ ছিল না। অতীতে বিজেপি একমত হইয়াও কংগ্রেস সরকারের কাজ পণ্ড করিয়াছে, এখন তাহার প্রতিবিম্ব দেখা গেল। সুতরাং অধ্যাদেশ দুইটি নীতিগত ভাবে সংসদের মর্যাদা লঙ্ঘন করিয়াছে, এমন কথা বলা কঠিন। নিতান্তই পদ্ধতিগত কারণে এই সংসদ-অতিরিক্ত পথে হাঁটিতে হইয়াছে। এই পরিণতি অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু সেই দুর্ভাগ্যের মুখোমুখি দাঁড়াইয়া বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়েই বলিতে পারে: এ আমার, এ তোমার পাপ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement