State news

এই একুশে কি দিশা নির্ণায়ক হবে?

জাতীয় রাজনীতির রথী-মহারথীদের চোখ-কান আজ সম্ভবত সতর্ক থাকবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠস্বরটা শোনার জন্য।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৩
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

তাঁর নজরে এ বার গোটা দেশ। গোটা দেশের নজরেও তিনি। এ বারের একুশে জুলাইয়ের তাৎপর্য চুম্বকে অনেকটা এমনই।

Advertisement

বরাবরই তৃণমূলের সর্ববৃহৎ বার্ষিক কর্মসূচি এই একুশেই। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগেই হোক বা পরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এবং তাঁর গোটা দলের কাছে শহিদ স্মরণ গভীর আবেগের। দলনেত্রী নিজে দেখভাল করেন এই কর্মসূচির প্রস্তুতি। আর গোটা রাজ্য থেকে বিপুল সংখ্যক সমর্থক প্রত্যেক বার সমবেত হন ধর্মতলার মঞ্চটার সামনে। অর্থাৎ এ রাজ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একুশে জুলাই তারিখে তৃণমূলের শহিদ স্মরণ বরাবরই বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মসূচি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারিখটার গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে রাজ্যে। কিন্তু ২০১৮ সালের এই একুশে জুলাইটার গুরুত্ব সম্ভবত আর বাংলায় সীমাবদ্ধ নেই। জাতীয় রাজনীতির রথী-মহারথীদের চোখ-কান আজ সম্ভবত সতর্ক থাকবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠস্বরটা শোনার জন্য।

বাম সরকারের পুলিশের গুলিতে ১৩ জনের মৃত্যু কলকাতার উত্তাল রাজপথে— সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বছর বছর মমতার শহিদ স্মরণ। মমতার আক্রমণের মূল্য লক্ষ্য যে বামেরাই হবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে একুশের মঞ্চ থেকে বামেরাই ছিলেন মমতার সবচেয়ে বড় নিশানা। কিন্তু সময় বদলেছে, রাজনৈতিক সমীকরণ বদলেছে। সিপিএম বা বামফ্রন্ট এ রাজ্যে হীনবল, হতাশ্বাস। একের পর এক নির্বাচনে প্রধান বিরোধী পক্ষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটছে বরং বিজেপির। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতও বাড়ছে বাংলার তৃণমূল সরকারের। ২০১৪ সালের পর থেকে তাই মমতার বিজেপি বিরোধিতার সুরও চড়েছে ক্রমশ। ২০১৭ সালের শহিদ স্মরণ মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট আহ্বান ছিল— দিল্লি থেকে উৎখাত করা হোক নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে, দখল নেওয়া হোক দিল্লির। সেই দিল্লি দখলের লক্ষ্য নিয়ে গত এক বছরে অনেক পথ হেঁটেছেন তৃণমূলনেত্রী। ভারতের নানা প্রান্তের নানা দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়েছেন, বৈঠক করেছেন তিনি। জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী ঐক্যের যে ছবি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, তার অন্যতম স্রষ্টা তিনি। অতএব ২০১৮-র একুশে জুলাইতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি বিরোধী তথা মোদী বিরোধী সুর যে আরও ঝাঁঝালো হবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এ বারের কর্মসূচির নাম ‘অঙ্গীকার দিবস’ হওয়ায় জল্পনা আরও বেড়েছে। কী অঙ্গীকার করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? দিল্লি থেকে শুধু মোদীকে উৎখাত করার অঙ্গীকার? নাকি দিল্লির রাজনীতিতে তৃণমূলের নতুন কোনও ভূমিকার অঙ্গীকার? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করেননি। স্পষ্ট হবে আজকের ভাষণে।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

মাত্র পাঁচ দিন আগে বাংলায় এসে সভা করে গিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তৃণমূলকে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেছেন মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও সে সব মন্তব্যের কোনও জবাব দেননি। একুশের মঞ্চ থেকেই জুৎসই জবাবটা দেবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী? প্রশ্ন রয়েছে গোটা রাজনৈতিক শিবিরে। স্পষ্ট হবে আজকের ভাষণে।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের ‘অঙ্গীকার’ করবেন দলনেত্রী, অপেক্ষায় একুশের সমাবেশ

আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক সমীকরণটা কোন পথে এগোবে, আভাস মিলতে পারে মমতার এই অঙ্গীকার দিবস থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন তিনি জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী ঐক্য চান, বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে একত্র করতে চান। তবে মমতা এও স্পষ্ট করেছেন যে, তাঁর প্রস্তাবিত জোটে কংগ্রেসের কোনও স্থান নেই, কংগ্রেসকে আলাদাই লড়তে হবে। বিরোধী জোটে কংগ্রেস সামিল হলে জোটের নেতৃত্ব কংগ্রেসের হাতেই যাবে, এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, শুধুমাত্র কংগ্রেসের নেতৃত্বেই বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এর কোনও মানে নেই, কংগ্রেস এই মুহূর্তে বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ার অবস্থাতেই নেই। এ নিয়ে মমতার সঙ্গে মতের ফারাক রয়েছে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দলের নেতার। শরদ পওয়ার, লালু প্রসাদ, করুণানিধিরা মমতাকে সঙ্গে চান, কিন্তু কংগ্রেসকে নেতৃত্বে চান। এই মতানৈক্যের জেরে এখনও পর্যন্ত বিরোধী জোটের কোনও চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হয়ে উঠতে পারেনি। চূড়ান্ত রূপরেখাটা কী হতে চলেছে, বিজেপি বিরোধীতার স্বার্থে মমতা কি জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে চলতে প্রস্তুত, নাকি কংগ্রেসকে বাদ রেখে অন্য বিরোধী দলগুলির জোটের প্রস্তাবেই তিনি অনড় থাকছেন— এ সব প্রশ্নের স্পষ্ট কোনও জবাব হয়ত আজ পাওয়া যেতে পারে।

এ সব কথা মাথায় রেখেই জাতীয় রাজনীতির রথী-মহারথীরা আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা বুঝে নেওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের রণদুন্দুভি কি মমতা শহিদ স্মরণের মঞ্চ থেকেই বাজিয়ে দেবেন? এ প্রশ্নেরও জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকেই। নরেন্দ্র মোদী মেদিনীপুরের জনসভা থেকে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে নির্বাচনী নির্ঘোষ স্পষ্ট ছিল। পাল্টা হুঙ্কারেই কি নিজের দলের প্রচারাভিযানটারও সূচনা মমতা করে দেবেন আজ? উত্তরের অপেক্ষায় গোটা বাংলা, অপেক্ষায় দেশও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement