Coronavirus

শিক্ষার অনধিকার

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন, শিক্ষা বিষয়টি কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী একপার্শ্বিক ঘোষণা করিলেই সব কাজ সম্পন্ন হইয়া যায় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০১:৫২
Share:

লকডাউন প্রত্যাহৃত হইবার পরেও অনলাইন শিক্ষার অভ্যাস জারি রাখিতে হইবে, জানাইলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। গৃহবন্দিত্ব এবং দূরত্ব বজায় রাখা যে সমাজের নূতন নিয়ম, ডিজিটাল ব্যবস্থা তাহার স্বাভাবিক অঙ্গ হইয়া উঠিবে, যাহাকে বলে ‘নিউ নর্ম্যাল’। ইন্টারনেট তখন আর বিকল্প নহে, বাধ্যতা। সেই অবশ্যম্ভাবিতার কথা মাথায় রাখিয়া ইহাতে পটু হইয়া উঠা যেমন নাগরিকদের দায়িত্ব, ব্যবস্থা আরও পোক্ত করিবার দায়িত্বটি সরকারের। মুশকিল হইল, এই নতুন স্বাভাবিকতাকেও কেন্দ্রের শাসকরা তাঁহাদের পুরাতন, পরিচিত ছদ্মজাতীয়তার ছাঁচে ঢালিয়া লইতে উন্মুখ। ‘এক’ দেশে ‘এক ভাষা’, ‘এক খাদ্যাভ্যাস’, ‘এক করব্যবস্থা’ ইত্যাদির পর হাজির হইয়াছে ‘এক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম’ এবং ‘এক চ্যানেল’ প্রকল্প। সমগ্র দেশের স্কুলশিক্ষার জন্য ‘দীক্ষা’ নামক এক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈয়ারি হইবে। প্রত্যেক শ্রেণির জন্য থাকিবে একটি করিয়া টিভি চ্যানেল। অনলাইন লেখাপড়ার কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাটি ‘পিএম ই-বিদ্যা’ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত হইবে।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন, শিক্ষা বিষয়টি কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী একপার্শ্বিক ঘোষণা করিলেই সব কাজ সম্পন্ন হইয়া যায় না। প্রতি পদক্ষেপে অপর অংশীদারের পরামর্শ না থাকিলে সেই উদ্যোগ অসম্পূর্ণ। কথাটি সত্য। দেশের প্রতিটি অঞ্চল নিজস্ব প্রয়োজন, চাহিদা, ভাবনা অনুসারে পাঠ্যক্রম তৈয়ারি করে। বহুবিধ সংস্কৃতির দেশকে একটি খাপে আঁটাইয়া দেওয়া কাম্য নহে। আরও একটি জরুরি প্রশ্ন থাকিয়া যায়। অনলাইন লেখাপড়ার পূর্বশর্ত কি পূরণ হইয়া গিয়াছে? প্রত্যেক পড়ুয়ার ঘরে ইন্টারনেট সংযোগ, স্মার্ট ডিভাইস এবং টেলিভিশন সেট পৌঁছাইয়াছে? পাঁচ বৎসর ধরিয়া যে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র গল্প শুনা যায়, তাহার অগ্নিপরীক্ষা তো এখনও বাকি। প্রতিটি গ্রামে দ্রুত গতির ইন্টারনেট পৌঁছাইবার পূর্বেই নূতন মঞ্চের প্রস্তুতি চলিতেছে। ছাত্রছাত্রীদের এক বিপুল অংশকে বাদ রাখিয়াই ভারতের শিক্ষা স্মার্ট হইবে বুঝি?

নরেন্দ্র মোদীরা যত বার ‘এক দেশ’-এর কথা বলেন, তত বার স্পষ্ট হইয়া যায় যে দেশ কাহাকে বলে, তাঁহারা বোঝেন নাই। গোটা দেশ জুড়িয়া যখন এই অবিশ্বাস্য মানবিক সঙ্কট চলিতেছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই ‘ই-বিদ্যা’র ঘোষণাটি— কোভিড-১৯’সংক্রান্ত প্যাকেজের অঙ্গ হিসাবেই— বুঝাইয়া দেয়, সেই বিপদ শাসককে স্পর্শ করে নাই। নচেৎ, তাঁহারা ভাবিতেন, যে আট কোটি অভিবাসী শ্রমিক লকডাউনের ফলে সম্পূর্ণ বিপন্ন, এই মুহূর্তে যাঁহাদের সন্তানের হাতে একটি বিস্কুট তুলিয়া দেওয়ারও হয়তো ক্ষমতা নাই, তাঁহাদের এই ‘ই-বিদ্যা’র আখ্যান শোনানো অপরাধ। বলিয়া দেওয়া যে তাঁহাদের সন্তানাদির আর শিক্ষায় অধিকার থাকিবে না। যাঁহারা অভিবাসী নহেন, অথচ কাজ হারাইয়াছেন বা সেই আশঙ্কা তীব্র, তাঁহাদের সন্তানও কী ভাবে এই নব্য স্বাভাবিক শিক্ষার পরিসরে প্রবেশ করিবে, অর্থমন্ত্রী তাহা বলেন নাই। দেশ বলিতে তাঁহারা যে সম্পন্ন জনগোষ্ঠীকে জানেন, যে পরিসরে ‘শিশুমাত্রেই প্রযুক্তিপ্রেমী’, তিনি শুধু সেই পরিসরের জন্যই নীতি রচনা করিয়াছেন। যাহা হইতে পারিত সকল ভারতীয় শিশুর উত্তরণের পথ, নিজস্ব অবিবচেনায় সরকার তাহাকে শুধু ক্ষমতাবানদের কুক্ষিগত করিয়া ফেলিল। আরও এক বার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement