বিপজ্জনক

দিল্লির দূষণ এবং তজ্জনিত কারণে জনস্বাস্থ্যের অবক্ষয়ের বিষয়টি যে শুধুমাত্র উত্তর ভারতে আবদ্ধ নহে, সমগ্র দেশের মাথাব্যথার কারণ, সেই সত্যটি এত দিনে সরকার উপলব্ধি করিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০০
Share:

ফাইল চিত্র

কাশিতেছে দিল্লি। দূষণের কাশি। কাশির আওয়াজ এমনই প্রবল যে তাহা দেশের গণ্ডি ছাড়াইয়া আন্তর্জাতিক কর্ণপটহেও আঘাত করিয়াছে। পরিবেশবিদগণ তো বটেই, হলিউড তারকা তথা পরিবেশপ্রেমী লিয়োনার্দো ডিক্যাপ্রিয়োও সরব হইয়াছেন দিল্লির মাত্রাতিরিক্ত দূষণ লইয়া। তুলিয়া ধরিয়াছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত এক ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান— প্রতি বৎসর বায়ুদূষণজনিত কারণে ভারতে প্রায় পনেরো লক্ষ মানুষ মারা যান। দিল্লিবাসী সারসত্যটি বুঝিয়া লইয়াছেন— প্রতি বৎসর শীত পড়িবার মুখে শহর গ্যাসচেম্বার হইবে, বন্ধ হইবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্ষতিগ্রস্ত হইবে ব্যবসা-বাণিজ্য, জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষিত হইবে শহরে। সুপ্রিম কোর্টের তিরস্কারেও প্রশাসনের হুঁশ ফিরে নাই।

Advertisement

দিল্লির দূষণ এবং তজ্জনিত কারণে জনস্বাস্থ্যের অবক্ষয়ের বিষয়টি যে শুধুমাত্র উত্তর ভারতে আবদ্ধ নহে, সমগ্র দেশের মাথাব্যথার কারণ, সেই সত্যটি এত দিনে সরকার উপলব্ধি করিয়াছে। সেই কারণেই সম্প্রতি লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সময় বরাদ্দ হইয়াছিল দিল্লির দূষণ লইয়া আলোচনার জন্য। লক্ষণীয়, শুধুই দিল্লির দূষণ লইয়া আলোচনা। অন্য শহরের দূষণ সেই আলোচনায় স্থান পায় নাই। যদিও, দূষণের শিকার দেশের প্রায় সমস্ত শহরই। সংসদীয় আলোচনায় কেন শুধুমাত্র দিল্লি গুরুত্ব পাইল, অন্য শহরগুলি নহে, তাহার প্রধান কারণ, দিল্লি দেশের রাজধানী। শুধুমাত্র মন্ত্রী, সাংসদদের ঠিকানা নহে, দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসস্থানও বটে। ফলে, দিল্লি অসুস্থ হইলে দেশ নড়িয়া বসিবেই। কিন্তু শুধুমাত্র এই কারণে অন্য শহরগুলি বাদ পড়িতে পারে না। দূষণই যদি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়, তবে অন্যান্য শহরের দূষণকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কলিকাতার দূষণ লইয়া যৎসামান্য শব্দ খরচ হয়। অথচ, তথ্য বলিতেছে, কলিকাতা খুব পিছাইয়া নাই। এমনকি দিনবিশেষে কলিকাতার দূষণ দিল্লিকেও পিছনে ফেলিয়া দেয়। অথচ, সরকারি স্তরে তাহা লইয়া হেলদোল নাই। যেমন, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার মুখে মাস্ক পরিয়া সংসদে প্রবেশ করিয়াছিলেন। দিল্লির দূষণ প্রসঙ্গে গাঙ্গেয় বঙ্গের দূষণের কথাও তিনি বলেন। কিন্তু তাঁহারই রাজ্যে সরকার দূষণ লইয়া কার্যত মুখে কুলুপ আঁটে কেন, সেই উত্তর কে দিবে?

ইহার কোনও সদুত্তর যে নাই, তাহা সরকারি কাজকর্ম দেখিলেই বুঝা যায়। দিল্লির লোকসভায় দিল্লির দূষণ লইয়া আলাদা অধিবেশন ডাকিতে হয়, কিন্তু কলিকাতার বিধানসভায় কলিকাতার দূষণ লইয়া বিশেষ আলোচনা শুনা যায় না। অথচ, দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রধান দায়িত্ব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং পুরসভার। সেই দায়িত্ব পালনে তাঁহারা চূড়ান্ত ব্যর্থ। যে ফসলের গোড়া পুড়াইয়া দূষণ সৃষ্টির প্রসঙ্গ বারংবার দিল্লির প্রেক্ষিতে উঠিয়া আসে, সেই কাজই কলিকাতার আশপাশের জেলাগুলিতে নিয়মিত হয়। সরকারের হুঁশ নাই। দোষ কলিকাতাবাসীরও, তাঁহারা দূষণের ভয়াবহতা লইয়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করিতে পারেন নাই। দূষণকে তাঁহারা জীবন-মৃত্যুর নির্ধারক হিসাবে নহে, স্বাভাবিক ঘটনারূপে গ্রহণ

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement