প্রতীকী ছবি।
করোনা ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস। এর অনেকগুলি প্রজাতি আছে। ২০১২ সালেও করোনা ভাইরাস গোত্রীয় মার্স করোনা ভাইরাস মধ্যপ্রাচ্যে মহামারীর আকার নিয়েছিল। ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে চিনের উহান শহরে কোভিড ১৯ বা নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। তারপর তা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনগুলি মূলত শ্বাসনালি ও মুখগহ্বরের এপিথেলিয়ামে প্রাথমিক ভাবে আটকে যায়। তার পর তা রক্তজালকে প্রবেশ করে এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষ, যেমন টি লিম্ফোসাইট, বি লিম্ফোসাইট, ম্যাক্রোফাজ প্রভৃতিকে অকেজো করে। আমাদের শরীরের নিজস্ব কোষগুলির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত করে। ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়।
ফুসফুসের কোষগুলি এর আক্রমণে মৃত কোষে পরিণত হলে সেখানে রক্ত, প্রোটিন ইত্যাদি জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে যায়। ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কোভিড ১৯ হৃদপিণ্ডের পেশির কোষগুলিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং তাতে হৃদপিন্ডে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পরীক্ষাগারে দিন-রাত গবেষণা চলছে কোভিড-ভ্যাকসিন নিয়ে।
ইতিমধ্যে রাশিয়া ভ্যাকসিন তৈরির দাবি করেছে। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ফার্মাসিউটিক্যাল জায়েন্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল চলছে। অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, ভ্যাকসিন হাতে পেতে এখনও বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। কিছু-কিছু ওষুধ করোনার চিকিৎসায় ‘ইনভেস্টিগেশন্যাল থেরাপি’ হিসাবে ব্যবহার শুরু হয়েছে। সংক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে সংক্রমিতের পরিবারের লিখিত অনুমতি ক্রমে চিকিৎসককে রেমডেসিভির ইনজেকশন ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার।
অতি সম্প্রতি বেশ কিছু ওষুধ নির্মাতা সংস্থা মৃদু ও মাঝারি উপসর্গযুক্ত করোনা রোগীর জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক নামে ফ্যাভিপিরাভির ট্যাবলেট বাজারে এনেছে। নির্দেশ অনুসারে রোগীকে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত তা খাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। ‘কারেন্ট মেডিক্যাল ডায়াগনসিস অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট’ (২০২০) বইটিতে উল্লেখ আছে, রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভির দু’টোই ইবোলা সংক্রমণের সময় ব্যবহার হয়েছিল। বইটিতে আরও বলা আছে, সংক্রমণের তৃতীয়-চতুর্থ দিনের মাথায় রেমডেসিভির ১০০% ও ফ্যাভিপিরাভির ৬০% মতো কার্যকরী ছিল সংক্রমণের বিরুদ্ধে।
ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগগুলি কীভাবে কাজ করে সে প্রসঙ্গে সিঙ্গুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান দেবজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভাইরাসে যে প্রোটিন থাকে তা ভাইরাসের জীবনচক্র ও ভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণের জন্য প্রয়োজন। অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ তাদের রাসায়নিক উপাদানের বিশেষ প্রভাবে এই প্রোটিনের স্বাভাবিক উৎপাদনে বাধা দেয়। তখন ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।’’
করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে ফ্যাভিপিরাভির কতটা কার্যকর তা বলতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলেও মত অনেক চিকিৎসকের। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে কোনও ধরনের অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক না। তাতে উল্টে শরীরের নানা সমস্যা তৈরির আশঙ্কা থেকে যায়।’’ তবে রোগ আটকাতে গেলে সবার আগে রোগের কারণকে আটকাতে হবে, তাই ভ্যাকসিন, ওষুধ যাই আসুক আমাদের মাস্ক, স্যানিটাইজার ও সামাজিক দূরত্ব এখন ভুলে গেলে চলবে না।