লক্ষ্মীলাভ

অনুমান, মজবুত হইবার কারণ দুইটি। প্রথমত, উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক এলাকার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পর্যটনের অনুকূল নহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০০:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

পর্যটনবান্ধব হইয়াছে পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের পর্যটন শিল্পের মোট আয়ের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অনুপাতটি বাড়িতেছে। শুধুমাত্র আয়বৃদ্ধিই নহে, অন্তর্দেশীয় পর্যটকদের সংখ্যার বিচারে পশ্চিমবঙ্গ পিছনে ফেলিয়াছে মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত এবং রাজস্থানের মতো বহুখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলিকেও। বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যার বিচারেও রাজ্যের স্থানটি অবহেলার নহে। সুতরাং, সামগ্রিক ভাবে পর্যটন মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গের আসনটি যে পূর্বাপেক্ষা মজবুত হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই।

Advertisement

অনুমান, মজবুত হইবার কারণ দুইটি। প্রথমত, উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক এলাকার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পর্যটনের অনুকূল নহে। বিহার, ওড়িশার মতো পূর্বের অন্য রাজ্যগুলিও নূতন করিয়া পর্যটনের উন্নয়নে ঝাঁপাইয়া পড়ে নাই। প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সমস্যা বা ঔদাসীন্য পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অনুঘটকের কাজটি করিয়াছে। দ্বিতীয় কারণটি রাজ্যের নিজস্ব কৃতিত্ব। অনস্বীকার্য যে, রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন পূর্ববর্তী জমানার তুলনায় উন্নততর। বিশেষ করিয়া রাস্তাঘাটের গুণমানে লক্ষণীয় অগ্রগতি ঘটিয়াছে। অতীতের তুলনায় পরিচ্ছন্ন হইয়াছে দিঘা, দার্জিলিঙের মতো জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলি। এবং সৌন্দর্য রক্ষায় বাড়তি নজরও যে কার্যকর হইয়াছে, তাহা ফলেই প্রমাণিত। তারকাখচিত বিজ্ঞাপনের পুরানো পথ ছাড়িয়া নিজস্ব আঞ্চলিক বৈচিত্র তুলিয়া ধরিবার পরিকল্পনাও হয়তো কার্যকর। সুফল ধরিয়া রাখিতে সচেষ্ট রাজ্য সরকারও। আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের লইয়া এক সমন্বয়কারী দল গঠিত হইয়াছে, যাহারা নিজ দেশের পর্যটকদের আনিবার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করিবে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

Advertisement

তবে আত্মতুষ্টির জায়গা নাই। বহু ক্ষেত্রে উন্নয়ন এখনও বাকি। যেমন, উত্তরবঙ্গ। সেখানে অসংখ্য ছোট ছোট জনপদ পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত। কিন্তু বিদ্যুৎ এবং পানীয় জলের মতো পরিকাঠামোগত সমস্যা রহিয়াছে। কিছু কিছু অঞ্চলে রাস্তাঘাটের উন্নতির সুযোগ রহিয়াছে। দ্বিতীয়ত, সরকারি টুরিস্ট লজগুলির ব্যবস্থাপনায় বিস্তর ফাঁক। বাহিরের কাঠামোটি পূর্বাপেক্ষা শ্রীমণ্ডিত হইয়াছে ঠিকই, কিন্তু অভ্যন্তরীণ কাজকর্মে জীর্ণতার ছাপ স্পষ্ট। বস্তুত, ‘হসপিটালিটি’ বা ‘অতিথিসেবা’র প্রকৃত অর্থটি এই রাজ্য এখনও শিখিয়া উঠিতে পারে নাই। ফলে সরকারি অফিস, হাসপাতাল এবং পরিবহণের নিকট হইতে যে তিক্ত অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হয়, সরকারি অতিথিশালার ক্ষেত্রেও অন্যথা হয় না। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করিতে হইলে সর্বাগ্রে ‘অতিথিসেবা’র পাঠটি রপ্ত করিতে হইবে। তাহার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, কর্মীদের বেতনকাঠামো সংশোধনের কাজটি সরকারেরই। নজর দিতে হইবে খাবারের মান, এবং প্রতিটি ঘর-সহ রন্ধনশালার পরিচ্ছন্নতার দিকে। পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত না হইলে বাহিরের চাকচিক্য অচিরেই নিষ্ফল প্রমাণিত হইতে পারে। সর্বোপরি, পর্যটনকেন্দ্রগুলিকে পরিবেশবান্ধব করিয়া তুলিতে হইবে। প্রশ্ন উঠিয়াছে, সমুদ্রে কংক্রিটের পাড় বা ম্যানগ্রোভের মধ্যে হোটেলের সিদ্ধান্ত আদৌ পরিবেশবান্ধব কি না। প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিকও। পর্যটকদের একাংশ, বিশেষত বিদেশিদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বেশি। পরিবেশকে খুন করিয়া শুধুই লাভের চিন্তা করিলে এই অংশটিকে হারাইতে হইবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement