সম্পাদকীয় ২

পথের ঝুঁকি

নাগরিকের অকারণ ঝুঁকি লইবার প্রবণতা, বার বার সতর্কবার্তা সত্ত্বেও অসাবধানতা, এগুলি বহু প্রাণহানির কারণ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

পশ্চিমবঙ্গে পথ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা কমিয়াছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়াছে ৯৯টি, কলিকাতায় ৭৮টি। পথ নিরাপত্তার যে প্রচার পুলিশ চালাইতেছে, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ নামে সে উদ্যোগ অতএব কৃতিত্বের দাবি করিতে পারে। তাহাদের অভিনন্দন জানাইতে সমস্যা নাই, কিন্তু তাহাতে স্বস্তি বা আনন্দের ভাগ থাকিবে সামান্যই। কলিকাতায় পথ দুর্ঘটনায় ৩২৯টি মৃত্যু গত চার বৎসরে সর্বনিম্ন ঠিকই, কিন্তু তাহার অর্থ প্রতি সপ্তাহে ছয় জনেরও কিছু অধিক ব্যক্তি প্রাণ হারাইয়াছেন, রাজ্যের হিসাব (৪০৭) দিনে এক জন। রাজ্যের পথ দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সত্তর শতাংশই হইতেছে কলিকাতায়। মৃত্যুর সংখ্যা কমিলেও অনুপাতের রদবদল ঘটে নাই। কলিকাতায় যাঁহাদের মৃত্যু ঘটিয়াছে, তাহার অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন পথচারী, তাঁহাদের সংখ্যা ১৭১। কলিকাতার পথে মৃত্যু হয়তো কমিয়াছে, কিন্তু শহরের রাস্তা আগের তুলনায় নিরাপদ, এমন বলা চলে না। আগের মতোই রেষারেষি চলিতেছে বাসগুলির মধ্যে, পুলিশের রক্তচক্ষুকে তাহারা ভয় করিতেছে, এমন কোনও ইঙ্গিত নাই। মোড়ে মোড়ে লালবাতির সংখ্যা বাড়িতেছে, কিন্তু পথচারীরা বাতি লাল হইবার জন্য অপেক্ষা করিতে অভ্যস্ত নহেন। জেব্রা ক্রসিং আজও যথেষ্ট নাই, থাকিলেও তাহার ব্যবহার নাই।

Advertisement

নাগরিকের অকারণ ঝুঁকি লইবার প্রবণতা, বার বার সতর্কবার্তা সত্ত্বেও অসাবধানতা, এগুলি বহু প্রাণহানির কারণ। হেলমেট না পরিয়া মোটরসাইকেল চালাইবার প্রবণতা, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালাইবার জেদ তাহার দৃষ্টান্ত। কিন্তু এই অপরিণামদর্শী ব্যক্তিদের দিয়াই দুর্ঘটনার উচ্চ হারের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা মিলিবে না। কলিকাতার রাস্তায় চলিবার অভিজ্ঞতা ইহাই বলে যে, ট্রাফিক সিগন্যাল গাড়ির কথা ভাবিয়া বদল করা হয়, পথচারীর কথা ভাবিয়া নহে। বড় বড় মোড়গুলি অর্ধেক পার হইবার পূর্বেই হাঁটিবার সবুজ সংকেত মিলাইয়া যয়। কখনও এত দীর্ঘ সময় পথচারীদের জন্য তাহা লাল হইয়া থাকে, যে ট্রাফিক পুলিশকে সিগন্যাল সত্ত্বেও হাত তুলিয়া পারাপার করাইতে হয়। অতএব পুলিশ না থাকিলে প্রাণের ঝুঁকি লইয়াই পার হইতে হয়। পরিসংখ্যানে প্রকাশ, কলিকাতার রাস্তায় প্রাণহানির পঁয়ত্রিশ শতাংশ ঘটিয়াছে রাতে, যখন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ বিরল।

ইহাতে ইঙ্গিত মেলে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের যে ধারাটি এ শহরে দৃশ্যমান, তা অতিরিক্ত পুলিশ-নির্ভর এবং জরিমানাসর্বস্ব। পুলিশকে যাহারা ভয় পায় না, ট্রাফিক নিয়ম তাহারা অনায়াসে ভঙ্গ করে। ইহাদের মধ্যে প্রধান বাসচালক ও অটোচালক। বিশেষত বাসচালকদের জরিমানা হইলে টাকা যেহেতু মালিককে দিতে হয়, এবং অন্তত তিন বার অপরাধ না হইলে লাইসেন্স বাতিল হয় না, তাই চালকরা বেপরোয়া হইতে পারে। আগে পৌঁছাইবার নিয়মও তাহাদের রেষারেষি করিতে প্রণোদিত করে। পথদুর্ঘটনায় মৃত্যুর নিরিখে ভারতের অবস্থা ভয়ানক। প্রতি ঘণ্টায় পঞ্চান্নটি দুর্ঘটনা ঘটে, মৃত্যু হয় সতেরো জন ব্যক্তির। ২০১৬ সালে দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারাইয়াছিলেন, প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ গুরুতর আহত হইয়াছেন, এবং ইহাদের একটি বড় অংশই তরুণ। কেবল পুলিশ বাড়াইয়া ইহার পরিবর্তন হইবে না। নিয়মবিধি, প্রযুক্তি ও প্রচারের সুপরিকল্পিত ব্যবহার প্রয়োজন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement