মাথা কেটে নেওয়ার হুমকি দিলেন এই বিজেপি বিধায়ক।
অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়ছে। কট্টরবাদের হাত ধরে ধর্মীয় উৎসব হয়ে উঠছে রাজনৈতিক, ধর্মাচরণের নামে অস্ত্র আর সংখ্যাধিক্য দেখানোর উৎসব হচ্ছে, ধর্মীয় বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার নামে ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। তাই বেনজির দৃশ্যবলীর জন্ম দিয়ে রামনবমীর দিন বাংলার নানা প্রান্তে শত শত অস্ত্রে সজ্জিত মিছিল হল। আবার তেলঙ্গানার কোনও কট্টরবাদী বিধায়ক হুমকি দিলেন, অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরিতে যাঁরা বাধা দেবেন, তাঁদের সকলের মাথা কেটে নেওয়া হবে।
কট্টরবাদ কিন্তু এ ভাবেই মাথাচাড়া দেয়। প্রথমে গণতান্ত্রিক পরিসরের মধ্যে থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে তার কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে। তার পরে ইদানীং কালের মহাশক্তিধর মাধ্যম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংকে কাজে লাগিয়ে কট্টরবাদ চারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে এবং হয়ে চলেছে। সব শেষে কট্টরবাদের প্রতি বৃহত্তর সামাজিক অনুমোদন হাসিল করার প্রয়াস শুরু হয়েছে। কট্টরবাদীরা সফলও হয়েছেন কিয়দংশে। রামনবমীর সশস্ত্র মিছিল সম্পর্কে কোনও সহ-নাগরিককে আজ প্রশ্ন করলেই শুনতে হচ্ছে পাল্টা প্রশ্ন— মহরমে অস্ত্র হাতে মিছিল হয় যখন, তখন প্রশ্ন ওঠে না কেন? এক নেতি যে কখনও আর এক নেতিকে বৈধতা দিতে পারে না, সেই যুক্তি আর কানে তুলতে চান না অনেকেই। কট্টরবাদীদের সাফল্য এখানেই।
কট্টরবাদী গোঁড়ামিকে আমাদের দেশ প্রশ্রয় দিয়েছে এত দিন ধরে, তা কিন্তু নয়। তার মোকাবিলার চেষ্টাই হয়েছে বরং। কিন্তু মোকাবিলার সেই পন্থাতেই মারাত্মক গলদ থেকে গিয়েছিল সম্ভবত। কট্টরবাদী গোঁড়ামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে প্রগতিশীলতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রগতিশীলতার নামে যা হয়েছে, সেও অনেকাংশেই আর এক কট্টরবাদী গোঁড়ামিই। হিতে বিপরীত হয়েছে। বিপন্ন এক সময়ে এসে পৌঁছেছি আমরা।
সময়টা আজ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ধর্মীয় ভাবাবেগে অনাবশ্যক প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গেলেও বিপ্রতীপ প্রতিক্রিয়া জন্ম নিচ্ছে। দীর্ঘকালীন ভ্রান্তির মাশুল এ। চোকানো সহজ কাজ নয়। কিন্তু চোকাতে হবেই। বহুত্বের ভারত, বৈচিত্রের ভারত, ঐক্যের ভারতে বিশ্বাস রাখেন যাঁরা, তাঁদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এ সঙ্কটের মোকাবিলায়। কিন্তু সে পদক্ষেপটাও হতে হবে অত্যন্ত সাবধানী, অত্যন্ত সুচিন্তিত।