নিষ্ফল বৈঠক

সময় খরচ হইয়াছে বরাদ্দ অপেক্ষা চল্লিশ ঘণ্টারও অধিক। শব্দ খরচ হইয়াছে তদনুপাতে। অথচ মাদ্রিদের সদ্যসমাপ্ত জলবায়ু বৈঠক নিষ্ফলা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩৭
Share:

মাদ্রিদে জলবায়ু বৈঠক। ছবি: এপি

সময় খরচ হইয়াছে বরাদ্দ অপেক্ষা চল্লিশ ঘণ্টারও অধিক। শব্দ খরচ হইয়াছে তদনুপাতে। অথচ মাদ্রিদের সদ্যসমাপ্ত জলবায়ু বৈঠক নিষ্ফলা। স্পেনের রাজধানী শহরে আয়োজিত এই বৎসরের জলবায়ু সম্মেলনটিই ইতিহাসে দীর্ঘতম। অথচ প্রায় দুইশত দেশের প্রতিনিধি এক পক্ষকাল ধরিয়া সময় অতিবাহিত করিয়াও বর্তমান জলবায়ু সঙ্কট এবং দেশগুলির সদিচ্ছার মধ্যের বিশাল দূরত্ব কমাইতে পারিলেন না। যত দিন যাইতেছে, পরিবেশ প্রশ্নে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মতানৈক্য প্রবলতর হইতেছে। মাদ্রিদ বৈঠকের ব্যর্থতা সেই অনৈক্যের ছবিটিই আরও কিছুটা তীব্র করিল এবং জলবায়ু সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করিল।

Advertisement

কার্বন নিঃসরণের মাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে প্যারিস চুক্তি বৈপ্লবিক, কারণ এই চুক্তিতেই নিঃসরণের বাজারের ধারণাটি খুলিয়া দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক পরিবেশ (কূট)নীতি যে ঐতিহাসিক দায়িত্বের কথা মাথায় রাখিয়া চলিত, তাহা হইতে বিচ্যুত হইবার পর বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পথটি খোলে প্যারিস চুক্তিই। কিন্তু, তাহার পর চার বৎসর কাটিয়া গেল। সেই বাজারটি কী ভাবে চলিবে, তাহার রূপরেখা নির্ধারণ করিতে মাদ্রিদ বৈঠকও ব্যর্থ। দায়িত্বটি ২০২০ সালের বৈঠকের ঘাড়ে চালান করিয়া দেশনায়করা স্ব স্ব দেশে ফিরিয়াছেন। মুশকিল হইল, বিশ্ব উষ্ণায়ন এই রাজনীতির খেলা মানিয়া চলিবে না। এক বৎসর সময় নষ্ট হইবার অর্থ, আরও এক বৎসর বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদের জন্য ময়দান খালি পড়িয়া থাকিল। দেশগুলি প্রমাণ করিল, প্রশ্ন যেখানে পৃথিবী নামক গ্রহটির ভবিষ্যতের, তখনও তাহারা নিজেদের সঙ্কীর্ণ স্বার্থ ছাড়িয়া নড়িতে নারাজ। পরিবেশ বৈঠকের ভবিষ্যৎ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হইবার যথেষ্ট কারণ মাদ্রিদে মিলিল।

সুতরাং, শিয়রে শমন। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্য প্রমাণ করিয়া বিভিন্ন উপকূলবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হইতেছে। বিশ্বজুড়িয়া তাপপ্রবাহের ঘটনা বৃদ্ধি পাইতেছে, বাস্তুতন্ত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষিত হইতেছে। পরিবেশ প্রতিনিয়ত উদাহরণ দিতেছে যে, বিরূপ প্রকৃতি উন্নত, উন্নয়নশীল, দরিদ্রের মধ্যে ভেদ করে না। গ্রেটা থুনবার্গের মতো আগামী প্রজন্মের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়িয়াছে তাবড় রাজনীতিকদের এ-হেন অপদার্থতা। অথচ, নির্বিকার মহা শক্তিধরেরা। চিন এখনও কয়লা-নির্ভর প্লান্টের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি করিয়া চলিতেছে, আমেরিকার কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ তিন বৎসর হ্রাস পাইবার পর গত বৎসরই ফের বৃদ্ধি পাইয়াছে, এবং ব্রাজিল অরণ্য ধ্বংসকে বৈধতা দানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখিয়াছে। পিছাইয়া নাই ভারতও। জলস্তর বৃদ্ধির কারণে ভয়ঙ্কর বিপদগ্রস্ত সুন্দরবন এবং উপকূলবর্তী অঞ্চল। তাহা সত্ত্বেও সে এনডিসি (ন্যাশনালি ডিক্লেয়ারড কমিটমেন্টস) পর্যালোচনার জন্য ২০২৩ সাল অবধি সময় চাহিয়াছে। আশার কথা একটিই, উন্নয়নশীল এবং তুলনায় কম উন্নত দেশগুলি আগামী বৎসরের মধ্যে তাহাদের এনডিসি লইয়া অগ্রসর হইতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সত্য যে, এই দেশগুলির সম্মিলিত কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ উন্নত দেশগুলির তুলনায় বহু কম এবং শুধুমাত্র তাহাদের প্রতিজ্ঞায় পরিবেশ-চিত্রটি বিশেষ পরিবর্তিত হইবে না। তথাপি বিপুল অন্ধকারে আলোর এই রেখাটুকুও তো যথেষ্ট।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement