Budget 2020

কাহার সুবিধা

এই নূতন করব্যবস্থা লইয়া মূল প্রশ্নগুলি অবশ্য করের হার লইয়া নহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

আয়করের কাঠামো সংস্কার কি সত্যই হইল? গত শনিবার নির্মলা সীতারামন বাজেটের নামে যে প্রহসনটি পেশ করিলেন, তাহাতে কতিপয় অর্থপূর্ণ কথার মধ্যে আয়কর সংস্কারের প্রসঙ্গ একটি। চালু কর ব্যবস্থায় যে শতাধিক ছাড় ইত্যাদির সুযোগ ছিল, তাহার অধিকাংশেরই যৌক্তিকতা নাই। সেই সব ছাড় তুলিয়া দিয়া পরিবর্তে যদি অপেক্ষাকৃত কম হারে কর আদায় করা হয়, তাহাতে অন্তত দুইটি সুবিধা— এক, ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসিবে; দুই, যাঁহারা ছাড়ের সুবিধা লইতে পারেন না, তাঁহাদের উপর করের বোঝা কমিবে। তেমন করদাতার সংখ্যা বিপুল। করের ধাপগুলিকে ভাঙিয়া দেওয়াও ভাল সিদ্ধান্ত, কারণ কম আয়ে কম হারে কর— ইহাই প্রোগ্রেসিভ করের মূল দর্শন। তবে, যাঁহারা চালু করব্যবস্থায় সব রকম ছাড়ের সুবিধা গ্রহণ করেন, নূতন ব্যবস্থায় তাঁহাদের করের বোঝা বহুলাংশে বাড়িবে। গৃহঋণের সুদের উপর বাড়তি ছাড় যদি সত্যই আগামী বৎসর বন্ধ হইয়া যায়, তবে বোঝার উপর বোঝার আঁটি। নির্মলার ভাষণে এই সব অপ্রিয় কথার উল্লেখ নাই।

Advertisement

এই নূতন করব্যবস্থা লইয়া মূল প্রশ্নগুলি অবশ্য করের হার লইয়া নহে। করের পরিমাণের কমা-বাড়া লইয়াও নহে। আয়কর সংস্কারের একটি দিক নির্মলার বাজেটে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত— কী ভাবে করের জাল বিস্তৃত করা যায়। কৃষিতে আয়করের উল্লেখমাত্র তিনি করেন নাই। অন্য দিকে, আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় যে ছাড় পাওয়া যাইত, তাহার একটি বড় অংশের জন্য সরকারি খাতে সঞ্চয় করিতে হইত। আচরণবাদী অর্থনীতি বলিবে, সঞ্চয়ের সেই বাধ্যবাধকতা না থাকিলে বহু মানুষই ভাবিয়াও শেষ অবধি টাকা জমাইয়া উঠিতে পারিবেন না। যে দেশে সরকার কার্যত কোনও দায়িত্বই লয় না, সেখানে মানুষের হাতে সঞ্চয়ের টাকাটুকুও না থাকিলে কী হইবে, অর্থমন্ত্রী ভাবিতে পারিতেন। অবশ্য, তাহারও পূর্বে ভাবিতে পারিতেন, সরকার কী করিবে। সরকারি খাতে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের উপর পূর্ণ অধিকার সরকারেরই। সেই টাকা খরচ হয় উন্নয়নখাতে। অর্থাৎ, করব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে সরকারের হাতে যে শুধু কররাজস্ব খাতেই টাকার পরিমাণ কমিবে তাহাই নহে, ঋণের এই উৎসটিও বহুলাংশে সঙ্কুচিত হইবে। মানুষ যদি সমপরিমাণ টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নি করেন— সেই লগ্নিই স্বাভাবিক, কারণ সেখানে লাভের প্রত্যাশা অধিকতর— তবে সেই টাকা যাইবে বেসরকারি পুঁজির হাতে। তাহাতে ক্ষতি হইবে গরিব মানুষের। তাঁহাদের উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় ব্যয় আরও কমিবে। নরেন্দ্র মোদীরা যে ট্রিক্‌ল ডাউন-বাদী, তাহা ঘোষিত সত্য। কিন্তু, কল্যাণরাষ্ট্রের ভূমিকা হইতে এই ভাবে হাত গুটাইয়া লওয়া সেই ট্রিক্‌ল ডাউন-বাদেরও চরম রূপ।

কেহ কত টাকা আয় করিতেছেন, তাহার উপর কর আদায় করা অপেক্ষা তিনি কত টাকা ব্যয় করিতেছেন, তাহার উপর কর আদায় করা যে অধিকতর যুক্তিযুক্ত, এই কথাটি নরেন্দ্র মোদীরাও মানেন। সেই এক্সপেন্ডিচার ট্যাক্স কার্যক্ষেত্রে আদায় করা দুষ্কর, কারণ আয়ের কথা মাথায় রাখিয়া খরচের হিসাব লইয়া তাহার উপর কর আরোপ করা কঠিন। সঞ্চয়ের ওপর কর ছাড়ের ব্যবস্থাটি সেই এক্সপেন্ডিচার ট্যাক্সের কাছাকাছি পৌঁছাইত, কারণ সঞ্চয়ের ওপর ছাড় থাকার ফলে মানুষ কার্যত সেই টাকার উপরই কর দিতেন, যে টাকা ভোগব্যয় হয়। সেই ব্যবস্থা হইতে সরকার কেন সরিবে, তাহার কোনও জোরালো কারণ অর্থমন্ত্রী দেন নাই। হিসাবের সুবিধার যুক্তিটি এত বড় সিদ্ধান্তকে ধারণ করিতে পারে কি? অর্থনীতির মঞ্চ হইতে সরকারকে সরাইয়া লওয়া ভাল, কিন্তু তাহা যে গরিব মানুষের মূল্যে নহে, চুপিসারে নহে, এই কথাটি অর্থমন্ত্রীর স্মরণে রাখা বিধেয় ছিল। বাজেটের মূল উদ্দেশ্য তো মানুষকে ধোঁকা দেওয়া নহে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement