Uddhav Thackeray

আর আবরণ নাই

এহ বাহ্য। কোশিয়ারীর দ্বিতীয় প্রশ্ন: উদ্ধব ঠাকরে কি তবে ধর্মনিরপেক্ষ হইলেন? যে সেকুলার শব্দটিকে তিনি বা তাঁহার সতীর্থরা ঘৃণা করিয়া আসিয়াছেন, এখন কি তাহার দাবি মানিয়াই তিনি ধর্মস্থান বন্ধ রাখিতেছেন?

Advertisement
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ০১:২২
Share:

ফাইল চিত্র।

ভগৎ সিংহ কোশিয়ারী হাটে হাঁড়ি ভাঙিয়াছেন, এমন কথা বলা চলে না। হাঁড়ি ভাঙাই ছিল। মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভাঙা হাড়িটি হাটের মাঝে আনিয়া তাহার আধারে সঞ্চিত বিষের কিছুটা ঢালিয়া দিয়াছেন। রাজ্যের ধর্মস্থানগুলি এখনও কেন খোলা হইল না, এই প্রশ্ন তুলিয়া উদ্ধব ঠাকরেকে লিখিত চিঠিতে কোশিয়ারীর মন্তব্য: মুখ্যমন্ত্রী কি কোনও ঐশ্বরিক নির্দেশে মন্দিরের দরজা বন্ধ রাখিতেছেন? অতিমারি-আক্রান্ত রাজ্যগুলির মধ্যে মহারাষ্ট্র প্রথম সারিতে, আক্রান্তের মোট সংখ্যা পনেরো লক্ষ, মৃত চল্লিশ হাজার। এহেন বিপন্নতার মধ্যে সতর্কতার দায়ে ধর্মস্থানে ভক্তসমাগম বন্ধ রাখা কেবল সুস্থবুদ্ধির নহে, রাজনৈতিক সাহসেরও প্রমাণ দেয়। বিপদের মোকাবিলায় এমন সাহস আবশ্যক। যেমন, পশ্চিমবঙ্গে শারদোৎসব নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে রাজ্য সরকারের অনেক বেশি সাহসী হওয়া আবশ্যক ছিল। অথচ মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শ্লেষ-বাণ ছুড়িতেছেন! স্পষ্টতই, তিনি রাজনীতি করিতেছেন। সঙ্কীর্ণ এবং বিষাক্ত রাজনীতি। ধর্মীয় ভাবাবেগের অপব্যবহার করিয়া লোক খেপাইবার রাজনীতি। প্রবীণ এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার রাজ্যপালের ‘অসংযত’ ভাষা প্রয়োগে ব্যথিত হইয়াছেন। আরএসএস-এর ভূতপূর্ব প্রচারক কোশিয়ারী তাহাতে কিছুমাত্র বিচলিত হইবেন বলিয়া প্রত্যয় হয় না। তিনি মন্দির খুলিবার জন্য প্রচারে নামিয়াছেন, কারণ তিনি ও তাঁহার সতীর্থরা মনে করেন সেই প্রচার হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পালে হাওয়া দিবে। ধর্মস্থান খুলিলে সংক্রমণ বাড়িবে কি না, তাহা সেই রাজনীতির নিকট অবান্তর প্রশ্ন। রাজ্যপালের আসনটিকে দলবাজির ঊর্ধ্বে রাখিবার প্রশ্নও সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক, কারণ বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি-প্রেরিত রাজ্যপালসমূহ স্পষ্টতই সেই আদর্শ রক্ষার দায় হইতে মুক্ত।

Advertisement

এহ বাহ্য। কোশিয়ারীর দ্বিতীয় প্রশ্ন: উদ্ধব ঠাকরে কি তবে ধর্মনিরপেক্ষ হইলেন? যে সেকুলার শব্দটিকে তিনি বা তাঁহার সতীর্থরা ঘৃণা করিয়া আসিয়াছেন, এখন কি তাহার দাবি মানিয়াই তিনি ধর্মস্থান বন্ধ রাখিতেছেন? শিবসেনার রাজনৈতিক দর্শনে ও আচরণে যথার্থ ধর্মনিরপেক্ষতার স্বীকৃতি নাই, তাহা সুবিদিত। লক্ষণীয়, উদ্ধব ঠাকরেও তেমন দাবি করেন নাই। কোশিয়ারীর নিকট ধর্মনিরপেক্ষতা শিখিবেন না— এই সংক্ষিপ্ত জবাবে রাজ্যপালের শ্লেষোক্তিকে উড়াইয়া দিয়া তিনি পাল্টা অস্ত্র প্রয়োগ করিয়াছেন। তাহার নাম সংবিধান। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য: ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম আদর্শ, রাজ্যপাল সংবিধানের নামে শপথ লইয়াছেন, সেই শপথ কি তিনি ভুলিয়াছেন? ইহাই গভীরতর প্রশ্ন। গত কয়েক বৎসরে বিবিধ উপলক্ষে হিন্দুত্ববাদী শাসকদের বিবিধ কথায় ও কাজে এই প্রশ্নটি বারংবার উঠিয়া আসিয়াছে, কোশিয়ারী-বৃত্তান্তেও তাহারই পুনরাবৃত্তি। সঙ্ঘ পরিবারের এই প্রবীণ সদস্য আরও একবার বুঝাইয়া দিয়াছেন, তাঁহাদের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা এক অবাঞ্ছিত, ঘৃণ্য শব্দ। এক কালে লালকৃষ্ণ আডবাণীরা ‘সিউডো-সেকুলারিজ়ম’ নামক একটি ধারণার প্রচারে প্রচুর সময় ও শক্তি বিনিয়োগ করিয়াছেন। তখনও সরাসরি ধর্মনিরপেক্ষতাকে ফেলিয়া দিবার সাহস তাঁহাদের হয় নাই, ‘মেকি’ আবরণটি রাখিতে হইয়াছিল, ভাবখানি ছিল যেন তাঁহারাই ‘আসলি’ ধর্মনিরপেক্ষতার পূজারি। আজ আর কোনও আবরণের প্রয়োজন নাই। ইতিমধ্যেই বিজেপির নানা মহল হইতে প্রশ্ন উঠিয়াছে, সংবিধানের প্রস্তাবনায় সেকুলার শব্দটি তো পরে সংযুক্ত হইয়াছে, সুতরাং তাহাকে বাদ দিবার কথাই বা ভাবা হইবে না কেন? শব্দটি পরে আসিলেও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ যে ভারতীয় সংবিধানের অন্তরাত্মার সহিত ওতপ্রোত, সেই সত্য মনে করাইয়া কোনও লাভ নাই। সেই আদর্শকে নাকচ করিয়া হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণের রাজনীতিই যাঁহাদের একমাত্র ধর্ম, ভগৎ সিংহ কোশিয়ারী তাঁহাদের অন্যতম প্রতিনিধি। বস্তুত, আজ্ঞাবহ সৈনিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement