Editorial news

এই অনীহা কিন্তু পুলিশকেই বিপদে ফেলবে

দায় ঠেলাঠেলির সেই পরম্পরা সমানে চলেছে। মিস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স ঊষসী সেনগুপ্ত যে রাতে কলকাতার রাজপথে হেনস্তার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সে রাতের স্মৃতি এখনও বিন্দুমাত্র ফিকে হয়নি।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০১:০৩
Share:

বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ জিতু কামাল। ছবি সৌজন্য: ফেসবুক।

নির্দেশ দিচ্ছেন কলকাতা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা। কিন্তু তাতেও অভ্যাস বদলাচ্ছে না পুলিশের। বিপদগ্রস্ত নাগরিক যখন শরণাপন্ন হন, তখন সব ভুলে আগে ওই বিপন্নের পাশে দাঁড়ানোই যে কর্তব্য, সে কথা বুঝতে পুলিশের এত অসুবিধা কেন হচ্ছে, বোঝা কঠিন।

Advertisement

দায় ঠেলাঠেলির সেই পরম্পরা সমানে চলেছে। মিস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স ঊষসী সেনগুপ্ত যে রাতে কলকাতার রাজপথে হেনস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সে রাতের স্মৃতি এখনও বিন্দুমাত্র ফিকে হয়নি। কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে আক্রান্ত হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হতে চেয়েছিলেন ঊষসী। কিন্তু শুধুমাত্র অভিযোগটুকু লেখানোর জন্য তিনটে থানায় ঘুরে-বেড়াতে হয়েছিল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ঊষসী নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হওয়ার আগে পর্যন্ত পুলিশি পদক্ষেপ দেখা যায়নি। হৈচৈ শুরু হওয়ার পরে অবশ্য নগরপাল অনুজ শর্মা নিজে সক্রিয় হন, অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়। থানায় কেউ অভিযোগ জানাতে গেলে এলাকা সংক্রান্ত এক্তিয়ারের অজুহাত দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না বলেও নির্দেশ জারি হয়। কিন্তু সে নির্দেশ রয়ে গিয়েছে নির্দেশেই, কলকাতা পুলিশ রয়েছে কলকাতা পুলিশেই।

হেনস্থার রাতে ঊষসী সেনগুপ্ত পুলিশের কাছ থেকে যে ব্যবহার পেয়েছিলেন, তার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, নির্দেশ ছিল কলকাতার নগরপালের। কিন্তু তার পরেও ওই রকম অভিযোগই সামনে আসে। পুলিশ কমিশনার ফের সতর্ক করেন নিজের বাহিনীকে। তাতেও লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে শুটিং সেরে বাড়ি ফিরছিলেন অভিনেতা জিতু কমল। পিছন থেকে আসা বেপরোয়া গাড়ি জিতুর গাড়িতে ধাক্কা মেরে সামনে এগিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পরে জিতুর সঙ্গে ওই চালক ও আরোহীর বচসাও হয়। জিতু লালবাজারে ফোন করেন। সেখানকার পরামর্শ মতো পূর্ব যাদবপুর থানার দ্বারস্থ হন। সে থানা দায় ঠেলে দেয় পাটুলি থানার ঘাড়ে। পাটুলি জানায়, ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেটা পঞ্চসায়র থানার এলাকা।

Advertisement

ম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এটা কী ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা? গভীর রাতে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে কোনও এক নাগরিক পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন। পুলিশ সেই নাগরিককে এ থানা থেকে সে থানায়, সে থানা থেকে ও থানায়। পুলিশ কমিশনারের স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও সর্বাগ্রে অভিযোগটা নথিবদ্ধ করার অভ্যাসে পুলিশ কিছুতেই পৌঁছতে পারছে না। এটাকে শুধুমাত্র অনভ্যাসের ফল বলে ভাবতে পারছি না। অনীহাও প্রবল। পুলিশ কর্মীদের অনেকে হয়তো ভুলেই গিয়েছেন যে, বিপদে-আপদে নাগরিকের পাশে দাঁড়ানোই তাঁদের প্রাথমিক কাজ। পুলিশ কর্মীদের অনেকে হয়তো ভুলেই গিয়েছেন, তাঁরা যে বাহিনীর সদস্য, সে বাহিনী নাগরিকের দেওয়া করের অর্থেই প্রতিপালিত। বিপন্ন অবস্থায় এ হেন বাহিনীর দ্বারস্থ হয়ে আরও কিছুটা হয়রানির শিকার হতে হলে, গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থাটার সম্পর্কে নাগরিকের ধারণা ছিক কী রকম দাঁড়ায়, সেটা বোধহয় পুলিশ কর্মীদের অনেকেই ভাবেন না।

আরও পড়ুন: ফের পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ, এ থানা ও থানা ঘোরানোর অভিযোগে সরব

দুর্নাম অনেক রকমের রয়েছে। বাহিনীর শীর্ষ কর্তা যখন সে সবের কিছুটা মুছে ফেলতে সচেষ্ট হচ্ছেন, তখনও কাজের কাজ যদি না হয়, তাহলে ভরসার আর কতটুকু অবশিষ্ট থাকে? নাগরিকের ভরসার শেষ বিন্দুটুকুও যদি নিঃশেষিত হয়, তা হলে কিন্তু পুলিশের দুর্দশার আর শেষ থাকবে না। ভরসাটা কী উপায়ে জাগিয়ে রাখার এবং ক্রমশ বাড়িয়ে তোলার দায়িত্বটা পুলিশকেই নিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement