পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন স্মৃতি ইরানি। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।
বেশ বেনজির একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হল রাষ্ট্র। প্রথাভঙ্গের অভিযোগ তোলা হল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ জানাতে চলচ্চিত্রের জাতীয় সম্মান বয়কটের রাস্তা নেওয়া হল। সবাই বয়কট করলেন, এমন নয়, তবে অনেকেই করলেন। কিন্তু এই বয়কট বা এই প্রতিবাদও এক অভিনব বার্তা বহন করল, এক বিরল প্রেক্ষাপট তৈরি করল। প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু রচিত হল যাঁকে ঘিরে, তাঁর মহানতাকেই নির্বিকল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেল এই প্রতিবাদ।
ভারতের জাতীয় জীবনে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা বরাবরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানাধিকার করেছে। সেই চর্চায় ভারতীয় চলচ্চিত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বও থেকেছে। চলচ্চিত্র জগতের কুশীলবরা তাই জাতির চোখে উচ্চস্থানে এ দেশে। চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কারও অতএব প্রগাঢ় সম্মানের বিষয়। সেই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানকে ঘিরে যে ধরনের বিতর্ক এ বার তৈরি হল, আগে কখনও তা হয়নি। জাতীয় পুরস্কার প্রাপক হিসেবে যাঁদের নাম ঘোষিত হয়েছে, তাঁদের এক বিরাট অংশ পুরস্কার গ্রহণ থেকে বিরত থাকলেন। শ্রদ্ধাস্পদ মঞ্চটাকে ঘিরে ঘুরপাক খেল একরাশ অস্বস্তি। এমনটা মেনে নেওয়া কিন্তু সাধারণ নাগরিকের পক্ষেও অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। কিন্তু সেই অনাকাঙ্খিত, অপ্রত্যাশিত ছবিই তৈরি হল।
রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে প্রোটোকল কিছু বদলেছে রাষ্ট্রপতি ভবন। সেই প্রোটোকলই বলছে, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনও কর্মসূচিতে এক ঘণ্টার বেশি উপস্থিত থাকবেন না রাষ্ট্রপতি। এই নয়া প্রোটোকলই জটিলতার জন্ম দিয়েছে।
সময়াভাবে স্থির হয়েছিল, ১১ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি নিজে। বাকিরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেবেন। কিন্তু সে বন্দোবস্ত না-পসন্দ অনেকেরই। না-পসন্দ বলেই প্রতিবাদে সামিল দলে দলে এবং পুরস্কার বয়কট।
রাষ্ট্রপতি ভবন বিস্ময় প্রকাশ করেছে ঘটনাপ্রবাহে। বিস্ময়ের সংগত কারণও হয়ত রয়েছে। রাষ্ট্রপতির প্রোটোকল কী হবে, প্রকারান্তরে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন এই প্রতিবাদীরা। অতএব ঘটনাপ্রবাহ বিরলই। এই পদক্ষেপ কতটা সমীচীন, তা নিয়েও খুব বড় প্রশ্ন উঠে গেল।
তবে এই বিতর্কে রাষ্ট্রপতি ভবনের বিপরীতে দাঁড়ালেন যাঁরা, তাঁরা কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদের মহানতাকে তুলে ধরলেন আসলে। জাতীয় পুরস্কার কেন রাষ্ট্রপতির হাত থেকেই নেওয়ার সুযোগ হবে না? প্রশ্ন তুললেন প্রতিবাদীরা। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে পারার মধ্যে যে মাহাত্ম্য তথা গরিমা রয়েছে, অন্য কারও হাত থেকে পুরস্কার নেওয়া তার সমতুল হতে পারে না, প্রতিবাদীদের কণ্ঠস্বরে সেই বার্তাও ধ্বনিত হল।
রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টারা কি ভেবে দেখবেন একটু? প্রোটোকলের গেরোয় যে ভাবে নাস্তানাবুদ হল জাতীয় পুরস্কারের আসর, তা আগে আর কখনও হয়নি। যা ঘটল, তা সমর্থনযোগ্য কি না, সে অন্য বিতর্ক। কিন্তু যা ঘটল, তা কাম্য ছিল না কারও কাছেই। ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্খিত অস্বস্তি আবার হানা দেবে না তো? ভেবে দেখা সত্যিই জরুরি।