National News

দলের নামটুকুই আলাদা, মৌল শ্রেণি সংঘাত নেই

এ পৃথিবীতে আদর্শ সার্বভৌম রাষ্ট্রও নেই কোনও। উপলব্ধি জয়ন্ত ঘোষাল-এরআমি নির্বাচন খুব ভালবাসি। আই লাভ ইলেকশন। কথাটি বলছেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রধান অধ্যাপক জোনাথান স্পেন্সার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

ভোটের লাইন। ফাইল চিত্র।

আমি নির্বাচন খুব ভালবাসি। আই লাভ ইলেকশন। কথাটি বলছেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রধান অধ্যাপক জোনাথান স্পেন্সার। ভদ্রলোক নৃতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভোট নিয়েই একটা পুরোদস্তুর বই লিখে ফেলেছেন। তিনি বলছেন, ভারতে ভোট যেন এক উৎসব। কার্নিভাল। তিনি স্কটিশ সংসদের ভোটের জন্য দশ বার সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। আর স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে তো ভোট দেওয়ার সংখ্যা অনন্ত। ভারতে গত দশ বছরে সমস্ত সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানের শতকরা হিসাব শতকরা ষাট ভাগের বেশি। লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপিকা মুকুলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘why India votes?’ বইটিতেও তিনি জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের পূর্ব এবং পশ্চিম নানা প্রান্তে, নানা নির্বাচন কেন্দ্র। এ সব কেন্দ্রগুলি এক একটি এক এক রকম। আবার ডিলিমিটেশনের ফলে নির্বাচন কেন্দ্রগুলিতে এসেছে অনেক পরিবর্তন। ভোটার চরিত্রেও এসেছে কত বদল। ইলাহাবাদের কাছে ফুলপুর ছিল নেহরুর নির্বাচন কেন্দ্র। সে দিন কোথায় ছিলেন মায়াবতী আর কোথায় অখিলেশ। কোথায় ছিল পৃথক যাদব ভোট আর কোথায় দলিত ভোট। তবে সে দিনও মানুষ ভোট দিতে যেমন উৎসাহী ছিলেন আজও সে ভাবে কেন মনে হয় যেন তার চেয়েও বেশি উৎসাহী।

Advertisement

আমার অবশ্য ভোট নিয়ে একটা নিজের মনের কথা আছে। কোনও দিন কারও কাছে তা খুলে বলিনি। আজ বলছি। আমার মনে হয়, গোটা দেশের এই সর্বদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আমার কোনও আদর্শ রাজনৈতিক দল নেই। যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ— এটাই যেন শেষ সত্য। এ তো বাড়ির ঠাকুমারা পর্যন্ত বলেন। রাজনীতি বিজ্ঞানী রণবীর সমাদ্দার এক প্রবন্ধে জানিয়েছেন, আজ আমাদের দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই প্রায় একই রকম আচরণ করে। কেন এ অবস্থা, তার এক অসাধারণ বিশ্লেষণ করে তিনি দেখিয়েছেন ইস্তেহার ও ঘোষিত মতাদর্শ আলাদা হতে পারে কিন্তু অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই আজ শাসক দল ও প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি অবস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে। ফলে রাজনৈতিক নেতারা আমজনতা থেকে বিচ্ছিন্ন। তাঁদের দলের নাম আলাদা আলাদা হতে পারে, সামাজিক strata গোষ্ঠী সমর্থকদের মধ্যে আলাদা আলাদা হতে পারে কিন্তু মৌল শ্রেণি সংঘাত একটি দলের সঙ্গে অন্য দলের নেই।

এ পৃথিবীতে আদর্শ সার্বভৌম রাষ্ট্রও নেই কোনও। কলেজজীবনে মার্কসবাদে মুগ্ধ হয়ে সোভিয়েত বিপ্লবের মোহে পিছলে গিয়েছিলাম। পরে আফগানিস্তানে যখন রুশ সেনা প্রবেশ করল তখন মনে হল এ-ও তো এক নয়া সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ। তখন অতিবামপন্থী ভাবনার দিকে আকর্ষিত হচ্ছিলাম। এখন তো মনে হয় রুশ বিপ্লবটা আসলে কতটা শ্রমিক শ্রেণির আর কতটা বিক্ষুব্ধ সেনাবাহিনীর জার-বিরোধী কু, সেটাই ভাবতে হবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনে এক বিতর্ক সভার আয়োজন করেছিলাম, রাজনৈতিক উদাসীনতা কি সচেতনতার এক রূপ?

Advertisement

আজও সেই ধারণা থেকে মন থেকে সরাতে পারিনি। সে দিন নোটা প্রয়োগের অধিকার ছিল না, আজ অবশ্য সেটা হয়েছে। আপনি যদি প্রতিষ্ঠানবিরোধী, ব্যবস্থা বিরোধী হন-কনফর্মিস্ট হন তবে আপনাকে ‘প্রাইভেট নাগরিক’ হয়ে থাকতে হবে।

কাকে ভোট দেব আমি?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement