Dalit

ভারত-ভাগ্য

অধরা হইবার প্রধানতম কারণ প্রশাসনিক অপদার্থতা, এবং সদিচ্ছার অভাব।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share:

উচ্চবর্ণ ব্যক্তির বাইক ছুঁয়ে ফেলায় পেটানো হচ্ছে দলিতকে। —ফাইল চিত্র।

অপরাধ’ হইয়াছিল বটে। যেমন-তেমন অপরাধ নহে। দলিত হইয়া উচ্চবর্ণের বাহনকে স্পর্শ করিবার ন্যায় মহা অপরাধ। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে এ হেন অপরাধের ক্ষমা নাই। সুতরাং, উত্তেজিত জনতার হাতে বিবস্ত্র হইতে হইল, এবং প্রচণ্ড প্রহৃত হইতে হইল দলিত মানুষটিকে। মর্মান্তিক ঘটনাটি কর্নাটকের বিজয়পুরা জেলার। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় প্রকাশ, মারমুখী জনতা শুধুমাত্র ‘অপরাধী’কেই শাস্তি দিয়া ক্ষান্ত হয় নাই। তাঁহাকে রক্ষা করিতে আসা পরিবারের অন্যরাও সেই ‘রাজরোষ’-এর শিকার হইয়াছে। উপরন্তু নির্দেশ মিলিয়াছে, অবিলম্বে ভিটামাটি ত্যাগ করিবার।

Advertisement

বিক্ষিপ্ত ঘটনা কি? দলিতদের সঙ্গে এই দেশে নিরন্তর অন্যায়ের ধারাবাহিকতা চলিতেছেই। জাতিবিদ্বেষের দীর্ঘলালিত ধারাটি যেন গণতন্ত্রের আড়ম্বরের অন্তরালে সময়ের সঙ্গে আরও দৃঢ়তর ভাবে প্রোথিত হইতেছে। প্রতি ১৫ মিনিটে এই দেশে এক জন দলিত নির্যাতনের শিকার হইয়া থাকেন, জাতিপ্রথা বেআইনি ঘোষিত হইবার দীর্ঘ ৬৮ বৎসর পরেও বিদ্বেষের শিকড় ছড়াইতে থাকে। প্রতি দিন অন্তত ছয় জন দলিত নারী ধর্ষিত হন। একবিংশ শতাব্দীর ভারতেও দলিতদের শরীর হইতে অস্পৃশ্য, অপবিত্র-এর মতো শব্দগুলির ছাপ মুছে না। তাঁহাদের উচ্চবর্ণের সঙ্গে এক কূপ হইতে জল খাইবার অধিকার থাকে না, এক রাস্তা দিয়া হাঁটিবার অধিকার থাকে না, এমনকি ভালবাসারও অধিকার থাকে না। উপরন্তু সময়ের সঙ্গে সামাজিক বৈষম্যের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও চরম প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের চিত্রটি প্রকট হয়। দেশের মোট সম্পদের ৪১ শতাংশই দখল করিয়া রাখিয়াছে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। শিক্ষাক্ষেত্রে শুধুমাত্র ২০১৭-১৮ সালেই ৭০টিরও অধিক জাতিবৈষম্যের অভিযোগ জমা পড়িয়াছিল ইউজিসি-র নিকট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যের শিকার হইয়া আত্মহননের ঘটনাও বহু বার ঘটিয়াছে। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহিত ভেমুলার আন্দোলন এবং তাঁহার আত্মহত্যার কথা এত শীঘ্র ভুলিবার নহে। শুধুমাত্র সংরক্ষণ ঘোষণা করিলেই যে বিদ্বেষ এবং হেনস্থার এই প্রাচীন রীতিটি পরিবর্তিত হইবে না, তাহা প্রমাণিত। কিন্তু প্রতিকার অধরা।

অধরা হইবার প্রধানতম কারণ প্রশাসনিক অপদার্থতা, এবং সদিচ্ছার অভাব। উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়া এক দলিতকে ন্যায়বিচার দিবার মতো মানুষের সংখ্যা প্রশাসনিক স্তরে এমনিতেই কম। হাজার হউক, তাঁহারাও তো এই জাতপাত-দীর্ণ সমাজেরই প্রতিভূ। উপরন্তু লক্ষণীয়, সম্প্রতি দলিত নির্যাতনের যে কয়টি ঘটনা প্রকাশ্যে আসিয়াছে, তাহাদের অধিকাংশ বিজেপি-শাসিত রাজ্যের। ইহাকে কাকতালীয় বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া কঠিন। বিগত ছয় বৎসর ধরিয়া যেখানে জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষা লইয়া ভারতকে ক্রমশ খণ্ডিত হইতে খণ্ডিততর রূপে দেখা যাইতেছে। শাসকের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে হিংসা এবং হানাহানির সংখ্যা দেশে ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতেছে। এমত পরিস্থিতিতে দাঁড়াইয়া সংবিধান-বর্ণিত সমানাধিকারের তত্ত্বটি অলীকতর হইতেছে। ইহাই তবে আধুনিক ভারতের প্রকৃত রূপ? ক্ষুদ্র স্বার্থগোষ্ঠীতে খণ্ডিত এক দেশ, যেখানে ক্ষমতা এবং পরাক্রম ব্যবহার হয় সঙ্কীর্ণ জাতি-বর্ণ-নির্দিষ্ট স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement