কার্ডিনাল বাসেলিওস ক্লিমিস। —ফাইল চিত্র।
দোরগোড়ায় হাজির হয়ে গিয়েছে বড়দিন। আবহে উজ্জ্বল উৎসব। গোটা বাংলা তো বটেই, ধর্মীয় ভেদাভেদের সীমানা মুছে দিয়ে গোটা দেশই উৎসবে মাততে প্রস্তুত।
বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে এই আপামর মাতনই দস্তুর এ দেশে। কারণ এই উৎসবকে ঘিরে কোনও ধর্মীয় ভাবনা মাথাচাড়া দেয় না, কোনও সাম্প্রদায়িক আশঙ্কা দানা বাঁধে না।
যে কোনও ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এমনটাই হওয়া উচিত পরিমণ্ডল। আর বিবিধতার পীঠস্থান যে ভারত, সে ভারতে এই পরিমণ্ডল ঔচিত্য নয়, অত্যাবশ্যক।
দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগ তবু পিছু নেয়। আত্তীকরণের সক্ষমতায় যে ভূমি অপ্রতিদ্বন্দ্বী, সে ভূমিও যে অসহিষ্ণুতা থেকে মুক্ত নয়, সে সম্পর্কে আমরা সকলেই জ্ঞাত। সেই অসহিষ্ণুতাই হানা দিয়েছে উৎসব প্রাঙ্গনে। বড়দিনের আগে মধ্যপ্রদেশের এক প্রান্তে উপাসনা গান থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। খ্রিস্টান যাজকদের উপর বজরঙ্গ দল ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ফলে উৎসবের প্রস্তুতি ফেলে রেখে নিরাপত্তার আশ্বাস পাওয়ার জন্য ছুটতে হয়েছে ভারতীয় ক্যাথলিকদের নেতৃবর্গকে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলের দ্বারে কষাঘাত করতে হয়েছে।
ভারতীয় হিসেবে আমি লজ্জিত হই এমন পরিস্থিতিতে। ভারতীয় মূল্যবোধ, ভারতীয় পরম্পরার অসম্মান দেখে পীড়িত হই।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
মধ্যপ্রদেশের ঘটনা মনে করিয়ে দেয় ওডিশার গ্রাহাম স্টেইনসের কথা। সংখ্যালঘু মানসে কেমন ছাপ ফেলতে পারে এ ঘটনা, সেও সহজেই অনুমেয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে রাষ্ট্রের উপর আর আস্থা রাখতে পারবে না, তা বলে দেওয়ার দরকার পড়ে না। তবু বলতে হল কথাটা, বলতে হল অন্যতম শীর্ষ যাজক কার্ডিনাল বাসেলিওস ক্লিমিসকে। এ কথাটা বলেছেন বলে এ বার হয়ত তীব্র কটাক্ষ এবং আক্রমণের শিকার হয়ে যেতে পারেন কার্ডিনাল ক্লিমিস। তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হতে পারে, তাঁর ভারতীয়ত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হতে পারে, তাঁকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হতে পারে। কিন্তু তাতে সংখ্যালঘু মানসে আতঙ্ক এবং অনাস্থার ছায়া বাড়বে বই কমবে না।
আরও পড়ুন
হিংস্রতাই বড় সঙ্কট আজ, বললেন কৌশিক বসু
কার্ডিনাল বাসেলিওস ক্লিমিসের মনে বা তাঁর সম্প্রদায়ের মনে ইতিবাচক ছায়া পড়ছে, না কি নেতিবাচক, তাতে কিছুই যায় আসে না কট্টরবাদীদের। উগ্র মৌলবাদের মধ্যে যাঁরা বাঁচেন বা যাঁরা উগ্র মৌলবাদকে রাজনীতির কাজে ব্যবহার করেন, গ্রাহাম স্টেইনস বা বাসেলিওস ক্লিমিসদের মনের খোঁজ রাখতে গেলে তাঁদের চলে না। সংখ্যার লঘুতায় অকিঞ্চিতকর হয়ে থাকা একটা সম্প্রদায়কে আরও কোণঠাসা করতে পারলে সংখ্যাগুরুর মাঝে নিজেদের গুরুত্ব কতটা বেড়ে যাবে, কট্টরবাদীদের যাবতীয় হিসেব তা নিয়েই। কিন্তু কট্টরবাদী বা উগ্র মৌলবাদীর ঢঙে ভাবলে তো রাষ্ট্রের চলবে না। রাষ্ট্রকে তো প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি সমান ভাবে কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে। সাংবিধানিক ভাবেই তাতে দায়বদ্ধ রাষ্ট্র।
মনে রাখা দরকার, যে রাষ্ট্রের উপর আস্থা হারান তার নাগরিক, সে রাষ্ট্র দুর্ভাগ্যের শিকার। তবে এই দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্যের লিপি রাষ্ট্র নিজের হাতেই লেখে। ভারতীয় রাষ্ট্র নিশ্চয়ই সহস্তে দুর্ভাগ্যের লিপি লিখবে না, এ আশা রাখাই যায়। অতএব, উপযুক্ত পদক্ষেপের অপেক্ষা রইল।